সোমবার, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

মেয়াদ ও ব্যয় বাড়ছে ১০০ ফুট খাল খননে

থাকছে না সার্ভিস রোড

নিজস্ব প্রতিবেদক

মেয়াদ ও ব্যয় বাড়ছে রাজধানীর কুড়িল-বালু নদী পর্যন্ত ১০০ ফুট খাল খনন প্রকল্পের। এ বছরের আগস্টে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও পরিকল্পনায় ভিন্নতা আনায় দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হচ্ছে এ প্রকল্পে। নতুন সংযোজিত পরিকল্পনায় থাকছে না সাধারণ মানুষের চলাচলের জন্য দুই পাশের সার্ভিস রোড। ডিটেইল এরিয়া প্ল্যানের (ড্যাপ) সঙ্গে সংযুক্ত করে সার্ভিস রোড নিয়ে যাওয়া হচ্ছে মূল সড়কের সঙ্গে। এদিকে খাল খনন শুরু হলেও মামলার কারণে ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণের অর্থ দিতে দেরি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা।

প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা গতকাল রাজধানীর পূর্বাচল সেক্টর-১৪ আর্মি ক্যাম্পে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রকল্প বিষয়ে এসব তথ্য উপস্থাপন করেন। এ সময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান (রাজউক) আবদুর রহমান, সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইফতেখার আনিস, সেনাবাহিনীর দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকল্প পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল নিজাম উদ্দিন আহমদ, রাজউকের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকল্প পরিচালক মো. নুরুল ইসলাম এবং ঢাকা জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শরীফ রায়হান কবির। প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত বছর ৫ হাজার ২৮৬ দশমিক ৯১ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ধারণ করে শুরু হয়েছিল রাজধানীর কুড়িল-বালু নদী পর্যন্ত ১০০ ফুট খাল খনন প্রকল্প। এ বছর শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ড্যাপের সঙ্গে মিলিয়ে নতুন পরিকল্পনা সংযোজন করায় ২০২১ সালে গিয়ে শেষ হবে এ প্রকল্প। প্রকল্পের অধীনে ১৩ দশমিক ৬৪৩ কিলোমিটার খাল খনন, ২৪ দশমিক ৬ কিলোমিটার সার্ভিস রোড, ৩৭ দশমিক ৬ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে, আটটি এট গ্রেড ইন্টারসেকশন, একটি সেপারেটর ইন্টারসেকশন, খালের ওপর চারটি আর্চব্রিজ, চারটি এক্সপ্রেসওয়ে ফুটওভার ব্রিজ, ১২ দশমিক ৩ কিলোমিটার আট লেন এক্সপ্রেসওয়ে, একটি পাম্প হাউস, ২ হাজার ২৭০টি স্ট্রিট লাইট, ৭ হাজার ৮০০ লিনিয়ার স্ট্রম সুয়ারেজ লাইন, বোয়ালিয়া ও এডি-৮ খালের উভয় পাশে ওয়াকওয়েসহ খাল খনন ও বাঁধ নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৩৮৪ দশমিক ১৮ কোটি টাকা। কিন্তু জমি অধিগ্রহণ করে খাল খনন শুরু হলেও ক্ষতিপূরণের টাকা বুঝে পাননি ক্ষতিগ্রস্তরা। এর মধ্যে যারা টাকা পেয়েছেন তাদের বেশি দেওয়া হয়েছে দাবি করে এখন ফেরত দিতে বলা হচ্ছে ওই অর্থ। এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শরীফ রায়হান কবির বলেন, ‘মামলার কারণে এ টাকা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের হাতে পৌঁছাতে দেরি হয়েছে। ১ হাজার ২০০ ক্ষতিগ্রস্ত ভূমিমালিকের মধ্যে ৬০০ জনকে টাকা বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাকি ৬০০ জন আবেদন করেছেন তবে একাধিক মামলা ও বিভিন্ন জটিলতায় তাদের এ অর্থ আটকে আছে। আর বাকি ৫০ জন এখনো ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদন করেননি। অনেকের হিসাবে গরমিল থাকায় টাকা বেশি দেওয়া হয়েছে। তাই নিয়মমাফিক তা ফেরত চাওয়া হয়েছে। আমরা নিয়মের বাইরে কিছু করব না।’ নতুন সংযোজিত পরিকল্পনায় দেখা যায়, খালের দুই পাশে থাকছে না সার্ভিস রোড। খাল খনন বিষয়ে বুয়েটের প্রণীত নকশায় জনসাধারণের যাতায়াতের সুবিধার্থে দুই পাশে সার্ভিস রোড রাখা হয়েছিল। এবার সংযোজিত পরিকল্পনায় দুই পাশে বাদ দিয়ে মূল রাস্তার সঙ্গে নিয়ে আসা হয়েছে সার্ভিস রোড। ফলে ৩০০ ফুট রাস্তার পার্শ্ববর্তী স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতালসহ গড়ে ওঠা অসংখ্য প্রতিষ্ঠানের লাখো মানুষকে পড়তে হবে ভোগান্তিতে। একই সঙ্গে পুরনো নকশা থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে ১৩টি সেতু ও চারটি ইউলুপ। এর ফলে এতটা দীর্ঘ পথে এপার থেকে ওপারে যেতে পারবে না মানুষ। লাখো মানুষের যাতায়াতের কথা মাথায় না রেখেই চূড়ান্ত করা হচ্ছে নকশা। যেখানে রাজধানীকে প্রসারিত করতে পূর্বাচলকে উন্নত করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে, ঠিক সেই সময় নকশা পাল্টানোর কারণে জনভোগান্তির আশঙ্কা করছেন বাসিন্দারা।  এ ছাড়া ড্যাপের রাস্তার সঙ্গে মিলিয়ে এ প্রকল্পের কাজ হাতে নেওয়ায় আরও জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন পড়বে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়া ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মহাপরিকল্পনার সঙ্গে মিলিয়ে এ প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নেওয়া হবে বলে জানান তারা। তারা আরও জানান, ডিএনসিসির ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকার এই প্রকল্পের সঙ্গে মিলিয়ে পূর্ব-পশ্চিম সংযোগ সড়কের কাজ সম্পন্ন হবে। আবদুল্লাহপুর থেকে শুরু হয়ে পুলিশ হাউজিং হয়ে বনশ্রী দিয়ে চট্টগ্রাম সড়কে এটি মিলে যাবে। উত্তর-দক্ষিণের সংযোগ সড়কগুলো যোগ করে তিনটি রাস্তা হয়ে মিলে যাবে মূল রাস্তায়। ফলে আন্তসংযোগে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ খুব সহজ বলে সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন বক্তারা। ড্যাপের দ্বিতীয় পর্যায়ের পরিকল্পনাকে প্রথম পর্যায়ে নিয়ে জনসাধারণের সুবিধার্থে একটা মহাপরিকল্পনা নিয়ে কাজ এগোচ্ছে বলে জানান প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা। এ ব্যাপারে প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত ২৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইফতেখার আনিস বলেন, ‘ড্যাপের পরিকল্পনা এই ১০০ ফুট খাল খনন প্রকল্পের সঙ্গে বাস্তবায়িত হলে এলাকাটি গড়ে উঠবে সুষ্ঠু পরিকল্পনামাফিক। কিন্তু ড্যাপের সঙ্গে একীভূত হয়ে কাজ করায় নতুন করে ভূমি অধিগ্রহণের দরকার পড়বে। ফলে প্রকল্পটি ২০২১ সাল নাগাদ শেষ হবে। ভূমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন না পড়লে ২০১৯ সালে এই প্রকল্প শেষ করতে পারতাম।’ এ ব্যাপারে সর্বশেষ জানা গেছে, এ মাসের ১৮ তারিখে স্টেকহোল্ডারদের সমন্বয়ে যৌথ সভা আহ্বান করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর