মঙ্গলবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা
মিয়ানমার বলল, রোহিঙ্গাদের প্রথম দল যাবে ২৩ জানুয়ারি

৩০ হাজার হিন্দু মুসলিম ফেরতের প্রথম ক্যাম্প

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

রাখাইনে সহিংসতার মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সদস্যদের ফেরত নেওয়ার সময় তাদের একটি অস্থায়ী শিবিরে (ট্রানজিট ক্যাম্পে) রাখা হবে। রাখাইনের উত্তর অংশে হ্লা পো খাউং এলাকায় ক্যাম্পটি নির্মাণ শেষের পথে। ১২৪ একরে ৬২৫টি ভবন নিয়ে নির্মিতব্য এই অস্থায়ী শিবিরে ৩০ হাজার মানুষকে রাখা যাবে। আগামী সপ্তাহের মধ্যেই প্রায় ১০০টি ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ হবে। প্রত্যাবাসনের জন্য কাঠামোগতভাবে যাদের গ্রহণ করা হবে তাদের এখানে রাখা হবে। মিয়ানমারের কর্মকর্তারা বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের এসব কথা জানিয়ে বলেছেন, আগামী ২৩ জানুয়ারি থেকে হিন্দু-মুসলিমদের ক্যাম্পে নেওয়ার কাজ শুরু করা হবে। নেপিদোতে বাংলাদেশ মিয়ানমারের মধ্যে গঠিত যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রথম  বৈঠকে এসব তথ্য জানানো হয় বলে বার্তা সংস্থা এপির খবর। গতকাল সন্ধ্যায় এ খবর লেখা পর্যন্ত জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ বৈঠকের বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য দেওয়া হয়নি। তবে সূত্রের খবর, যৌথভাবে রোহিঙ্গাদের পরিচয় শনাক্ত করার বিষয় নিয়ে কীভাবে কাজ করা হবে তা এখনো নির্ধারিত না হওয়ার কারণে প্রথম ধাপের প্রত্যাবাসন কবে হবে তা নিশ্চিত নয়। এর আগে ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, মিয়ানমার ও বাংলাদেশের যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রথম বৈঠকে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক বাংলাদেশের পক্ষে এবং মিয়ানমারের পক্ষে দেশটির পার্লামেন্টের সেক্রেটারি মিন্ট থো বৈঠকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। দুই দেশের ১৫ জন করে মোট ৩০ সদস্যের সমন্বয়ে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠিত হয়েছে। প্রথমবারের এই বৈঠকে প্রত্যাবাসনসংক্রান্ত ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট বা মাঠপর্যায়ের চূড়ান্ত চুক্তি করার কথা দুই দেশের। বৈঠকে প্রাথমিকভাবে প্রত্যাবাসনের জন্য এক লাখ রোহিঙ্গার তালিকা মিয়ানমারের কাছে হস্তান্তর করেছে বাংলাদেশ। এপির খবরে বলা হয়, মিয়ানমারের সমাজকল্যাণ, ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী উইন মিয়াত আয়ে বলেছেন, বাংলাদেশ থেকে কত সংখ্যক রোহিঙ্গা ফেরত নেওয়া হবে এবং তাদের কীভাবে যাচাই-বাছাইয়ের পর শিবিরে আশ্রয় দেওয়া হবে সে ব্যাপারে আলোচনার জন্য নেপিদো বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে মিয়ানমার। আগামী ২৩ জানুয়ারি থেকে এ প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরুর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আশা করছি, সঠিক সময়েই এ প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হবে। মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় নিউ লাইটস মিয়ানমারের খবরে বলা হয়, মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় মানবিক সহযোগিতা, পুনর্বাসন ও উন্নয়ন বিভাগের প্রধান সমন্বয়কারী অং টুন থেট জানান, হ্লা পো খাউং শিবিরটি হবে রোহিঙ্গাদের জন্য ‘স্থানান্তরের জায়গা’। তাদের নিজ স্থানে প্রত্যাবাসন বা নিজ স্থানের কাছাকাছি স্থানে পাঠানোর আগে এখানে রাখা হবে। তিনি বলেন, মিয়ানমারে যারা ফিরতে চাইবে তাদের সবাইকে গ্রহণ করা হবে। যারা ফিরতে চাইবে তাদের মিয়ানমারের বাসিন্দা হিসেবে যাচাই করার পরই গ্রহণ করা হবে। এরপর তাদের পর্যবেক্ষণ শিবিরে পাঠানো হবে। সেখান থেকে অস্থায়ী শিবিরে। মিয়ানমারের সমাজকল্যাণ, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী সচিব সোয়ে অং অং জানান, রোহিঙ্গাদের নতুন বাড়ি বানানোর আগ পর্যন্ত অন্তত এক থেকে দুই মাস হ্লা পো খাউং শিবিরে থাকতে হতে পারে। রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, নাগরিকত্বের প্রমাণ দিয়ে কতজন রোহিঙ্গা ফিরে আসতে পারবেন তা স্পষ্ট নয়। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রোহিঙ্গা মুসলিমরা নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন যদি তারা মিয়ানমারে বসবাসের প্রমাণ দিতে পারেন। ১৯৯২ সালের মতো এবারের চুক্তিতেও রোহিঙ্গাদের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। মিয়ানমারের কর্মকর্তারা বলছেন, ১৯৯২-৯৩ সালের প্রত্যাবাসন চুক্তি অনুসারে মিয়ানমার কেবল তাদেরই ফিরিয়ে নেবে যাদের কাছে সরকারি কোনো নথি রয়েছে। কিন্তু বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমার অনেক বছর ধরেই রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছে। এমনকি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর স্বাধীনভাবে চলাফেরা, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মতো মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখা হয়। তাদের বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অবৈধ অভিবাসী হিসেবে মনে করে দেশটি।

সর্বশেষ খবর