সোমবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক

মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এর ফলে স্থানীয় মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতির পাশাপাশি দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির অগ্রগতি ত্বরান্বিত হবে। গতকাল দুপুরে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ উদ্বোধন করেন। মহেশখালীর মাতারবাড়ী ও ধলঘাটা ইউনিয়নের ১৪১৪ একর জমিতে জাপান সরকারের সহযোগিতায় এবং জাপানের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগিতা সংস্থা জাইকার অর্থায়নে ৩৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে। মাতারবাড়ীর এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র হবে বাংলাদেশের অন্যতম বড় বিদ্যুৎ প্রকল্প। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঘরে ঘরে বিদ্যুতের আলো জ্বলাটা এখন শুধু সময়ের ব্যাপার। দেশের প্রায় ৯০ ভাগ মানুষই বিদ্যুৎ পেয়ে গেছেন। আর ১০ ভাগ মানুষও পাবেন। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই সরকার কাজ করে যাচ্ছে। শুধু বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ নয়, বিদ্যুতের জন্য স্টেশন, সাব স্টেশন, সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা প্রভৃতি কাজও তাঁর সরকার ব্যাপকভাবে করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, যেখানে বিদ্যুতের গ্রিড লাইন নেই, সেখানে সোলার সিস্টেম বসানো হচ্ছে। এরই মধ্যে প্রায় ৪৬ লাখ সোলার সিস্টেম বসানো হয়েছে। মানুষের এই চাহিদার সঙ্গে মিল রেখেই তার সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদন করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, দেশের বিদ্যুতের চাহিদা মেটানোর জন্য সরকার সম্ভব সব ধরনেরই পদক্ষেপ নিচ্ছে। বর্তমান সরকার দেশে ১৬ হাজার মেগাওয়াটের অধিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এই মহেশখালীতেই মানুষ আগে ঝড়-জলোচ্ছ্বাসসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হতো। প্রকৃতির খেয়ালখুশিতেই এই এলাকার মানুষের জীবন-জীবিকা চলে। তিনি বলেন, আজ এখানে বিদ্যুৎ কেন্দ্র হচ্ছে, এলএনজি টার্মিনাল করছি এবং মহেশখালী-সোনাদিয়া হয়ে ডিপ সি পোর্টও গড়ে উঠছে। তাতে একদিকে এখানকার মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আরও গতিশীলতা পাবে এবং তাদের জীবন মান বাড়বে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো কোনো এলাকায় দেখলাম দিনের পর দিন বিদ্যুৎ নেই। তখনই সিদ্ধান্ত নিলাম এটা সরকারের একার পক্ষে করা সম্ভব নয়, এখানে আমাদের বেসরকারি খাতকে উন্মুক্ত করে দিতে হবে। তিনি বলেন, তখন আমরা আইন করে বেসরকারি খাতকে উন্মুক্ত করে দিয়েছিলাম বলেই আজকে সরকারি-বেসরকারি ক্ষেত্রে নতুন নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে উঠে মানুষের জীবন-মানকে উন্নয়নের সুযোগ করে দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে নতুন কিছু করতে গেলেই বাধা আসে। অনেক ফর্মুলা আসে। অনেক তাত্ত্বিক গজিয়ে যায়, তারা নানা রকমের কথা বলে।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় বাংলাদেশে কর্মরত জাপানের নাগরিকসহ বিদেশিদের নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে সবাইকে আশ্বস্ত করে বলেন, আমি এতটুকু বলতে পারি, আমাদের তরফ থেকে তাদের নিরাপত্তা দিতে যতটুকু করার দরকার আমরা তা করে যাচ্ছি। তারা আমাদের মেহমান, তারা আমাদের উন্নয়ন সহযোগী, আমাদের দেশের উন্নতির জন্যই তারা কাজ করে যাচ্ছেন।

মাতারবাড়ীর এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা তাঁর সরকার করেছে এবং করে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ব্যাপারে কারও কোনো দ্বিধা থাকার কথা নয়। তাদের পুনর্বাসনে আমরা সব রকমের ব্যবস্থা নেব এবং এ জন্য জাপান সরকারও যথেষ্ট সহানুভূতিশীল। জমি অধিগ্রহণ করার পর যারা এখনো অর্থ পাননি, সেটাও তাঁর সরকার লক্ষ্য রাখছে। কেউ বঞ্চিত হবে না। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করছি যত দ্রুত সম্ভব তাদের নাগরিকদের তারা ফেরত নিতে পারে। তাছাড়া তাদের বসবাসের জন্য সরকার ভাষাণচরে অস্থায়ী ঘরবাড়ি এবং সাইক্লোন শেল্টার করে দিচ্ছে, বাঁধ নির্মাণ করে দিচ্ছে, যাতে পরবর্তীতে রোহিঙ্গারা চলে গেলে দেশের মানুষ তা ব্যবহার করতে পারে। জাপানের প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপদেষ্টা কেনতারো সনুউরা এবং জাইকার জ্যেষ্ঠ সভাপতি ইনিচি ইয়ামাদাস গণভবন প্রান্ত থেকে এবং বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূত হিরোইসু ইজুমি মাতারবাড়ীর অনুষ্ঠানস্থল থেকে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. নজিবুর রহমান ভিডিও কনফারেন্সটি সঞ্চালনা করেন এবং বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব আহমেদ কায়কাউস প্রকল্পের ওপর একটি পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপন করেন। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই ইলাহী চৌধুরী এবং ড. গওহর রিজভী, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক মো. আবুল কালাম আজাদ এবং সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

প্রকল্পটি উদ্বোধনের পরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন জাপানের রাষ্ট্রদূত হিরোয়াসু ইউজুমি, সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, অধিগ্রহণকৃত জমির মালিক মাস্টার রুহুল আমিন, স্কুলছাত্রী তানজিলা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর