সোমবার, ২২ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

গুলিবিদ্ধ আরও ছয় লাশ

প্রতিদিন ডেস্ক

পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় গতকাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুজন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া যশোর, ঝিনাইদহ এবং সাতক্ষীরায় আরও চারজনের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর—

ব্রাহ্মণবাড়িয়া : আটকের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে দুজন নিহত হয়েছেন। গতকাল ভোর রাত ৩টার দিকে উপজেলার শাহবাজপুর উত্তরপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার বুধল ইউনিয়নের সুতিয়ারা গ্রামের আবদুল আওয়াল মিয়ার ছেলে আবদুল ওহাব (৩০) ও হবিগঞ্জ লাখাই সজলগ্রামের আক্তার হোসেনের ছেলে আবুল বাশার (২৮)। পুলিশের ভাষ্য, নিহত দুজনই ডাকাত দলের সদস্য। উভয়ের বিরুদ্ধে একাধিক ডাকাতিসহ হত্যা মামলা রয়েছে। তবে নিহত বাশারের মা হেনা বেগম ও স্ত্রী আলুসম বেগম বলেন, ‘বাশারের বিরুদ্ধে কোনো ওয়ারেন্ট নেই। গত শনিবার রাতে বাশারকে আটকের পর ছেড়ে দেওয়ার কথা বলে সরাইল থানার এক পুলিশ কর্মকর্তা ২০ হাজার টাকা নিয়েছেন। বলেছিলেন সকালে ছেড়ে দেবেন। বাশার ডাকাত নয়। সে একজন অটোরিকশা চালক।’ আবদুল ওহাব মিয়ার মা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে ভ্যানচালক। তার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা থাকলেও সে ডাকাতির সঙ্গে জড়িত নয়। ১০ হাজার টাকা দিলে ওহাবকে ছেড়ে দেবে বলে সরাইল থানা পুলিশ জানিয়েছিল। পরে শনিবার রাতে ধার করে এনে সরাইল থানা পুলিশকে ১০ হাজার টাকা দিয়েছি।’ সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মফিজ উদ্দিন ভূইয়া বলেন, ‘শুক্রবার দিবাগত রাতে সরাইলের শাহবাজপুরের একটি বাড়িতে ডাকাতির সময় ওহাব ও বাশারসহ ছয়জনকে এলাকাবাসী ও পুলিশ আটক করে। পরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের সময় ওহাব ও বাশার জানায়, বিভিন্ন স্থান থেকে ডাকাতির সময় লুণ্ঠন করা মালামাল শাহবাজপুরের উত্তরপাড়া এলাকায় রাখা আছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ তাদের নিয়ে গতকাল ভোররাতে মালামাল উদ্ধার করতে শাহবাজপুরের উত্তরপাড়া এলাকায় যায়। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তাদের ১০-১২ জন সহযোগী অস্ত্র নিয়ে পুলিশের ওপর গুলি ছোড়ে ওহাব ও বাশারকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশ পাল্টা ১১ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এ সময় সহযোগীদের ছোড়া গুলিতে ওহাব ও বাশারসহ পুলিশের পাঁচ সদস্য আহত হন। পরে অন্য ডাকাত সদস্যরা পালিয়ে যায়। আহতদের উদ্ধার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিত্সক ওহাব ও বাশারকে মৃত ঘোষণা করেন।’

যশোর : যশোরে গুলিবিদ্ধ চার লাশ উদ্ধারের একদিনের মাথায় গতকাল গুলিবিদ্ধ আরও দুই লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। যশোর কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক আবুল বাশার মিয়া বলেন, ‘স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে গতকাল ভোরে যশোর সদর উপজেলার রঘুরামপুর গ্রাম থেকে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হওয়া এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘটনাস্থলে একটি ওয়ানশুটারগান, এক রাউন্ড গুলি, পাঁচটি গুলির খোসা ও পাঁচটি ধারালো অস্ত্র পাওয়া গেছে।’ স্থানীয়দের উদ্ধৃতি দিয়ে আবুল বাশার মিয়া বলেন, ‘শনিবার রাত সাড়ে ৪টার দিকে রঘুরামপুরে সন্ত্রাসীদের মধ্যে গোলাগুলি হয়েছিল। ঘটনাস্থল থেকে লাশটি উদ্ধারের পর যশোর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে নেওয়া হয়।’

এ ছাড়া গতকাল দুপুরে বাঘারপাড়া উপজেলার ভাঙ্গুড়া পুরনো ব্রিজের নিচে থেকে আরও এক অজ্ঞাত যুবকের (২৪) গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে বাঘারপাড়া ভিটাবল্যা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ সদস্যরা লাশ উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। ভিটাবল্যা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ আমির হোসেন বলেন, ‘বেলা ১২টার দিকে লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠিয়েছি। লাশের শরীরে দুটি গুলির চিহ্ন ছিল।’ স্থানীয় বাসিন্দা বখতিয়ার রহমান জানান, লাশ পড়ে থাকার স্থানটি যশোর ও নড়াইল জেলার সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় প্রথমে বাঘারপাড়া ও পরে নড়াইল পুলিশকে খবর দেন তিনি। লাশের ডান কানের কাছে এবং বুকের বাম পাশে গুলিবিদ্ধ হওয়ার চিহ্ন রয়েছে। শনিবার রাতে গুলি করে হত্যার পর লাশটি ওই স্থানে দুর্বৃত্তরা ফেলে রেখে গেছে বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা। এর আগে শনিবার ভোরে যশোর সদর উপজেলার নোঙ্গরপুর থেকে দুটি এবং ঝিকরগাছা উপজেলার চাপাতলা থেকে দুটি গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এদের কারও পরিচয় পাওয়া যায়নি। লাশগুলো যশোর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে রয়েছে।

ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল সকালে ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়কের ফুলবাড়ী নামক স্থান থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। পুলিশ জানায়, সকালে ওই স্থানে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির গুলিবিদ্ধ লাশ পড়ে থাকতে দেখে এলাকাবাসী পুলিশে খবর দেয়। পরে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। দুবৃর্ত্তরা অন্য কোনো স্থানে তাকে হত্যা করে ঘটনাস্থলে লাশ ফেলে রেখে যায় বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলায় গুলিবিদ্ধ এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সকালে কলারোয়া উপজেলার খোদ্দ ইউনিয়নের তিতলা চারাবটতলা নামক স্থান থেকে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করেছে। অজ্ঞাত যুবকের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। তার বয়স আনুমানিক ৩৪ বছর। কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিপ্লব কুমার নাথ জানান, স্থানীয়দের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে অজ্ঞাত যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে। তার মাথায় গুলিবিদ্ধ ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, খুব কাছ থেকে তার মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করেছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর