সোমবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

আখেরি মোনাজাতে বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ কামনা

মোস্তফা কাজল, খায়রুল ইসলাম ও আফজাল টঙ্গী থেকে

আখেরি মোনাজাতে বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ কামনা

দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহর শান্তি, উন্নতি এবং কল্যাণ কামনা করে গতকাল আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে ৫৩তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। তিন দিনব্যাপী ইজতেমা শুরু হয়েছিল গত ১২ জানুয়ারি শুক্রবার। রবিবার সকাল ১০টা ৪১ মিনিটে আখেরি মোনাজাত শুরু হয়। শেষ হয় ১১টা ১৩ মিনিটে। ৩৩ মিনিট স্থায়ী আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন বাংলাদেশের তাবলিগ জামাতের মারকাজের অন্যতম শীর্ষ মুরব্বি ও কাকরাইল জামে মসজিদের খতিব মাওলানা হাসান মুহাম্মদ যুবায়ের। মোনাজাতের আগে হেদায়েতি বয়ান করেন বাংলাদেশের মাওলানা আবদুল মতিন। লাখ লাখ মুসল্লি দুই হাত তুলে মোনাজাতে অংশ নেন। এ সময় টঙ্গীর তুরাগ তীর ইজতেমাস্থল ও আশপাশ এলাকা লাখো মুসল্লির ‘আমিন, আল্লাহুমা আমিন’ ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে। মোনাজাতে আত্মশুদ্ধি ও নিজ নিজ গুনাহ মাফের পাশাপাশি দুনিয়ার সব বালা-মুসিবত থেকে হেফাজত করার জন্য মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের রহমত প্রার্থনা করা হয়। বেসরকারি স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল ও রেডিও মোনাজাত সম্প্রচার করে। মাঠ, রাজপথ, ঘরবাড়ির ছাদ, তুরাগের দুই তীর, কিনারে ভিড়ে থাকা নৌকা, পথে দাঁড়িয়ে থাকা যানবাহনে বসে দুই হাত তুলে কাতরস্বরে মহান আল্লাহর কাছে মিনতি করে ধর্মপ্রাণ অগণিত নারী-পুরুষ। বঙ্গভবনের দরবার হল থেকে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আখেরি মোনাজাতে শরিক হন। এ ছাড়া বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া গুলশানের বাস ভবন থেকে মোনাজাতে অংশ নেন। মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্যরা, রাজনৈতিক নেতারাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিশিষ্ট ব্যক্তিরা মোনাজাতে অংশ নেন। এবার প্রথম পর্বে অংশ নেন দেশের ১৬ জেলার কয়েক লাখ মুসল্লি। এ ছাড়া ৭১টি দেশ থেকে প্রায় ৯ হাজার মুসল্লি এতে শরিক হন। মোনাজাত উপলক্ষে গতকাল গাজীপুর জেলার সব অফিস, কলকারখানা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করা হয়। মোনাজাতের সময় রাজধানীর সড়কগুলোতে যানবাহন ও লোক চলাচল কম ছিল। অফিস-আদালত, শপিং কমপ্লেক্স, স্টেশন প্রভৃতি স্থানে বেলা ১২টা পর্যন্ত প্রায় ফাঁকা ছিল। আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ত্রিমাত্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলে। আকাশে টহল দেয় র‌্যাবের হেলিকপ্টার। আখেরি মোনাজাতে শরিক হতে তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশা উপেক্ষা করে রাজধানীসহ আশপাশের জেলার মুসল্লিরা ইজতেমা ময়দানে আসেন। আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে ইজতেমা ময়দানের আশপাশের মহাসড়ক ও সড়কে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকে। শনিবার মধ্যরাত থেকে মুসল্লিরা হেঁটে দলে দলে ইজতেমাস্থলে আসেন। অনেকেই ময়দানে গিয়ে নিজের এলাকা থেকে আসা তাবলিগ জামাতের সাথীদের সঙ্গে নির্দিষ্ট খিত্তায় অবস্থান নেন। বিশাল ময়দানে ঠাঁই না পেয়ে আশপাশের অলিগলি ও রাস্তায় পাটি, খবরের কাগজ, পলিথিন, সিমেন্টের বস্তা বিছিয়ে বসেন। আবার অনেকে ময়দানের বহুতল ভবনের ছাদ, বাসা-বাড়ি, কলকারখানা-অফিসে, যানবাহনের ছাদে ও তুরাগ নদে নৌকায় মুসল্লিরা অবস্থান নেন। ইজতেমাস্থলে পৌঁছাতে না পেরে হাজার হাজার মানুষ মহাসড়কে দাঁড়িয়ে শরিক হন। ইজতেমা স্থল ও চারপাশের প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যান চলাচলে আগেই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। এ ছাড়া মুসল্লিদের যাতায়াতের জন্য গাজীপুর জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ৩০টি শাটল বাস চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়। গণযোগাযোগ অধিদফতর ইজতেমা ময়দান থেকে আবদুল্লাহপুর ও বিমানবন্দর রোড পর্যন্ত এবং গাজীপুর জেলা তথ্য অফিস ইজতেমা ময়দান থেকে চেরাগআলী, টঙ্গী রেলস্টেশন, স্টেশন রোড ও আশপাশের অলিগলিতে পর্যাপ্ত মাইক সংযোগের ব্যবস্থা করে। রেলওয়ে আখাউড়া, কুমিল্লা ও ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন রুটে বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করে। গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মোনাজাতে অংশ নেন তার ছোট বোন শেখ রেহানা, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও পরিবারের সদস্যরা। এ ছাড়া ইজতেমা মাঠে আখেরি মোনাজাতে অংশ নেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আ ক ম মোজাম্মেল হক, স্থানীয় সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র এম এ মান্নান, টঙ্গী পৌরসভার সাবেক মেয়র অ্যাডভোকেট আজমত উল্যাহ খান, যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গির আলম প্রমুখ। আগামী শুক্রবার অনুষ্ঠেয় তিন দিনব্যাপী বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে দেশের আরও ১৬ জেলাসহ বিভিন্ন দেশের মুসল্লিরা অংশ নেবেন।

সর্বশেষ খবর