বুধবার, ৩১ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

সিলেটে ভোটের অঙ্গীকার করালেন শেখ হাসিনা

♦ বিএনপি পেট্রলবোমায় মানুষ মেরেছে
♦ তারা পারে দেশকে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন করতে
♦খাদ্যের জন্য বাংলাদেশকে কারও কাছে ভিক্ষা চাইতে হবে না

রফিকুল ইসলাম রনি ও শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট থেকে

সিলেটে ভোটের অঙ্গীকার করালেন শেখ হাসিনা

সিলেট আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে গতকাল বিশাল জনসভায় বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা —বাংলাদেশ প্রতিদিন

সিলেটের বিশাল জনসভায় আগামী সংসদ নির্বাচনে দেশবাসীর কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চেয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একপর্যায়ে তিনি হাত তুলে ভোটের অঙ্গীকারের আহ্বান জানালে জনসভায় উপস্থিত লাখো মানুষ হাত তুলে নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার ওয়াদা করেন। গতকাল বিকালে সিলেট আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল জনসভায় উপস্থিত জনতা প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ ওয়াদা করেন। জনসভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, নৌকা স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। নৌকা প্রতীকের দল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশের উন্নয়ন হয়। দেশ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়। আর বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এলে দেশ পিছিয়ে যায়। নির্বাচনের বছরের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী গতকাল সিলেটে তিন আউলিয়ার মাজার জিয়ারত ও জনসভার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করলেন। সেখানে তিনি ৩৫টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। জনসভায় ৩৯ মিনিটের বক্তৃতায় শেখ হাসিনা দলের নেতা আবদুস সামাদ আজাদ, শাহ এ এম এস কিবরিয়া, হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী, দেওয়ান ফরিদ গাজী, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, আহসান উল্লাহ মাস্টারসহ প্রয়াত জাতীয় নেতাদের স্মরণ করেন। সিলেট পৌঁছেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হযরত শাহজালাল (রহ.), হযরত শাহপরান (রহ.) ও গাজী বোরহান উদ্দিনের (রহ.) মাজার জিয়ারত করেন।

জনসভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে জয়লাভ করে চার বছর পূর্ণ করে এখন পাঁচ বছরে পদার্পণ করেছি। আগামী ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচন সামনে রেখে পুণ্যভূমি সিলেট থেকে আমরা নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছি। বিগত নির্বাচনে সবাই নৌকায় ভোট দিয়েছিলেন। তাই বাংলার সর্বত্র উন্নয়নের ছোঁঁয়া লেগেছে।’ সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘সিলেটের উন্নয়নের জন্য আমরা ব্যাপক কর্মসূচি নিয়েছি। আজ একযোগে ৩৫টি প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ জনগণের জীবনমান উন্নয়ন করে।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি সিলেটসহ সারা দেশে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। ২০০৪ সালে হযরত শাহজালালের মাজারে গ্রেনেড হামলা হয়। পরপর দুবার গ্রেনেড হামলায় নয়জন মৃত্যুবরণ করেন। ৭ আগস্ট সাবেক মেয়র কামরানের ওপর আক্রমণ হয়। সেই আক্রমণে আওয়ামী লীগ নেতা ইবরাহিম মৃত্যুবরণ করেন। মহিলা আওয়ামী লীগের ওপর বোমা হামলা হয়।’ তিনি বলেন, ‘২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সারা দেশে বিএনপির হত্যাযজ্ঞ চলে। তাদের হাত থেকে মা-বোনেরা রেহাই পায়নি। অপারেশন ক্লিনহার্টের নামে আমাদের নেতা-কর্মীদের হত্যা করা হয়। গ্রেফতার করে নির্যাতন চালানো হয়, বহু নেতাকে গুম করা হয়।’ তিনি বলেন, ‘৫ জানুয়ারি নির্বাচনে অংশ না নিয়ে বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাস-নাশকতা চালায়। সিলেটে শহীদ মিনারে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। আমরা গাছ লাগাই, তারা গাছ কাটে। আমরা রাস্তা বানাই, তারা রাস্তা কাটে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি ধ্বংস করতে জানে, সৃষ্টি করতে জানে না। বিএনপি পেট্রলবোমায় মানুষ মেরেছে। তারা প্রায় ৫০০ মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে। প্রায় ৩ হাজার মানুষ তাদের আগুনসন্ত্রাসের শিকার হয়ে এখন ধুঁকছে। তারা হাজার হাজার গাড়ি, সরকারি অফিস জ্বালিয়ে দিয়েছে। এ রকম ধ্বংসাত্মক আন্দোলন আমরা দেখিনি।’ তিনি বলেন, ‘আন্দোলন হবে মানুষের জন্য। কিন্তু বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন ধ্বংস করার জন্য। তারা পারে দেশকে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন করতে।’

প্রধানমন্ত্রী সিলেট-ঢাকা মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, ‘দেশে বিদ্যুতের হাহাকার ছিল। ২০০৯ সালে আমরা ক্ষমতায় এসে পেয়েছিলাম মাত্র ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। আজ আমরা দেশে ১৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দিচ্ছি। আমরা কম্পিউটারের ওপর থেকে ট্যাক্স প্রত্যাহার করে তা সহজলভ্য করেছি। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে আমরা শিক্ষার হার ৬৫ দশমিক ৫ ভাগে উন্নীত করেছিলাম। বিএনপি ক্ষমতায় এসে তা কমিয়ে ৪৫ ভাগে নিয়ে আসে। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে আমরা এ হারকে ৭২ ভাগের ওপরে নিয়ে গেছি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতিটি এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয় করে দিচ্ছি। টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন ধরনের বিশ্ববিদ্যালয় করে শিক্ষাকে বহুমুখী করে দিচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘সিলেটের চা উৎপাদন বৃদ্ধির ব্যবস্থা করছি। চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন ও তাদের সন্তানদের শিক্ষার ব্যবস্থা করছি। সিলেট থেকে যাতে চায়ের নিলাম হয়, তার জন্য নিলাম কেন্দ্র করছি। দেশের প্রত্যেক এলাকায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করছি। সিলেটে শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল করছি। ঘরে বসে প্রবাসে থাকা স্বজনদের সঙ্গে কথা বলার প্রযুক্তিগত সুযোগ করে দিয়েছি।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘৮ হাজার ৫০০ পোস্ট অফিসকে আমরা ডিজিটাল সেন্টারে রূপান্তর করেছি। ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে বিনা পয়সায় স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছি, ওষুধ দিচ্ছি। সিলেটে আমরা একটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করে দিচ্ছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রবাসীদের টাকায় আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি পায়। তাদের জন্য তিনটি ব্যাংক স্থাপনের অনুমতি হয়ে গেছে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না এলে দেশে এত উন্নয়ন হতো না। নৌকায় ভোট দিয়ে মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছে। নৌকায় ভোট দিয়ে দেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা কথা দিয়েছিলাম যুদ্ধাপরাধের বিচার করব। তা করেছি। জাতির জনকের খুনিদের বিচার করেছি। বাংলার মাটিতে জঙ্গিবাদের স্থান হবে না। প্রত্যেক মা, বোন, শিক্ষক, সচেতন নাগরিক, সব অভিভাবক নিজেদের ছেলেমেয়েদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। তারা কোথায় যায়, কার সঙ্গে মেশে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী বেশিদিন অনুপস্থিত কিনা তা খেয়াল রাখতে হবে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে। ইসলাম জঙ্গিবাদ সমর্থন করে না।’

সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান লুত্ফুর রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, অর্থ প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান, আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, জাতিসংঘে বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি ড. এ কে মোমেন, কৃষক লীগ সভাপতি মোতাহার হোসেন মোল্লা, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথ, যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক নাজমা আকতার প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর