বুধবার, ৩ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

প্রধানমন্ত্রীর কাছে নালিশ মহানগর উত্তর কমিটি নিয়ে

নিজস্ব প্রতিবেদক

সদ্য ঘোষিত ঢাকা মহানগর উত্তরের থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়নের কিছু কমিটিতে জঙ্গি, সন্ত্রাসী ও ফ্রিডম পার্টির লোক রয়েছেন বলে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অভিযোগ করা হয়েছে। গতকাল বিকালে গণভবনে মহানগর উত্তরের ১৬ থানার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করে এই অভিযোগ করেন। দলীয় সভানেত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত শেষে একাধিক নেতা জানিয়েছেন, সদ্য ঘোষিত ওই কমিটির অনুমোদন বাতিল করেছেন দলীয় সভানেত্রী। পুর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের জন্য দলের প্রেসিডিয়াম লে. কর্নেল (অব.) মুহম্মদ ফারুক খান ও ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিষ্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।  গত ২৭ ডিসেম্বর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের অর্ন্তগত ২৬ টি থানা, ৪৬ টি ওয়ার্ড ও ৯ টি ইউনিয়নের পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেন সংগঠনের সভাপতি এ কে এম রহমতউল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান। এর আগে গত বছরের ৫ জুলাই একই কমিটির অনুমোদন দেন তারা। ওই সময় কমিটিগুলোর বিভিন্ন পদের নেতাদের নামে বিস্তর অভিযোগ ওঠায় অনুমোদনের পরদিনই কমিটি স্থগিত করে দেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। এরপর তিনি ওই কমিটির অভিযোগগুলো তদন্তের নির্দেশ দেন কেন্দ্রীয় নেতাদের। অভিযোগের তদন্ত চলাকালীন আবারো তড়িঘড়ি করে গত ২৭ ডিসেম্বর কমিটিগুলোর অনুমোদন দেন মহানগরের দুই শীর্ষ নেতা।  গণভবন সূত্রে জানা গেছে, কমিটি অনুমোদনের পর থেকেই মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। সর্বশেষ গতকাল বিকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বঞ্চিত নেতাকর্মীরা। এ সময় পল্লবী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, ৫ জুলাই আংশিক কমিটি ঘোষণার পর আমরা আপত্তি জানালে আপনি সুষ্ঠ তদন্তের জন্য তিন জন সিনিয়র নেতাকে দায়িত্ব দেন। কিন্তু তা নিরসন না করেই আবার সন্ত্রাসী, মাদক ব্যবসায়ী ও বিএনপি-জামায়াতের লোকদের নিয়ে থানা ও ওয়ার্ডের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা সভাপতি-সম্পাদক কিছুই জানি না। দারুস সালাম থানার সভাপতি মাজহারুল আনাম প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, আওয়ামী লীগের কমিটিতে জঙ্গিদের স্থান দেওয়া হয়েছে। জঙ্গি পাইলট সাব্বিরের বাবাকে দারুস সালাম থানার কমিটিতে রাখা হয়েছে। অথচ জঙ্গি সাব্বির আপনাকে হত্যার ছক একেছিলে। তার বাবা হাবিবুল বাশার আজাদ জঙ্গিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের নেতাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে আবারো কমিটিগুলো স্থগিত করে দেন শেখ হাসিনা। তিনি উপস্থিত নেতাদের বলেন, কমিটির অনুমোদন কে দিয়েছে ? জবাবে নগর নেতারা উত্তরের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম বলেন। প্রধানমন্ত্রী জানতে চান, ওখানে কি ফারুক খানের সিগনেচার আছে ? নগর নেতারা বলেন, না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফারুক খানের স্বাক্ষর ছাড়া কোনো কমিটি অনুমোদন হবে না। আমি তাকে দায়িত্ব দিয়েছি, সকল অভিযোগ তদন্ত করে কমিটি চূড়ান্ত করতে। আপাতত সব কমিটি স্থগিত। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তরের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অভিযোগ শুনে প্রধানমন্ত্রী কমিটি স্থগিত করেছেন। আর আমাকে বলেছেন, তুমি পুরানো লোক। ফারুক খানকে সহায়তা করে পুনাঙ্গ কমিটি গঠন করবে।

গণভবন সূত্রে আরও জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গণভবনে সাক্ষাৎ করেছেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তরের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের খান, বনানী থানার সভাপতি এ কে এম জসিমউদ্দীন, মিরপুর থানার সভাপতি এস এম হানিফ, দারুস সালাম থানার সভাপতি মাজহারুল আনাম, শাহ আলী থানার সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম মোল্লা, ৩২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জামাল হোসেন, ২৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ওমর ফারুক প্রমুখ।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কয়েকজন নেতাকর্মী গণভবনে গিয়েছিল বলে শুনেছি। কমিটি স্থগিত করার অপপ্রচার তারা চালাচ্ছেন। কমিটি যদি স্থগিত করতো, তাহলে আমি কি বার্তা পেতাম না? কমিটি স্থগিতের কোনো খবরও শুনিনি আমি।

সর্বশেষ খবর