সোমবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

একসঙ্গে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার অঙ্গীকার ঢাকা-জাকার্তার

♦ শেখ হাসিনা-জোকো উইদোদো বৈঠকে ৫ সমঝোতা স্মারক সই
♦ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সহযোগিতা করবে ইন্দোনেশিয়া

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

একসঙ্গে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার অঙ্গীকার ঢাকা-জাকার্তার

ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদোকে অভ্যর্থনা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

পাঁচটি সমঝোতা স্মারক ও ইন্সট্রুমেন্ট স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ ও ইন্দোনেশিয়া। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে কূটনৈতিক পত্রগুলো স্বাক্ষর হয়। এর আগে নিজেদের মধ্যে একান্তে ও দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন 

দুই নেতা। বৈঠক শেষে দেওয়া যৌথ বিবৃতিতে দ্বিপক্ষীয় কূটনৈতিক, বাণিজ্যিক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের অঙ্গীকার করে বলা হয়, ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একসঙ্গে কাজ করবে ঢাকা-জাকার্তা। এ ছাড়া বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশের প্রশংসা করে উইদোদো বলেছেন, রোহিঙ্গাদের মানবিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে ইন্দোনেশিয়ার সরকার ও জনগণ সবসময় পাশে থাকবে। দুই দিনের সফর শেষে গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকা ত্যাগ করেন প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো। এর আগে দুপুরে তিনি ঘুরে আসেন কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরগুলো।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে বাংলাদেশ সফরে আসা ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো গতকাল দিনের শুরুতে সাভারে স্মৃতিসৌধে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি এবং ধানমণ্ডিতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে গিয়ে জাতির পিতার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানান। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয়ে যান ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট। একান্তে কথা বলেন দুই নেতা। পরে বসেন দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে। সফর ইস্যুতে ১৯ দফার যৌথ বিবৃতিতে নিজেদের মধ্যে আলোচনায় দুই নেতা বাংলাদেশের জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান ও ইন্দোনেশিয়ার স্থপতি প্রেসিডেন্ট সুকর্নের জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে যৌথ ভূমিকার প্রশংসা করেন। সেই সঙ্গে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে ইন্দোনেশিয়ার সহযোগিতা ও ১৯৭২-এর শুরুতে বাংলাদেশকে দেওয়া স্বীকৃতির জন্য আরেক দফা ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার প্রশংসা করে প্রেসিডেন্ট উইদোদো বলেন, ‘আমি আত্মবিশ্বাসী যে, শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে।’ বাংলাদেশ ও ইন্দোনেশিয়ার বেসরকারি পর্যায়ে বাণিজ্য-বিনিয়োগ বাড়াতে নতুন নতুন সুযোগ তৈরির বিষয়ে একমত হন দুই নেতা। বাণিজ্য, বিনিয়োগ বাড়াতে এবং আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে আসিয়ান দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদার করতে শেখ হাসিনা তার আগ্রহের কথা জানান। সেই সঙ্গে আসিয়ানের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রস্তাব অনুসারে ‘সেক্টরাল ডায়লগ পার্টনারশিপ’ আয়োজনে উইদোদোর সহায়তা প্রত্যাশা করেন প্রধানমন্ত্রী। জঙ্গিবাদ, সহিংস চরম পন্থা ও মৌলবাদের যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশ ও ইন্দোনেশিয়া একসঙ্গে কাজ করবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে যৌথ ইশতেহারে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে যৌথ ইশতেহারে বলা হয়, রাখাইন থেকে বাস্তুচ্যুতদের আশ্রয় দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রেসিডেন্ট উইদোদো বলেন, তাদের পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে সব ধরনের সহযোগিতা করবে ইন্দোনেশিয়া। শনিবার বিকালে সস্ত্রীক ঢাকা এসেছিলেন জোকো উইদোদো।

কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, গতকাল দুপুর পৌনে ১টায় জোকো উইদোদো বিমানে কক্সবাজার অবতরণ করেন। সেখান থেকে সরাসরি যান উখিয়ার জামতলী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। এ সময় বেশকিছু রোহিঙ্গা নারী ও শিশুর সঙ্গে আলাপ করেন তিনি। তাদের স্বাস্থ্য, চিকিৎসার খোঁজখবর নেন এবং রোহিঙ্গাদের মুখ থেকে রাখাইনে সহিংসতার বিবরণ শোনেন। ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্টের সফরসঙ্গী ছিলেন ফার্স্টলেডি ইরিয়ান জোকো উইদোদোসহ সে দেশের একাধিক মন্ত্রী। সফরকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সৈয়দ মাহমুদ আলী, জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশন, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএমের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শনকালে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেন, বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে মানবিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এ জন্য বাংলাদেশ প্রশংসা পাওয়ার দাবিদার। কারণ রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের রাখাইনে নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। ইন্দোনেশিয়া সরকার ও জনগণ রোহিঙ্গাদের যথাযথ সহযোগিতা করে যাবে এবং সব সময় রোহিঙ্গাদের পাশে থাকবে বলে জানান তিনি। এ সময় তিনি ইন্দোনেশিয়া সরকার পরিচালিত ফিল্ড হসপিটাল, শিশু শিক্ষা কেন্দ্র, বিশুদ্ধ পানীয় জলের টিউবওয়েল পরিদর্শন করেন। তিনি রোহিঙ্গা শিশুদের খেলনা সামগ্রী উপহার দেন।

যেসব চুক্তি স্বাক্ষর : বাংলাদেশ ও ইন্দোনেশিয়া বাণিজ্য, কূটনীতি, মত্স্য খাত এবং জ্বালানি ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য পাঁচটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। দুই দেশের মধ্যে অগ্রাধিকার বাণিজ্য সুবিধা সংক্রান্ত চুক্তি, দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে নিয়মিত বৈঠক আয়োজনে সমঝোতা, মত্স্য সম্পদ আহরণ সংক্রান্ত বিষয়ে যৌথ সম্মতিপত্র, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) টার্মিনালে অবকাঠামো উন্নয়ন ও এ সংক্রান্ত বিষয়ে দুটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এবং ইন্দোনেশিয়ার বাণিজ্যমন্ত্রী ইনগারটিয়াস্তো লুসিতানিয়া নিজ নিজ দেশের পক্ষে যৌথ মন্ত্রিসভা পর্যায়ের ‘অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সম্প্রসারণ’ বিষয়ক বিশেষ বাণিজ্য চুক্তি করার জন্য আলোচনা শুরুর ঘোষণায় স্বাক্ষর করেন। দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ‘ফরেন অফিস কনসালটেশন’ চালুর বিষয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী এবং ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রবিষয়ক মন্ত্রী রেটনো মারসুদি। মত্স্য এবং প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ এবং ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রবিষয়ক মন্ত্রী রেটনো মারসুদি সাগরে বেআইনিভাবে মত্স্য আহরণ বন্ধে দুই দেশের সহযোগিতা বৃদ্ধিতে একটি যৌথ ঘোষণায় স্বাক্ষর করেন। সমন্বিত গ্যাস অবকাঠামোর উন্নয়নেও ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারকে সই করেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদ এবং ইন্দোনেশিয়ার জ্বালানি বিভাগ পেরতামিনার ভাইস প্রেসিডেন্ট গিনানজার সোফিয়ান এই সমঝোতা স্মারকে সই করেন। এ ছাড়া, পেট্রোবাংলার সচিব সৈয়দ আসাদুজ্জামান এবং পেরতামিনার ভাইস প্রেসিডেন্ট উইকো মিগানতরো তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত একটি সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর