সোমবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

অভিযোগের পাহাড়ে জাপার এমপি

শফিক জামান, জামালপুর

অভিযোগের পাহাড়ে জাপার এমপি

জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী) আসনের জাতীয় পার্টির এমপি মামুনুর রশিদ জোয়ার্দারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। গত চার বছর এলাকায় কোনো উন্নয়ন হয়নি। বরং টিআর, কাবিখা, নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত থেকেছেন এই এমপি। তার লুটপাটের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ছাড়াও তার নিজ দল জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোট রাজনীতির কারণে আওয়ামী লীগ এই আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয়। ফলে এক সময়ের সরিষাবাড়ী আলিয়া মাদ্রাসার অফিস সহকারী মামুনুর রশিদ জোয়ার্দার এমপি বনে যান। তিনি এমপি হয়েই শরিক দলগুলোকে পাশ কাটিয়ে একক ক্ষমতার অধিপতি হন। আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির নেতাদের অভিযোগ, গত চার বছরে এলাকায় দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন কাজ না করে তিনি ব্যস্ত ছিলেন দুর্নীতি আর লুটপাটে। টিআর-কাবিখা প্রকল্প আত্মসাৎ, কলেজ সরকারিকরণ ও বিদ্যুৎ সংযোগের নামে অর্থ আদায়, নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত রয়েছেন তিনি। সরিষাবাড়ী কলেজের উপাধ্যক্ষ মিজানুর রহমান অভিযোগ করেন, এই কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি এমপি। কলেজটিকে সরকারিকরণের কথা বলে এমপি শিক্ষকদের কাছ থেকে ১৬ লাখ টাকা আদায় করেন। এখনো কলেজ সরকারিকরণ হয়নি। শিক্ষকরা টাকাও ফেরত পাননি। এমপি উপজেলার ৪২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দফতরি-কাম নাইটগার্ড নিয়োগের কথা বলে প্রায় ২০০ জনের কাছ থেকে জনপ্রতি সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা করে নিয়েছেন। এখন তারা চাকরির আশায় এমপির পেছনে পেছনে ঘুরছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছানোয়ার হোসেন বাদশা অভিযোগ করেন, এমপি মামুনুর রশিদ জোয়ার্দার এলাকায় সরকারি কোনো কর্মকাণ্ডেই থাকেন না। ঢাকায় ও তার বাড়িতে বসে বিভিন্ন প্রকল্পে স্বাক্ষর করে প্রকল্পের কোনো কাজ না করেই তা আত্মসাৎ করেন। তার অভিযোগ টিআর, কাবিখার কোনো কাজ কোথাও হয়নি। তিনি বলেন, এমপির ভাই এনাম জোয়ার্দার বিদ্যুৎ লাইনের জন্য প্রতি কিলোমিটার হিসেবে টাকা আদায় করেন। গত মার্চে দুদকের গণশুনানিতে এই এমপির বিরুদ্ধে বিদ্যুৎ লাইন দেওয়ার কথা বলে এক লাখ ২৬ হাজার টাকা নেওয়ার অভিযোগ তোলেন সাবেক এক মহিলা মেম্বার। সরকারি সোলার বিতরণেও টাকা আদায় করেন এমপির লোকজন। সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক উপাধ্যক্ষ হারুনুর রশিদ অভিযোগ করেন, সামাজিক কবরস্থানের নামে বরাদ্দ দেখিয়ে তার নিজের বাড়ির দেয়াল তুলেছেন এমপি। তার অভিযোগ এক সময়ের অফিস সহকারী এমপি মামুনুর রশিদ জোয়ার্দার এখন বিপুল সম্পদের মালিক বনে গেছেন। উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আবুল কালাম আজাদের অভিযোগ, জাতীয় পার্টির মনোনয়নে এমপি নির্বাচিত হলেও গত চার বছরে তিনি পার্টি ও শরিক দলগুলোকে পাশ কাটিয়ে এককভাবে চলেছেন। তিনি উন্নয়ন বরাদ্দের নামে তার ভাইকে দিয়ে এলাকায় লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করেছেন। তার এপিএস একজন বিএনপি কর্মী। এ ছাড়া তিনি নিয়োগ বাণিজ্য, তদবির বাণিজ্যসহ নানা প্রকার অনিয়মের মাধ্যমে নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকার সম্পদ গড়ে তুলছেন। তিনি এক দিনের জন্যও জাতীয় পার্টির অফিসে আসেননি। দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ জামালপুর জেলা জাতীয় পার্টির সম্মেলনে এলে সেখানেও তিনি যাননি। উল্টো নেতা-কর্মীদের সেই সমাবেশে যেতে বাধা দিয়েছেন। সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলন করে জামালপুর-৪ আসনের জাতীয় পার্টির এমপি মামুনুর রশিদ জোয়ার্দারের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাটের নানা অভিযোগ এনে তাকে প্রতিরোধের ঘোষণা দেয় সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগ। এ ব্যাপারে মামুনুর রশিদ জোয়ার্দারের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কোনো অভিযোগই সঠিক নয়। একটি মহল ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তার বিরুদ্ধে অপ-প্রচারে লিপ্ত রয়েছে।

সর্বশেষ খবর