সোমবার, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা
রায় ঘিরে যত উত্তেজনা

নির্বাচনের আগে সব শক্তি ক্ষয় করবে না বিএনপি

মাহমুদ আজহার

একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে এখনই সব শক্তি ক্ষয় করবে না বিএনপি। ৮ ফেব্রুয়ারি রায় যা-ই হোক, গণতান্ত্রিক পন্থায় দেশব্যাপী গণজমায়েত করতে চায় দলটি। সেক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার শিকার হলে পরিস্থিতি বুঝে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাই ভাবছেন দলের নীতিনির্ধারকেরা। তৃণমূলের নেতাদেরও সর্বোচ্চ ধৈর্য দেখিয়ে রাজপথে থাকার বার্তা দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।

বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা বলছেন, নির্বাচনের আগেভাগেই বিএনপির সব শক্তি ক্ষয় করাতে চায় সরকার। এ জন্য জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায়কে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দিয়ে ধরপাকড় করিয়ে বিএনপিতে উত্তেজনা সৃষ্টি করা হচ্ছে। শ্রাবণের স্রোতধারার মতো দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। তবে গ্রেফতার-নির্যাতন যতই হোক, সরকারের ফাঁদে পা দেবে না বিএনপি। ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে ও পরে পেট্রলবোমা নিয়ে যে রাজনৈতিক ব্লেইম-গেইম ছিল তা থেকেও নেতা-কর্মীদের দূরে থাকতে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়ে গতকাল দলের নির্বাহী কমিটির রুদ্ধদ্বার সভায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া মাঠপর্যায়ের নেতাদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি দেশ ও জনগণের পাশে আছি, থাকব। তাদের জন্যই আমার রাজনীতি। আল্লাহ নিশ্চয় আমাদের জন্য সুখবর রেখেছেন। আপনারা কেউ কখনোই হঠকারী সিদ্ধান্ত নেবেন না। শান্তিপূর্ণভাবে কে কত কর্মসূচি পালন করতে পারেন তার ওপর দলে আপনাদের ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে।’ এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ‘বিগত সময়েও বিএনপি সব সময়ই সংযম প্রদর্শন করে এসেছে। রায়কে ঘিরেও বিএনপির অবস্থান একই থাকবে। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আদালতে যাব। এটাই দলীয় সিদ্ধান্ত। বিএনপি কখনোই সহিংসতাকে সমর্থন করে না।’

এদিকে রায়ের আগমুহূর্তে আজ সিলেটে হজরত শাহপরান (রহ.)-এর মাজার জিয়ারত করতে যাচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। সকাল ১০টায় তিনি সড়কযোগে সিলেটে যাচ্ছেন। এ নিয়ে উজ্জীবিত সিলেট বিএনপির নেতারা। ২৪ ঘণ্টার নোটিসে নেতা-কর্মীরা বিএনপি চেয়ারপারসনকে বরণ করতে প্রস্তুত। আরিফুল হক লন্ডনের কর্মসূচি সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফিরে এসেছেন। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহানের নেতৃত্বে একটি অগ্রবর্তীদল গতকাল সিলেটে পৌঁছেছেন। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ‘২৪ ঘণ্টার নোটিসে শাহজালালের পুণ্যভূমি সিলেটের জনগণ বিএনপি চেয়ারপারসনকে অভূতপূর্ণ সম্মান ও শ্রদ্ধা জানাতে অপেক্ষায় আছে।’

জানা যায়, রায়কে ঘিরে বিএনপি প্রধান এরই মধ্যে দল এবং জোট ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। এর মধ্যে কূটনীতিকসহ সব প্রতিনিধিরাই বেগম জিয়াকে ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার পরামর্শ দেন। কোনোভাবেই যেন নেতা-কর্মীরা উত্তেজিত হয়ে সহিংসতায় জড়িয়ে না পড়েন সে ব্যাপারেও মতামত দেন সংশ্লিষ্টরা। সর্বশেষ গতকাল রাতে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও নেতারা একমত হন, রায়ের দিনসহ আগে ও পরে বিএনপি সর্বোচ্চ ধৈর্যধারণ করবে। আগবাড়িয়ে সহিংসতায় জড়াবে না। তবে ক্ষমতাসীন দল বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি গায়েপড়ে হামলা চালায় তখন পরিস্থিতি বুঝে কর্মকাণ্ড চালানোর বার্তা দেওয়া হয়েছে মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীদের।

দলীয় সূত্র জানায়, ৮ ফেব্রুয়ারি রায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গেলেও বিএনপি আগেভাগে কোনো সহিংস কর্মসূচি দেবে না। সরকার কী কৌশল নেয়—তা দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সরকারের ফাঁদে পা দিলে ভবিষ্যৎ নির্বাচনে অংশ নেওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব না-ও হতে পারে বলে মনে করে দলের হাইকমান্ড। তাই হঠকারিতা পরিহার করার জন্য নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন বেগম জিয়া।

বিএনপি নেতারা বলছেন, সরকার কৌশলে বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রাখার চক্রান্ত করছে। বিএনপি যেন নির্বাচন বর্জনের দিকে যায়, এমন উত্তেজনা ছড়ানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু ২০১৪ সালের মতো কোনো ভুল করতে রাজি নন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। যত প্রতিকূল পরিস্থিতিই হোক না কেন, নির্বাচনে যাওয়ার উপায় খুঁজবে দলটি। তবে বিএনপি চেয়ারপারসনকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা হলে প্রয়োজনে আন্দোলনের মাধ্যমে তাকে নিয়েই নির্বাচনে যাবে দল। এ ব্যাপারে নির্বাহী কমিটির সভায় মাঠপর্যায়ের নেতারা শপথও করেছেন।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘বিএনপি সরকারের ফাঁদে পা দেবে না। তারা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নির্বাচন ও রাজনীতির বাইরে রাখতে চায়। কিন্তু তাদের এই অপতৎপরতা কখনোই সফল হবে না। বিএনপি নেতা-কর্মীরা দলের শীর্ষ দুই নেতাকে সঙ্গে নিয়েই নির্বাচনে যাবে।’

জানা যায়, বিএনপি চেয়ারপারসনের মামলার রায় নিয়ে রাজপথে গণজমায়েতের পাশাপাশি সর্বোচ্চ আইনি লড়াইয়ে থাকবে বিএনপি। দলের আইনজীবী নেতারা বলছেন, নিম্ন আদালতের রায় নেতিবাচক হলেও উচ্চ আদালতে ওই মামলার রায়ের কার্যক্রম স্থগিত ও জামিন নেওয়া সম্ভব। দ্রুততম সময়ের মধ্যেই উচ্চ আদালতে জামিনের আবেদন করা হবে। তারা আশা করছেন, এ মামলায় জামিন পাওয়া যাবে। এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, ‘রায় নিয়ে রাজপথের পাশাপাশি আইনি লড়াইও চলবে।’

এদিকে বিএনপির কেন্দ্র থেকে তৃণমূলে একটি খবর চাউর হচ্ছে, বেগম খালেদা জিয়া জেলে গেলে দলে ভাঙন সৃষ্টি হতে পারে। এ নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যেও সন্দেহ অবিশ্বাস বেড়ে গেছে। তবে আগেভাগেই তার লাগাম টেনে ধরার চেষ্টা করেছেন বেগম জিয়া। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে এ নিয়েও তিনি কথা বলেন। সর্বশেষ নির্বাহী কমিটির সভায় তৃণমূলের নেতারা বেগম জিয়াকে জানান, যারা এবার বেইমানি করবে, তাদের ম্যাডাম ক্ষমা করে দিলেও তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা ভবিষ্যতে আর ক্ষমা করবে না। এ প্রসঙ্গে নির্বাহী কমিটির সভায় বিএনপি প্রধান সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, ‘আমি যেখানেই থাকি, আপনাদের পাশে আছি। আপনারা ঐক্যবদ্ধ থাকবেন। দল ভাঙার চেষ্টা করবেন না কেউ। এবার আর ক্ষমা করা হবে না।’

সর্বশেষ খবর