বুধবার, ৩ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

ইসলামাবাদ প্রতারক বক্তব্যে তোলপাড়

ইসলামাবাদ প্রতারক বক্তব্যে তোলপাড়

সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদবিরোধী লড়াই ইস্যুতে পাকিস্তানের কড়া সমালোচনা করে নববর্ষের প্রথম দিনেই একটি টুইট করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। টুইটে তিনি ইসলামাবাদকে ‘মিথ্যাবাদী’ ও ‘প্রতারক’ আখ্যায়িত করে বলেছেন, মার্কিন নেতারা গত ১৫ বছর ধরে ‘বোকার মতো’ দেশটিকে বিশাল অঙ্কের অর্থ সহায়তা দিয়েছেন। অথচ এর বিনিময়ে ইসলামাবাদ ওয়াশিংটনকে ‘মিথ্যা বলা’ ও প্রতারণা’ ছাড়া আর কিছুই দেয়নি বলে মন্তব্য করেছেন। ট্রাম্পের এমন টুইটের জবাব দিতে ইসলামাবাদে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেভিড হেইলকে তলব করে কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে পাকিস্তান। সেইসঙ্গে ট্রাম্পের ওই টুইটের ব্যাখ্যাও চাওয়া হয়েছে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের কাছে। এক্সপ্রেস নিউজ এক প্রতিবেদনে এ কথা জানিয়েছে।

সন্ত্রাসবিরোধী লড়াই ইস্যুতে গত কয়েক মাস ধরে ওয়াশিংটন ও ইসলামাবাদের মধ্যে কথার লড়াই চলছে। সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ের কথা বলে উল্টো পাকিস্তান তার ভূখণ্ডকে সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছে বলেও দাবি করে আসছে ওয়াশিংটন। দেশ দুটির মধ্যকার ইতিমধ্যে তিক্ত সম্পর্ক ট্রাম্পের নববর্ষের টুইটের পরিপ্রেক্ষিতে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে বলে বিশ্লেষকদের মত। রাষ্ট্রদূত ডেভিড হেইলকে তলবের খবর নিশ্চিত করেছে ইসলামাবাদের মার্কিন দূতাবাস। পাকিস্তান পররাষ্ট্র দফতর সোমবার রাত ৯টায় রাষ্ট্রদূত হেইলকে তলব করে বলে দূতাবাস জানায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র এক্সপ্রেস নিউজকে জানিয়েছে, তলবের জবাবে পাক পররাষ্ট্র দফতরে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পৌঁছালে পাক পররাষ্ট্র সচিব তাহমিনা জানজুয়া এ সময় তার কাছে ট্রাম্পের টুইটের ব্যাখ্যা চেয়েছেন এবং প্রতিবাদ জানিয়েছেন। রাষ্ট্রদূত হেইলকে এর আগে ২০১৬ সালের মে মাসেও একবার তলব করা হয়েছিল। পাকিস্তানের অভ্যন্তরে মার্কিন ড্রোন হামলায় নিজেদের অসন্তুষ্টি জানাতে তখন তাকে তলব করা হয়েছিল। ওই ড্রোন হামলায় আফগান তালেবান প্রধান মোল্লা আকবর মনসুর নিহত হয়েছেন বলে তখন খবরে বলা হয়েছিল। এর আগে নতুন বছরের প্রথম দিন ট্রাম্প সন্ত্রাসবিরোধী লড়াই ইস্যুতে পাকিস্তানের সমালোচনা করে দেওয়া টুইটে দাবি করেন, ইসলামাবাদ নাকি মার্কিন নেতাদের বোকা ভেবে দেশটির সঙ্গে প্রতারণা করে যাচ্ছে। টুইটে ট্রাম্প লেখেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বোকার মতো গত ১৫ বছর ধরে সহায়তাবাবদ ইসলামাবাদকে ৩৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি প্রদান করেছে। বিনিময়ে আমাদের নেতাদের বোকা ভেবে দেশটি মিথ্যা কথা বলা ও প্রতারণা করা ছাড়া কিছুই দেয়নি। আফগানিস্তানে যেসব সন্ত্রাসীকে আমরা হন্যে হয়ে খুঁজছি পাকিস্তান তার ভূখণ্ডকে সেসব সন্ত্রাসীর জন্য নিরাপদ স্বর্গ বানিয়েছে। এ অবস্থা আর চলতে দেওয়া যায় না!’

এদিকে, সন্ত্রাসবিরোধী লড়াই প্রশ্নে ট্রাম্পের অভিযোগের পাল্টা সমালোচনা করেছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী খাজা আসিফ। ‘আফগানিস্তানে ন্যাটোর নেতৃত্বাধীন সন্ত্রাসবিরোধী মার্কিন লড়াইয়ের ব্যর্থতার জন্য ওয়াশিংটন তাদের নিজেদের লোকদেরই দায়ী করা উচিত’ বলে জবাব দেন তিনি। সন্ত্রাসবিরোধী চলমান লড়াই নিয়ে স্থানীয় একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের সঙ্গে কথা বলার সময়ও তিনি নিজের মতামত ব্যক্ত করেছেন। এক্ষেত্রে পাকিস্তানের তরফে আর বেশি করা হবে না বলে দেশটির বক্তব্য পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি। খাজা আসিফ বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে বলেছি যে যুক্তরাষ্ট্রকে এ ব্যাপারে আমরা আর বেশি সহযোগিতা দিতে পারব না। তাই ট্রাম্পের ‘নো মোর’ বক্তব্যের কোনো তাত্পর্য নেই।’ পাকিস্তানকে সহায়তা বাবদ যুক্তরাষ্ট্রের তরফে ৩৩ বিলিয়ন ডলার প্রদান করা হয়েছে ট্রাম্পের এমন দাবি নিয়েও কথা বলেছেন তিনি। ইসলামাবাদ যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবি প্রকাশে কড়ায় গণ্ডায় হিসাব দিতে প্রস্তুত বলেও জানিয়েছেন পাক পররাষ্ট্রমন্ত্রী। আর পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রী খোররাম দস্তগির জানিয়েছেন, সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে তার দেশ ওয়াশিংটনকে যথেষ্ট সহযোগিতা করেছে। আফগানিস্তানে চলমান সন্ত্রাসবিরোধী লড়াই পাকিস্তান থেকে লড়া যাবে না বলেও স্পষ্ট করেই জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। ট্রাম্পের অভিযোগ নিয়ে আলোচনা করতে পাক প্রধানমন্ত্রী শহীদ খাকান আব্বাসীর সভাপতিত্বে গতকাল দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের এক জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ ছাড়া প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের টুইটের বক্তব্যের প্রতিবাদে পাকিস্তানের লাহোর, করাচিসহ অন্য শহরে প্রতিবাদ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সময় বিক্ষোভকারীদের মার্কিনবিরোধী স্লোগান দিতে এবং মার্কিন পতাকা পোড়াতে দেখা যায়।

অপরদিকে, মিলিটারি সহায়তা বাবদ পাকিস্তানকে প্রতিশ্রুত ২৫৫ মিলিয়ন ডলার প্রদান আপাতত স্থগিত করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। পাকিস্তান তার ভূখণ্ডে সক্রিয় সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কী সাড়া দেয় তার ওপরই এ সহায়তার ভাগ্য নির্ভর করছে বলে মার্কিন প্রশাসনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এ কথা জানিয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা পিটিআইকে বলেন, ‘পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে সহায়তা বাবদ এই মুহূর্তে ২০১৬ অর্থ বছরে ২৫৫ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ের কোনো পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রের নেই।’ সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে ইসলামাবাদের সহযোগিতার মাত্রা পর্যালোচনা মার্কিন প্রশাসন অব্যাহত রেখেছে বলেও ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন। এক্সপ্রেস ট্রিবিউন, পিটিআই।

সর্বশেষ খবর