সোমবার, ২২ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

রোহিঙ্গা ফেরত শুরু কাল

কাউকে জোর করে পাঠানো হবে না কূটনীতিকদের ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

আজ ২২ জানুয়ারি থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর কথা প্রচার করছে মিয়ানমার। কিন্তু এখনো এ বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছতে পারেনি বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশ সরকার নতুন করে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরের সঙ্গে চুক্তি করতে যাচ্ছে। পশ্চিমা দেশগুলো প্রত্যাবাসনের পুরো প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশের পাশে থাকার নিশ্চয়তা দিলেও এ প্রক্রিয়ায় প্রতিবেশী ভারত, চীন ও জাপানের আরও বেশি অংশগ্রহণ চাইছে ঢাকা। অন্যদিকে নিরাপদ পরিবেশ ছাড়া রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পক্ষে নন বিদেশি কূটনীতিকরা। তারা জোর দিচ্ছেন রাখাইনের সার্বিক পরিস্থিতির উন্নয়নে। গতকাল ঢাকার বিদেশি কূটনীতিকদের জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর ডিপ্লোমেটিক ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য উঠে আসে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, ভারত, চীন, জাপান, কাতার ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ ৫২টি দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার, মিশনপ্রধান ও প্রতিনিধিরা দুই দফার ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন। ব্রিফিং শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের জোর করে ফেরত  পাঠাবে না বাংলাদেশ।’ অতিথি ভবন পদ্মায় আয়োজিত ব্রিফিং শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী বলেন, ২৩ নভেম্বর বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য একটি অ্যারেঞ্জমেন্ট চুক্তিতে সই করেন। এরপর ১৯ ডিসেম্বর যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হয় এবং ১৬ জানুয়ারি ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট চুক্তি সই হয়। বিদেশি কূটনীতিকদের মূলত এ তিনটি বিষয়ে ব্রিফ করা হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সর্বাত্মকভাবে স্বেচ্ছা, নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবাসনের জন্য কাজ করছে। এসব কারণেই কফি আনান কমিশন বাস্তবায়নের জন্য মিয়ানমারের প্রতিশ্রুতির বিষয়টি চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রত্যাবাসিতরা যেন কোনো ধরনের বৈষম্য ও অসম্মানের শিকার না হয় সে জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অন্তর্ভুক্ত করার কথা করা চুক্তিতে যুক্ত করেছে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘চুক্তির খসড়া নিয়ে আমরা জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরের সঙ্গে আলোচনা করছি। চুক্তি সই হলে তারা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় যুক্ত হবে।’ জানা যায়, মিয়ানমারে এখন আন্তর্জাতিক রেডক্রস কাজ করছে। মিয়ানমার জাতিসংঘের অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে বরাবরই আপত্তি জানিয়েছে। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থাকে যুক্ত করতে মিয়ানমার সরকারও নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে।’ যাচাই-বাছাই ফরমের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটি চূড়ান্ত হয়েছে। একটি পরিবারকে একটি ইউনিট হিসেবে গণ্য করা হবে।’ তিনি বলেন, ‘যেসব রোহিঙ্গার ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, তাদের ঘরবাড়ি তৈরি করে দেবে ভারত, চীন ও জাপান। এ প্রস্তাবেও রাজি হয়েছে মিয়ানমার।’ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়নকে এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত করার জন্য প্রস্তাব করেছি। আমরা চাই, মিয়ানমারের প্রতিবেশী পাঁচটি রাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা রাখাইন রাজ্য সফর করুন।’ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কবে থেকে শুরু হচ্ছে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘কোন তারিখ তা বলা মুশকিল। তবে আপনারা দেখছেন প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে।’ রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় যেতে চাইবে কি না এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের জোর করে ফেরত  পাঠাবে না বাংলাদেশ। কূটনৈতিক এই ব্রিফিং থেকে বেরিয়ে ভারতের হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বলেন, নিরাপদ ও টেকসই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য রাখাইনের টেকসই উন্নয়ন অত্যাবশ্যকীয়। এ জন্য ভারত বিশ্বাস করে, রাখাইনের আর্থসামাজিক উন্নয়ন হলেই রোহিঙ্গারা ঘরে ফেরত যাওয়ার বিষয়ে আগ্রহী হবে। হাইকমিশনার বলেন, ভারতও চায় প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে। তবে সব পক্ষকেই এ ক্ষেত্রে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। ব্রিটিশ হাইকমিশনার অ্যালিসন ব্লেক বলেন, ‘প্রত্যাবাসন অবশ্যই হতে হবে স্বেচ্ছায়। আর নিরাপদ পরিবেশ তৈরি ছাড়া রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো ঠিক হবে না।’ রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো ঘুরে দেখার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বার্নিকাট বলেন, রোহিঙ্গাদের নিজেদের বাড়িঘরে ফিরতে না চাওয়াটাই এখন প্রথম চ্যালেঞ্জ। তাদের এই ভীতি কাটানো রাতারাতি সম্ভব নয়। এ জন্য প্রয়োজন পুরো রাখাইনের আর্থসামাজিক উন্নয়ন। রাখাইন রাজ্যের উন্নয়ন ছাড়া রোহিঙ্গাদের আস্থায় নিয়ে আসাটা কঠিন মন্তব্য করে বার্ণিকাট বলেন, তবে পরিস্থিতি যা-ই হোক, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসান প্রক্রিয়া পুরোপুরি শেষ না হওয়া পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সর্বাত্মক সহযোগিতা বজায় থাকবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সাহসী ও দূরদর্শী সিদ্ধান্ত নিয়ে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ায় বিদেশি কূটনীতিকরা বাংলাদেশের জনগণ ও সরকার, বিশেষত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করেছেন। সেই সঙ্গে সব মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখার আশ্বাসও দিয়েছেন বিদেশি কূটনীতিকরা। ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হকসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

দ্বিতীয়দিনে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘুরলেন জাতিসংঘের দূত  : মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মানবিক পরিস্থিতি সরজমিনে দেখতে দ্বিতীয়দিনের মতো কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালীসহ বিভিন্ন ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থার বিশেষ দূত ইয়াং হি লি। গতকাল সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত তিনি বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বিভিন্ন ব্লক ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করেন। এসময় আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থাসহ (আইওএম) আন্তর্জাতিক বিভিন্ন দাতা সংস্থার অফিসে বসে তিনি রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেন। রোহিঙ্গাদের তিনি নিরাপদে স্বদেশ ফিরে যেতে সহযোগিতার আশ্বাস দেন। উল্লেখ্য, ইয়াং হি লি গত শনিবার টেকনাফের নয়াপাড়া ও রইক্ষণ রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। এসময় টেকনাফ নেচার পার্কের অভ্যর্থনা কেন্দ্রে ১০ জন রোহিঙ্গা পুরুষ ও ১০ জন নারীর সঙ্গে কথা বলেন। সফরকালে তার সঙ্গে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) ও ক্যাম্পে নিয়োজিত আন্তর্জাতিক দাতাসংস্থার কর্তকর্তারা ছিলেন। ইয়াং হি লি আরও দুদিন রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘুরবেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর