বুধবার, ৩ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা
ডিএনসির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে গণশিক্ষামন্ত্রী

মাদক নির্মূলে প্রয়োজনে দেখামাত্র গুলি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রভাবশালী মাদক ব্যবসায়ীদের বেপরোয়া মানসিকতায় দেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে বর্তমান পরিস্থিতিতে মাদক নিয়ন্ত্রণ নয়, নির্মূল করা দরকার। প্রথমত আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একে এক নম্বর সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা। এরপর কে কার কী তা বিবেচনা না করে দেখামাত্র গুলির মাধ্যমে মাদক নির্মূল করতে হবে। তা না হলে মাদক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান। গতকাল রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের (ডিএনসি) ২৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ডিএনসির মহাপরিচালক (ডিজি) জামাল উদ্দীন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি টিপু মুনশি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী, কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন, দেশের সর্বাধিক প্রচারিত পত্রিকা বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম, মানসে্র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক ড. অরূপ রতন চৌধুরী, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এমদাদুল হক প্রমুখ। অতিথিরা পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে এবং কেক কেটে ডিএনসির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন। ‘মাদক বিনোদনের মাধ্যম নয়, আত্মহননের পথ’ এ স্লোগান সামনে রেখে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের পর মাদকবিরোধী একটি র‌্যালি বের করা হয়। ১৯৯০ সালের ২ জানুয়ারি ডিএনসি প্রতিষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠান শেষে আমন্ত্রিত অতিথিরা ডিএনসি সদর দফতর কার্যালয়ে নির্মিত ৩০টি স্টল পরিদর্শন করেন। অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘একটি বাহিনীকে আপনি যতই শক্তিশালী করুন না কেন, মাদক নিয়ন্ত্রণ হবে না। এমনকি এক লাখ আলাদা পুলিশ নিয়োগ করলেও নির্মূল হবে না। আবার নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রতি উপজেলায় পাঁচটি, প্রতি ইউনিয়নে একটি করে মাদক নিরাময় কেন্দ্র স্থাপন করলেও কাজ হবে না। অথচ তিন মাস আলাপ-আলোচনা করে মাদককে জাতীয়ভাবে এক নম্বর সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে ১০টি উপজেলায় দেখামাত্র গুলি চালানো হোক। আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি তাহলে মাদক নির্মূল হয়ে যাবে। এ ছাড়া যে ব্যবস্থাই নেন ১০০ বছরেও মাদক নির্মূল সম্ভব হবে না। মাদকের শিকড় উপড়ে ফেলতে হবে। বর্তমানে মাদকের ভয়াবহতা বৃদ্ধির মূল কারণ সমাজে মূল্যবোধ, নৈতিকতা না থাকা। কঠোর আইনের পাশাপাশি এর ক্ষতিকর দিকগুলো পাঠ্যবইয়ে সংযুক্ত করা যেতে পারে। এ ছাড়া পরিবার-সমাজ তথা সবাইকে একসঙ্গে কাজ করে মাদকমুক্ত জাতি হিসেবে আবির্ভূত হতে হবে।’ টিপু মুনশি বলেন, ‘দেশে জনসংখ্যার ৭০ লাখ মাদকাসক্ত। এটা আরও বাড়তে পারে। মাদক সোনার বাংলা গঠনের অন্তরায়। ভিশন ২০২১ ও ২০৪১-এর বাধাও মাদক। ডিএনসির সীমিত ক্ষমতা দিয়ে মাদক নির্মূল সম্ভব নয়। এজন্য সবার ঐকান্তিক সহযোগিতা প্রয়োজন। আমাদের অধিকতর চ্যালেঞ্জ নিতে হবে।’ সুরক্ষা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী বলেন, ‘সন্ত্রাস-জঙ্গিদের চেয়েও মাদকের ভয়াবহতা বেশি। ১৭০০ জনবল দিয়ে মাদক নিরাময় অসম্ভব। এর জন্য সব বাহিনীকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। ইয়াবার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড রেখে মাদক আইন সংশোধন করা হচ্ছে। দেশে মাদকের প্রবেশ ঠেকাতে কক্সবাজারকে বিশেষ অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলা হবে।’ বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম বলেন, ‘সদিচ্ছা ও আন্তরিকতা থাকলেই মাদক নির্মূল সম্ভব। মাদক নির্মূলে সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডকে অনুসরণ করা যেতে পারে। মাদক ব্যবসায়ী যতই শক্তিশালী হোক ডিএনসি তার চেয়ে বেশি শক্তিশালী। মাদক সমাজের ব্যাধি। এটি দূর করতে প্রয়োজন জিরো টলারেন্স। এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যম পাশে থেকে সাহস ও অনুপ্রেরণা জোগাবে।’ আইজি প্রিজন সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন বলেন, ‘বর্তমানে কারাগারে ৭০ হাজার বন্দী রয়েছেন। এর মধ্যে ২৩ হাজার মাদকাসক্ত। সামাজিক প্রতিরোধের মাধ্যমে মাদকাসক্তদের বর্জন করলেই এটি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।’ অধ্যাপক ড. অরূপ রতন চৌধুরী বলেন, ‘মাদক শুরু হয় ধূমপান দিয়ে। দেশে ৭০ লাখের বেশি মাদকসেবী রয়েছে। এটি ঝুঁকিপূর্ণ। ইয়াবায় আসক্ত বেশি নারীরা। ১০ বছরে ২০০ পিতা-মাতা মাদকসেবী সন্তানের হাতে খুন হয়েছেন। এটি নিয়ন্ত্রণে মাদক বহনকারী নয়, মাদকের গডফাদারদের গ্রেফতার করতে হবে।’ ডিজি জামাল উদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘মাদক মানুষকে শারীরিক ও মানসিকভাবে পঙ্গু করে দেয়। প্রত্যেক মাদকসেবী গড়ে প্রতি মাসে ২১ হাজার টাকা খরচ করছেন। মাদক ব্যবসায়ীরা প্রভাবশালী হলেও তাদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। আমাদের কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস না থাকায় নাকের ডগা দিয়ে মাদক পাচার হচ্ছে। নেই পর্যাপ্ত গাড়িও। এসব সুবিধাসহ প্রস্তাবিত ৮ হাজার জনবলকাঠামো বাস্তবায়ন হলে অধিদফতরের পক্ষে কাজ করা সহজ হবে। এ ছাড়া অধিদফতরের ৩৭টি সেবা অনলাইনে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। এ বছর প্রতিটি জেলায় মাদক চিহ্নিত করতে ডিটেকটিভ মেশিন দেওয়া হবে।’ এ ছাড়া মাদকের ৫০ জন গডফাদারকে গ্রেফতার করার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।

সর্বশেষ খবর