মঙ্গলবার, ২৩ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা
একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা

তারেক রহমানের পক্ষে যুক্তিতর্ক

নিজস্ব প্রতিবেদক

চাঞ্চল্যকর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনার সঙ্গে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। ঘটনার সময় তারেক রহমান তৎকালীন বিএনপি সরকারের কোনো পদেও ছিলেন না, সে হিসেবে দুষ্কৃতিকারীদের প্রশাসনিক সহযোগিতা করাও তার পক্ষে সম্ভব ছিল না। ২১ আগস্ট হামলার ঘটনায় দায়ের দুই মামলার অন্যতম আসামি তারেক রহমানের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করে এসব কথা বলেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আবুল কালাম আখতার হোসেন। গতকাল ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন তারেক রহমানের পক্ষে যুত্তিতর্ক অসমাপ্ত রেখেই আজ (মঙ্গলবার) পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন। পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত বিশেষ এজলাসে মামলা দুটির বিচার চলছে। শুনানি শেষে তারেক রহমানের পক্ষের রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবীর দেওয়া বক্তব্যের জবাব দেন রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি সৈয়দ রেজাউর রহমান। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ২১ আগস্ট ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ষড়যন্ত্রের সঙ্গে তারেক রহমান জড়িত রাষ্ট্রপক্ষ তা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। তারেক রহমান তার তৎকালীন কার্যালয় বনানীর হাওয়া ভবনে ষড়যন্ত্র বৈঠক করেছেন তাও প্রমাণিত হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। ওই বৈঠকের আলোকে হামলাকারীদের সার্বিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এ মামলায় কাউকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে জড়ানো হয়নি। অপরাধের সম্পৃক্ততার ভিত্তিতেই ঘটনায় জড়িতরা মামলার আসামি হয়েছেন বলে জানান সৈয়দ রেজাউর রহমান। গতকাল চাঞ্চল্যকর এ দুই মামলার কার্যক্রম শুরু হলে প্রথমেই কারাগারে থাকা আসামি আবদুল হান্নান ওরফে মাওলানা সাব্বিরের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন তার আইনজীবী মাঈনুদ্দিন মিয়া। এই আসামির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে দাবি করে আসামির খালাস দাবি করেন আইনজীবী। এরপর তারেক রহমানের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেন তার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আবুল কালাম আখতার হোসেন। এর আগে আরও ১৪ আসামির পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেছেন তাদের আইনজীবীরা। গতকাল আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন প্রধান কৌঁসুলি সৈয়দ রেজাউর রহমান, বিশেষ পিপি মো. আবু আবদুল্লাহ ভূঞা, আইনজীবী আকরাম উদ্দিন শ্যামল, অ্যাডভোকেট মো. আমিনুর রহমান, অ্যাডভোকেট আবুল হাসনাত প্রমুখ।

যুক্তিতর্কে আইনজীবী আবুল কালাম আখতার হোসেন বলেন, মামলার এজাহার, প্রথম অভিযোগপত্র, বিভিন্ন জিডিতে আসামি তারেক রহমানের নাম ছিল না। মামলাটির বিচার চলাকালে ৬১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণের পর এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলার পুনর্তদন্তের আদেশ হয়। পুনর্তদন্ত শেষে তদন্ত কর্মকর্তা আবদুল কাহ্্হার আখন্দের দাখিল করা সম্পূরক অভিযোগপত্রে তারেক রহমানকে সম্পৃক্ত করা হয়। যেখানে বলা হয়, ২১ আগস্ট হামলাকারীদের ঘটনা বাস্তবায়নে সব ধরনের প্রশাসনিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন তারেক রহমান। আইনজীবী যুক্তিতর্কে দাবি করেন, ওই সময় তারেক রহমান বিএনপি ও চারদলীয় জোট সরকারের দায়িত্বশীল পর্যায়ের কেউ ছিলেন না। উদ্দেশ্যমূলকভাবে এ মামলায় তারেক রহমানকে জড়ানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, কয়েকজন সাক্ষীর বক্তব্যে হাওয়া ভবনে বসে ষড়যন্ত্র হয়েছে বলেও উঠে এসেছে। ওই হাওয়া ভবন তারেক রহমানের কার্যালয় ছিল না। তখন হাওয়া ভবন বিএনপির রাজনৈতিক কার্যালয় ছিল। যুক্তিতর্কে তিনি বলেন, পুনর্তদন্তে যেসব সাক্ষীকে নতুনভাবে যুক্ত করা হয়েছে, তারা প্রথমে কোথায় ছিলেন? প্রথম দিকে তারা কেন সামনে আসেননি। এখন তো বলতে হচ্ছে তারা হায়ার ইনটারেস্ট্রেড পারসন। বেলা আড়াইটার দিকে তারেক রহমানের পক্ষে যুক্তিতর্ক অসমাপ্ত অবস্থায় মামলার কার্যক্রম আজ পর্যন্ত মুলতবি করা হয়। এর আগে দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে মামলার কার্যক্রম শুরু করেন বিচারক। এর আগে ১ জানুয়ারি রাষ্ট্রপক্ষে প্রধান কৌঁসুলি সৈয়দ রেজাউর রহমান ২৫ কার্যদিবস যুক্তি উপস্থাপন শেষে তারেক রহমানসহ সব আসামির সর্বোচ্চ সাজা চেয়ে তার বক্তব্য শেষ করেন। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সন্ত্রাসবিরোধী জনসভায় ভয়াবহ গেনেড হামলা চালানো হয়। এই নির্মম হামলায় আওয়ামী লীগের তৎকালীন মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সহধর্মিণী আইভি রহমানসহ ২৪ জন প্রাণ হারান। অল্পের জন্য বেঁচে যান বতর্মান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। এ হামলায় শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হন। হামলার ঘটনায় মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক ফারুক হোসেন, আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল জলিল ও সাবের হোসেন চৌধুরী বাদী হয়ে মতিঝিল থানায় পৃথক দুটি মামলা করেন। ২১ আগস্টের ওই নৃশংস হামলায় পৃথক দুটি মামলায় মোট আসামি ৫২ জন। এর মধ্যে তিনজন জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নান ও শরীফ সাইফুল আলম বিপুলের অন্য মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় এ মামলা থেকে তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তারেক রহমান, বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরী, শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদ, মেজর জেনারেল (এলপিআর) এ টি এম আমিন, লে. কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দারসহ ১৮ জন এখনো পলাতক।

সর্বশেষ খবর