সোমবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

তথ্য বাস্তবসম্মত নয় : তোফায়েল

নিজস্ব প্রতিবেদক

তথ্য বাস্তবসম্মত নয় : তোফায়েল

নির্বাচনের বছর বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশকে ‘দুরভিসন্ধিমূলক’ উল্লেখ করে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ‘বিএনপির বক্তব্য’ এবং ‘সিপিডির গবেষণা রিপোর্ট’ আসলে একই। গতকাল সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে সুইডিশ রাষ্ট্রদূত মিজ সার্লটা স্ক্লিটারের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এমন মন্তব্য করেন। এ সময় মন্ত্রী বলেন, সিপিডির তথ্য বাস্তবসম্মত নয়। প্রধানমন্ত্রী ১২ জানুয়ারি জাতির উদ্দেশে বক্তব্য দিয়েছেন। পরদিন সিপিডি এই কন্ট্রাডিকটরি গবেষণা রিপোর্ট প্রকাশ করল। এতেই বোঝা যায়, তাদের উদ্দেশ্য কী। নির্বাচনের বছরে এ ধরনের গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে সিপিডি বাংলাদেশের বিরোধিতাকারীদের হাতে একটি অস্ত্র তুলে দিল বলেও মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের এই বর্ষীয়ান নেতা। শনিবার চলতি অর্থবছরের অর্থনৈতিক পর্যালোচনা করতে গিয়ে সিপিডি জানায়, ২০১৭ সাল ছিল ব্যাংকিং খাতে কেলেঙ্কারির বছর। সংস্থাটির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বেশ কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েছে। ধনী ও গরিবের মধ্যে বৈষম্য বেড়েছে। ব্যাংকিং খাত সংস্কারে অর্থ মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বমূলক ভূমিকার ক্ষেত্রে দুর্বলতা ছিল। সিপিডির এই বক্তব্য সম্পর্কে সাংবাদিকরা প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘তারা (সিপিডি) সঠিক কথা বলেনি। সত্যি তাদের কথা অবাক করার মতো। আমি তাদের কথায় ব্যথিত। এটি যদি তাদের গবেষণা হয়, তাহলে আমি দুঃখিত। এই রিপোর্ট, এই গবেষণা আমি মানতে পারছি না।’ মন্ত্রী বলেন, সিপিডির বক্তব্য অনুযায়ী, গত বছর অর্থনৈতিকভাবে ভালো যায়নি। এটা সঠিক নয়। ২০১৩ ও ২০১৪ সালে বিএনপি নৈরাজ্য করেছে। এরপর গত দুই বছর ভালো উন্নয়ন হয়েছে। দেশ এগিয়ে গেছে। তোফায়েল বলেন, ‘যে মুহূর্তে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে সব ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে, যেখানে বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকেও এগিয়ে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভারত থেকেও এগিয়ে, সেই সময় সিপিডির এমন গবেষণা বক্তব্য ফলাও করে প্রচার করা দুরভিসন্ধিমূলক।’ মন্ত্রী বলেন, “নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেন, বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট কৌশিক বসুসহ বিশ্বের বড় বড় অর্থনীতিবিদ যখন বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ‘বিস্ময়কর উত্থান’ বলছেন, সেখানে সিপিডি বলছে বাংলাদেশে কিছুই হয়নি। আমি দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যকে বলতে চাই, উন্নয়ন যদি না হয় তাহলে বাংলাদেশে এত বিনিয়োগ হয় কী করে? তিনি কি কৌশিক বসু ও অমর্ত্য সেনের চেয়েও বেশি বোঝেন, বেশি জানেন?”

 সিপিডির প্রতি প্রশ্ন রেখে মন্ত্রী বলেন, ‘তারা এত বড় সংবাদ সম্মেলনে বর্তমান সরকারের একটা ভালো কথাও বললেন না কেন? একটা ভালো কাজও কি আমরা করিনি? দেশের অর্থায়নে পদ্মা সেতু করছি না? দেশের ৮৩ শতাংশ মানুষ বিদ্যুতের সুবিধা পায়। এসব কাজ তাদের কাছে প্রশংসিত হবে না?’ তিনি বলেন, ‘পত্রিকাগুলো সিপিডির সংবাদ বড় করে ছাপে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে তখন বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ছিল ৩৮০ কোটি ডলার। বিএনপির সময় তা ১০ বিলিয়ন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ১৪ বিলিয়ন ডলার হয়। আমরা সেখান থেকে ২০০৯ সালে যাত্রা শুরু করেছিলাম। গত ৯ বছরে বাংলাদেশ ৩৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করার সক্ষমতা অর্জন করেছে। ২০০৯ সালের আগে দেশে দারিদ্র্যের সীমা ছিল ৪২ শতাংশ। এখন সেটা ২৩ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে এসেছে। অতিদারিদ্র্যের সীমা ছিল ১৭ দশমিক ৬ শতাংশ, যা এখন কমে দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৮ শতাংশে। সব ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উন্নতি হয়েছে। সিপিডি এগুলো চোখে দেখে না!’ নির্বাচনকালীন সরকার বলে সংবিধানে কিছু নেই বলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচনের সময় যে সরকার থাকে এবং যে সরকারের অধীনে নির্বাচন পরিচালিত হয়, সেটিই নির্বাচনকালীন সরকার। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে সেটিই বুঝিয়েছেন। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, গত নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলের নেতাদের আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু তারা আসেননি। আমাদের প্রস্তাব তারা প্রত্যাখ্যান করেন। তখন যারা দায়িত্বে ছিলেন তারাই নির্বাচনকালীন সরকারের দায়িত্ব পালন করেছেন।’ নির্বাচনের সময় নির্বাচন পরিচালনা করবে নির্বাচন কমিশন এমন মন্তব্য করে মন্ত্রী আরও বলেন, ‘এখন আর সংলাপের সম্ভাবনা নেই, প্রয়োজনও নেই। নির্বাচনকালীন সরকার বড় হবে, নাকি ছোট হবে, তা প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। জীবন থেকে যা হারিয়ে যায় তা কি পাওয়া যায়?’

সর্বশেষ খবর