শনিবার, ২০ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা
বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব

জুমায় লাখো মুসল্লির অংশগ্রহণ, কাল আখেরি মোনাজাত

মোস্তফা কাজল, খায়রুল ইসলাম ও মো. আফজাল, টঙ্গী থেকে

জুমায় লাখো মুসল্লির অংশগ্রহণ, কাল আখেরি মোনাজাত

আমবয়ানের মধ্য দিয়ে গতকাল বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব শুরু —বাংলাদেশ প্রতিদিন

ফজর নামাজের পর আম বয়ানের মধ্য দিয়ে টঙ্গীর তুরাগতীরে গতকাল শুরু হয়েছে দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় জমায়েত তাবলিগ জামাতের তিন দিনব্যাপী ৫৩তম বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় বা শেষ পর্ব। আগামীকাল আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের বিশ্ব ইজতেমার উভয় পর্বের যত আয়োজন। গতকাল কয়েক লাখ মুসল্লি জুমার নামাজে শরিক হন। আম বয়ান করেন বাংলাদেশের মাওলানা ওমর ফারুক। পথে পথে নানা ভোগান্তির শিকার হয়ে ১৩ জেলার কয়েক লাখ মুসল্লি ইজতেমাস্থলে এসেছেন। ইজতেমা উপলক্ষে গাজীপুর জেলা ও এর সব উপজেলায় কর্মরত চিকিৎসকদের ২১ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাত শেষ না হওয়া পর্যন্ত সব ধরনের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। জুমার নামাজে শরিক হন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, স্থানীয় সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র এম এ মান্নানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এ সময় পুলিশের আইজি এ কে এম শহীদুল হক ও অতিরিক্ত আইজি জাভেদ পাটোয়ারী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন। জুমার নামাজে ইমামতি করেন কাকরাইল মসজিদের খতিব মাওলানা মোহাম্মদ যোবায়েরুল হাসান। বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের তিন দিনের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আম ও খাস বয়ান, তালিম, তাশকিল, ছয় উসুলের হাকিকত, দরসে কোরআন, দরসে হাদিস, চিল্লায় নাম লেখানো ও নতুন জামাত তৈরি করা। এদিকে গাজীপুর জেলা পুলিশ গতকাল সন্ধ্যায় ইজতেমা মাঠের চারপাশে অভিযান চালিয়ে হকার, পকেটমার ও মোবাইল ফোন সেট চুরির দায়ে ১১ জনকে গ্রেফতার করেছে। এসবের পাশাপাশি পুরো এলাকায় নেওয়া হয়েছে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা। এ ছাড়া নিরাপত্তা চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে পুরো বিশ্ব ইজতেমা ময়দান ও আশপাশের এলাকাকে। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা যাতে ইজতেমাস্থলে স্বচ্ছন্দ ও নিরাপদে পৌঁছতে পারেন সেজন্য গতকাল সকাল থেকে পর্যাপ্ত আর্মড পুলিশ সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে।

গতকাল সরেজমিন ইজতেমা ময়দানে গিয়ে দেখা যায় অগণিত ধর্মপ্রাণ মুসল্লির আগমনে ইজতেমাস্থল ও আশপাশ এলাকা মুখরিত। মুসল্লিরা ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল। শিল্পনগরী টঙ্গী এখন ধর্মীয় নগরীতে পরিণত হয়েছে। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মুসল্লিরা জামাতভুক্ত হয়ে ইজতেমাস্থলের দিকে ছুটে আসছেন। বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে পুরো ময়দানকে ১৯টি খিত্তায় ভাগ করা হয়েছে।

যা বললেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী : জুমার নামাজের আগে গাজীপুরের শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়ামে স্থাপিত পুলিশ কন্ট্রোল রুমের সামনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয়েছে। ২০১১ সাল থেকেই ইজতেমা দুই পর্বে সম্পন্ন হয়। দ্বিতীয় পর্ব চলছে। আমরা মনে করি প্রথম পর্ব যেমন সুন্দরভাবে শেষ হয়েছে এটাও সে রকমই হবে। পৃথিবীর বহু দেশ থেকে গত ইজতেমায় ৪ হাজারের অধিক মেহমান (মুসল্লি) অংশ নিয়েছেন। এবারও সমসংখ্যক বিদেশি মুসল্লি এসে পৌঁছেছেন, আরও হয়তো আসবেন।’ তিনি বলেন, ‘ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বও প্রথম পর্বের মতো সুন্দরভাবে সম্পন্ন হবে। যারা এসেছেন তারা স্বাভাবিকভাবেই তাদের গন্তব্যস্থানে ফিরে যেতে পারবেন। প্রস্তুতিও খুব সুন্দর। সিকিউরিটির ব্যাপারটা আমরা দেখছি। সব ধরনের সিকিউরিটি, গোয়েন্দা তৎপরতা সবই আছে; যাতে এটা নির্বিঘ্নে হয়। সেবামূলক কার্যক্রম সরকারের যেগুলো রয়েছে যেমন স্বাস্থ্যসেবা, স্যানিটেশন, পানির ব্যবস্থা আগেও যেমন ছিল এ পর্বেও তেমনই আছে। জেলা পরিষদ থেকে শুরু করে স্থানীয় এমপি এগুলো তদারক করছেন।’ ভারতের মাওলানা সাদ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যতটুকু জানি ভারতের নিজাম উদ্দিন মারকাজেই এদের মধ্যে মতভেদ হয়ে গেছে। এদের মধ্যে ডিফারেন্স অব অপিনিয়ন হয়েছে। তারই একটা ধারাবাহিকতা বাংলাদেশে আসছে এবং এর সৃষ্টি হয়েছে। আমরা সরকারিভাবে এই ডিফারেন্স অব অপিনিয়নটা যাতে মিটে যায় এবং সবাই সুন্দরভাবে ইজতেমায় আসতে পারেন সে প্রচেষ্টা চালাচ্ছি।’

বয়ানে যা বলা হয় : গতকালের বয়ানে বলা হয়, জুমার দিন, একটি পবিত্র দিন, সপ্তাহের সেরা দিন। সবচেয়ে উত্তম দিন হলো জুমার দিন। এ দিনটি সবচেয়ে বড় ও সম্মানী দিন। এই দিনে হজরত আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়। এই দিনই দুনিয়া ধ্বংস হবে। এই দিনে আল্লাহর কাছে যা চাইবে, আল্লাহ তা তাকে দেবেন। জুমার নামাজ আদায়ের লক্ষ্যে গোসল-অজু করে মসজিদের উদ্দেশে রওনা হওয়ার পর থেকে তার নেকি লেখা হয়। আমরা যা করব আল্লাহকে রাজি করার জন্য করব। আল্লাহর হুকুমমতো আমরা যেন সারা জীবন চলতে পারি সে চেষ্টা করব। এখানকার শিক্ষা নিয়ে দেশে ও সারা দুনিয়ায় মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়তে হবে।

মাসলেহাল (সমস্যা সমাধান) জামাত : এ জামাতের এক মুরব্বি জানান, বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের মালখানায় এ জামাতের অবস্থান। এ জামাতের সদস্যরা মুসল্লিদের যে কোনো ধরনের সমস্যা সমাধান করেন। বিশেষ করে কোনো মুসল্লি ময়দানে এসে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে কিংবা মারা গেলে তাদের চিকিৎসাসেবা ও লাশ জানাজা শেষে লাশ মৃতের ঠিকানায় পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। এখানে চিকিৎসক রয়েছেন। যারা মৃত্যুসনদও দেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর