শনিবার, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

জামিন না হলে কর্মসূচি, থাকছে ভোট প্রস্তুতি, শক্তি ক্ষয় নয়

মাহমুদ আজহার

জামিন না হলে কর্মসূচি, থাকছে ভোট প্রস্তুতি, শক্তি ক্ষয় নয়

দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর ‘ধৈর্য ও সহনশীলতার’ রাজনীতির নতুন কৌশলে এগোচ্ছে বিএনপি। দলটি মনে করছে, বেগম জিয়া ও বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রাখতেই সরকার নানামুখী পদক্ষেপ নিচ্ছে। কঠোর আন্দোলন কর্মসূচিতে বিএনপিকে ব্যস্ত রেখে ‘সব শক্তি’ এখনই ক্ষয় করতে চায় ক্ষমতাসীনরা। কিন্তু বিএনপি সরকারের ফাঁদে পা দেবে না। শত প্রতিকূলতার মধ্যেও একাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে চায় দলটি। বেগম জিয়াকে সঙ্গে নিয়েই তাদের নির্বাচনে যাওয়ার টার্গেট। সেই লক্ষ্যে বিএনপি-প্রধানের নির্দেশনায় আপাতত কোনো ‘কঠোর’ কর্মসূচি নয়। শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক বিক্ষোভ কর্মসূচিতেই ব্যস্ত থাকবে আজও। আগামী রবি ও সোমবার পর্যন্ত দলটি দেখবে জামিন পান কিনা। কোনো কারণে জামিনে দীর্ঘসূত্রতা হলে নতুন কর্মসূচিও ঘোষণা করতে পারে বিএনপি। সে ক্ষেত্রে কেউ কেউ হরতাল-অবস্থান কর্মসূচির কথাও বলছেন। দলীয় নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ‘ম্যাডামকে (খালেদা জিয়া) সাজা দেওয়ার মূল লক্ষ্য তাকে ও তার দলকে আগামী সংসদ নির্বাচন থেকে দূরে রাখা। বিএনপিকে বাইরে রেখে নির্বাচন করা। কিন্তু এটা একাদশ নির্বাচনে কোনোভাবেই সম্ভব নয়। আমরা উচ্চ আদালতে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করব। সরকার বাধা না দিলে চেয়ারপারসন প্রচলিত আইনেই বেরিয়ে আসবেন ইনশা আল্লাহ। ম্যাডামকে সঙ্গে নিয়েই নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচনে যাবে বিএনপি।’ এরই মধ্যে লন্ডনে অবস্থান নেওয়া বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানকে গঠনতান্ত্রিকভাবে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণা দিয়েছে দলটি। জানা যায়, বৃহস্পতিবার বেগম জিয়া আদালতে যাওয়ার আগমুহূর্তেও ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে কথা বলে যান। সেখানে মা বিএনপি-প্রধানকে সান্ত্বনা দেওয়ার পাশাপাশি দলের সার্বিক নির্দেশনা নিয়েও কথা বলেন। এরপর তারেক রহমান দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীসহ সংশ্লিষ্ট কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলেন। তারই নির্দেশনার পাশাপাশি স্থায়ী কমিটির মতামত নিয়ে মির্জা ফখরুল দল পরিচালনা করছেন। বিএনপি-প্রধানের নিঃশর্ত মুক্তি দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। জানা যায়, আজ সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচির পর রবি ও সোমবার বিএনপি নেতৃবৃন্দ উচ্চ আদালতে চেয়ারপারসনের সাজার বিরুদ্ধে আপিলে ব্যস্ত থাকবেন। এই সময়ের মধ্যে যদি আপিল করে জামিন চাইতে পারেন, তাহলে সপ্তাহের বাকি দিনগুলোও অপেক্ষা করতে পারে দলটি। তবে এ ক্ষেত্রে সরকার হস্তক্ষেপ করে জামিনে বিড়ম্বনা সৃষ্টি করলে বিএনপি আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে। তবে আজ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে কর্মসূচিতে পরিবর্তনও আনতে পারে। দল পরিচালনায় সামনে আরও কৌশলী ভূমিকায় থাকবে বিএনপি। এ প্রসঙ্গে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান বলেন, ‘বিএনপি গণতান্ত্রিক দল। তাই কৌশলও প্রকাশ্য। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি আর আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে আনব ইনশা আল্লাহ।’ জানা যায়, জেলে যাওয়ার আগে খালেদা জিয়া নেতা-কর্মীদের বেশকিছু বার্তা দিয়ে যান। এর মধ্যে দলে ঐক্য সম্পর্কে গুরুত্বারোপ করেন তিনি। কেউ ঐক্যে ফাটল ধরালে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার আভাসও দিয়ে যান বিএনপি-প্রধান। একই সঙ্গে সহিংসতার বদলে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের নির্দেশনাও দিয়ে যান তিনি। এ ক্ষেত্রে কেউ হঠকারিতা করলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন। তবে বেগম জিয়ার কঠোর বার্তা আর তার জেলে যাওয়ার পর থেকে বিএনপি ঐক্যবদ্ধভাবে কর্মসূচি পালন করছে। নিজেদের মধ্যে ছোটখাটো ভুলত্রুটি ভুলে গিয়ে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করছেন। কোনো কোনো মহল প্রশ্ন তুলেছিল, খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে দল ভাঙনের মুখে পড়তে পারে। তবে বিএনপি নেতারা বলছেন, ভাঙনের পরিবর্তে এ মুহূর্তে দল আরও ঐক্যবদ্ধ। এ প্রসঙ্গে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লা বুলু বলেন, ‘১১ বছর ধরে বিএনপি ক্ষমতার বাইরে। এর মধ্যে হাজারো প্রতিকূলতা ছিল নেতা-কর্মীদের। কিন্তু ইউনিয়ন থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত কোনো নেতাই দল থেকে বেরিয়ে যাননি। বরং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দল এখন আরও ঐক্যবদ্ধ। চেয়ারপারসন কারাগারে যাওয়ার পর নেতা-কর্মীদের মধ্যে ছোটখাটো ভুলত্রুটি শুধরে সবাই এখন এক কাতারে, দল আরও সুসংহত। সুতরাং আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচনে বেগম জিয়ার নেতৃত্বেই বিএনপি ক্ষমতায় যাবে ইনশা আল্লাহ।’ বিএনপির একাধিক নেতা জানান, একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে এখনই সব শক্তি ক্ষয় করবে না বিএনপি। খালেদা জিয়ার রায়ের পর তৃণমূল নেতাদেরও ‘সর্বোচ্চ’ ধৈর্য ধারণ করে রাজপথে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতেই থাকার কৌশলে থাকবে বিএনপি। তবে পরিস্থিতি বুঝে কর্মসূচিতে পরিবর্তনও আসতে পারে। নেতারা বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে ধরপাকড় করিয়ে বিএনপিতে উত্তেজনা সৃষ্টি করা হচ্ছে। শ্রাবণের স্রোতধারার মতো দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। এর পরও আপাতত সরকারের ফাঁদে পা দেবে না বিএনপি। ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে ও পরে পেট্রলবোমা নিয়ে যে রাজনৈতিক ব্লেইম-গেম ছিল তা থেকেও নেতা-কর্মীদের দূরে থাকতে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়ে কারাগারে যাওয়ার আগে দলের নির্বাহী কমিটির রুদ্ধদ্বার সভায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া মাঠপর্যায়ের নেতাদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘আমি দেশ ও জনগণের পাশে আছি, থাকব। তাদের জন্যই আমার রাজনীতি। আল্লাহ নিশ্চয় আমাদের জন্য সুখবর রেখেছেন। আপনারা কেউ কখনই হঠকারী সিদ্ধান্ত নেবেন না। শান্তিপূর্ণভাবে কে কত কর্মসূচি পালন করতে পারেন তার ওপর দলে আপনাদের ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে।’

সর্বশেষ খবর