সোমবার, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

মুমিনুল ম্যাজিকে স্বস্তির ড্র

মেজবাহ্-উল-হক, চট্টগ্রাম থেকে

মুমিনুল ম্যাজিকে স্বস্তির ড্র

চট্টগ্রাম টেস্টের মহানায়ক মুমিনুল সেঞ্চুরির পর —এএফপি

টি-ব্রেকের পর পরই আলোচনা করে ড্র মেনে নেন দুই দলের অধিনায়ক। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের কাছে এই ড্র জয়ের সমান। কিন্তু দিনেশ চন্ডিমালের জন্য বড় কষ্টের। গতকাল ছিল শ্রীলঙ্কার স্বাধীনতা দিবস। এমন মহান ক্ষণে দেশবাসীকে ‘জয়’ উপহার দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তার আশায় গুড়েবালি। অন্যদিকে মুমিনুল হক এবং লিটন কুমার দাসের অনবদ্য ব্যাটিংয়ে প্রায়  হেরে যাওয়া ম্যাচে অসাধারণ এক ড্র পেল বাংলাদেশ। আগের ৮১ রানে তিন উইকেট হারানোর পর ইনিংস হারের শঙ্কায় ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু লিটন দাস ও মুমিনুলের ১৮০ রানের জুটি টাইগারদের নিরাপদে পৌঁছে দেয়। ম্যাচ শেষে ক্যাপ্টেন মাহমুদুল্লাহ বলেন, ‘আমাদের স্কিলের ওপর আমাদের বিশ্বাস ছিল। আমাদের শুধু একটা জুটির দরকার ছিল। যেটা মুমিনুল ও লিটন করেছে।’ ড্র-করা এই ম্যাচে বড় অর্জন দুই ইনিংসে মুমিনুলের সেঞ্চুরি। প্রথম ইনিংসে ১৭৬ রানের ইনিংসের পর গতকাল করেছেন ১০৫ রান। বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে এক টেস্টের দুই ইনিংসে দুই সেঞ্চুরি করার বিরল রেকর্ড গড়লেন মুমিনুল। এই কীর্তিতে ডন ব্রাডম্যান, ইয়ান চ্যাপেল,  গ্রেগ চ্যাপেল, গর্ডন গ্রিনিজ, অ্যালান বোর্ডার, ব্রায়ান লারার কিংবদন্তি ক্রিকেটারদের এক তালিকায় নিজের নাম লিখলেন মুমিনুল। তবে অতৃপ্তি বুঝি এখানেই যে লড়াই করেও এই ম্যাচে মাত্র ৬ রানের জন্য নিজের প্রথম সেঞ্চুরি মিস করেছেন লিটন দাস। আউট হয়েছেন ৯৪ রানে। হয়তো ক্রিকেট বিধাতাই চাননি  যে মুমিনুলের দিনে লিটনের সেঞ্চুরি হোক! তা হলে কেন এমন চমৎকার ব্যাটিং পরেও ওই রকম একটি শট খেলতে যাবেন লিটন। ৯৪ রানে দাঁড়িয়ে কেউ এমন পাগলামি করে ক্যাচ তুলে  দেয়! হয়তো আরও বড় কিছুর জন্যই লিটনকে কাল সেঞ্চুরি থেকে বঞ্চিত করেছেন ক্রিকেট-বিধাতা! ঠিক যেভাবে আগের ইনিংসে ডাবল সেঞ্চুরি থেকে বঞ্চিত করেছিলেন মুমিনুলকে। অসাধারণ ব্যাটিং করার পরও ‘প্রিন্স অব কক্সবাজার’ আউট হয়েছিলেন ১৭৬ রানে। সেই মুমিনুলই কিনা দ্বিতীয় ইনিংসে সেঞ্চুরি করলেন।  সেটা নিঃসন্দেহে ডাবল সেঞ্চুরির চেয়ে বড় অর্জন। কেন না বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে এক টেস্টে জোড়া সেঞ্চুরির ইতিহাস গড়লেন। ডাবল সেঞ্চুরি তো এর আগেও মুশফিক, তামিম, সাকিব করেছেন কিন্তু কাল মুমিনুল যা করলেন তা মাইলফলক হয়ে থাকবে যুগ যুগ ধরে। গতকাল আরেকটি রেকর্ড গড়েছেন লিটল মাস্টার। সেটি হচ্ছে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে এক টেস্টে সবচেয়ে বেশি রান। এর আগে এই রেকর্ডটি ছিল তামিমের। খুলনা টেস্টে ২৩১ রান করেছিলেন। আর এই ম্যাচে মুমিনুল করলেন ২৮১ রান। সেঞ্চুরি মিস হলেও লিটন দাসের এই ইনিংসটা খুবই দরকার ছিল। সেটা যেমন তার নিজের জন্য তার চেয়ে অনেক বেশি প্রয়োজন ছিল বাংলাদেশ দলের জন্য। আগের দিন ৮১ রানে তামিম, ইমরুল ও মুশফিকের আউটের পর তো ম্যাচ বাঁচানোর সম্ভাবনাই ফিকে গিয়েছিল। জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছিল  শেষ দিনে মধ্যাহ্ন বিরতি পর্যন্ত চলবে কিনা! কিন্তু সকালেই প্রতিরোধ গড়ে তুললেন লিটন-মুমিনুল মিলে। মধ্যাহ্ন বিরতির আগে তারা কোনো উইকেটই পড়তে দেননি। দিনের প্রথম সেশনে বিনা উইকেটে আসে ১০৬ রান। ইঙ্গিতটা তখনই পাওয়া গিয়েছিল-‘আজ কিছু হতে চলেছে’!

তারপর লড়াকু এই ড্র! এই রোমাঞ্চকর ম্যাচ দেখে নিশ্চয় অভীভূত বাংলার ক্রিকেটপ্রেমী। তবে সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছেন নিশ্চয় মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। একে অধিনায়ক হিসেবে প্রথম ম্যাচেই এমন  রোমাঞ্চকর ড্র, তার ওপর গতকাল ছিল এই তারকার ৩২তম জন্মদিন।

সর্বশেষ খবর