সোমবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা
ডেটলাইন ৮ ফেব্রুয়ারি

পাড়া-মহল্লায় থাকবে আওয়ামী লীগ জ্বালাও পোড়াওয়ে জিরো টলারেন্স

রফিকুল ইসলাম রনি

পাড়া-মহল্লায় থাকবে আওয়ামী লীগ জ্বালাও পোড়াওয়ে জিরো টলারেন্স

আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায় উপলক্ষে বিরোধী দল বিএনপি রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটাতে পারে বলে আশঙ্কা করছে আওয়ামী লীগ। তবে পরিস্থিতি মেকাবিলায় ওইদিন সারা দেশে পাড়া-মহল্লায় সতর্ক থাকবে দলটি।

আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, রায়কে ঘিরে বিএনপি মাঠে নামার চেষ্টা করতে পারে। কিন্তু তাদের ‘গর্ত থেকে বের হয়ে’ মাঠে নামার সুযোগ দেওয়া হবে না। কোনো ধরনের সন্ত্রাস-নৈরাজ্যের পথে হাঁটলে মাঠেই তাদের মোকাবিলা করা হবে। পাশাপাশি ‘জ্বালাও-পোড়াও’য়ের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে থাকবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত রাজপথ দখলে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ। কোনো রাজনৈতিক দলকে বিশৃঙ্খলা করার সুযোগ দেবে না দলটি। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রায়কে ঘিরে সম্ভাব্য অরাজকতা মোকাবিলায় ওই দিন সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় সতর্ক পাহারায় থাকবে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। এ জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে ঢাকাসহ প্রত্যেক জেলা নেতাদের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টরাও সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছে। বিশেষ করে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ওইদিন সকাল থেকেই রাজপথে সক্রিয় অবস্থান নেবে। কোনো অবস্থাতেই রাজপথে অরাজকতা সৃষ্টি করতে দেবে না ক্ষমতাসীনরা।

দুর্নীতি মামলায় কারও সাজা নিয়ে অরাজকতা সৃষ্টি করা হলে তা সহ্য করা হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। গতকাল সিরাজগঞ্জে জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির বিশেষ সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দীর্ঘ ২০ বছর পর বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা, জাতীয় চার নেতা হত্যা মামলার গণতান্ত্রিক উপায়ে বিচার হয়েছে। অনেকের সাজা হয়েছে। অনেকে খালাস পেয়েছেন। এ নিয়ে আওয়ামী লীগ কোনো আন্দোলনতো নয়ই, আন্দোলনের নামে রাস্তায় জ্বালাও-পোড়াও করে জনগণের জানমালের ক্ষতি করেনি। তিনি বলেন, স্বাধীন বিচারালয়ে দুর্নীতির মামলায় কারও সাজা হলে তা নিয়ে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিরা উচ্চ আদালতে যেতে পারেন। কিন্তু তা নিয়ে কোনো অরাজকতা সৃষ্টি করা হলে সহ্য করা হবে না। জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সকলেরই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত। খালেদা জিয়ার মামলার সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনো সম্পর্ক নেই। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এই মামলা করেছে। মামলায় খালেদা জিয়াকে যদি নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারেন তাহলে খালাস পাবেন। আর না যদি দোষী হন—তাহলে উচ্চতর আদালতে যেতে পারেন। কিন্তু রায়কে কেন্দ্র করে বিএনপি নেতারা যেসব কথাবার্তা বলছেন, তা উসকানিমূলক ও বিভ্রান্তিকর। রায়কে ঘিরে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। একই সঙ্গে সাধারণ মানুষ বিএনপির সন্ত্রাস-নৈরাজ্য রুখে দেবে।  সূত্রমতে, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ আগামী ২ ফেব্রুয়ারি বিশেষ বর্ধিত সভার আহ্বান করেছে। ওই সভায় থানা-ওয়ার্ড সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে ডাকা হয়েছে। সেদিন প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেওয়া হবে। এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম রহমতউল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কাল পরশু মহানগরের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে এবং ২ ফেব্রুয়ারি বিশেষ বর্ধিত সভা ডাকা হবে। ওই সভা থেকে নেতা-কর্মীদের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেওয়া হবে। আদালতের রায় নিয়ে কাউকে বিশৃঙ্খলা করতে দেওয়া হবে না। সকাল থেকেই রাজপথ দখলে থাকবে আওয়ামী লীগ। ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘যে কোনো অরাজকতা-নৈরাজ্য প্রতিহত করতে সব ধরনের প্রস্তুতি আছে। ওইদিন বিএনপি-জামায়াতকে রাজপথে সন্ত্রাস করতে দিব না। ৮ ফেব্রুয়ারি আমরা সকাল থেকেই রাজপথে অবস্থান নেব। যেখানেই বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস, সেখানেই প্রতিরোধ হবে।  আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, বিএনপি আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে গর্তে ঢুকে গেছেন। তাদের দলের নেত্রীর দুর্নীতির রায়কে কেন্দ্র করে গর্ত থেকে বের হয়ে আসার সুযোগ খুঁজছে তারা। কিন্তু সে সুযোগ দেওয়া হবে না। বিএনপির আন্দোলনের ডাক মানেই গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, পেট্রলবোমা, রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস। বিগত ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালের আন্দোলনের নামে তারা সারা দেশে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে, বাসে আগুন দিয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে একই পথ বেছে নিতে পারে। সেজন্য আওয়ামী লীগ সতর্ক থাকবে। পাশাপাশি যুবলীগ-ছাত্রলীগও ওইদিন রাজপথে সক্রিয় থাকবে। এরই মধ্যে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ ১০০টি এলাকা ভিত্তিক কমিটি গঠন করেছে। ওই কমিটির নেতারা ৮ ফেব্রুয়ারি ভোর থেকেই রাজপথে অবস্থান নেবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট। তিনি বলেন, ‘দক্ষিণের সব জায়গায় বিশেষ করে প্রেস ক্লাব, হাই কোর্ট, মেডিকেল এবং শাহবাগ এলাকায় আমরা সতর্ক অবস্থানে থাকব। যদি বিএনপি-জামায়াতের লোকজন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয় তাহলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলব।’ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. সাইফুর রহমান সোহাগ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ আশপাশের এলাকায় আমরা সতর্ক অবস্থানে থাকব। বিএনপির নেত্রীর রায়কে ঘিরে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করলে রাজপথেই বিএনপি-ছাত্রদলের সন্ত্রাসীদের মোকাবিলা করব।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর