শনিবার, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

দেখা করলেন কথা বললেন ভাই বোন

সাখাওয়াত কাওসার

রাজধানীর নাজিম উদ্দিন রোডের পুরাতন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সুপারের সাবেক অফিস কক্ষেই কেটেছে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার টানা দুই রাত। ডিভিশন পাওয়ার আগ পর্যন্ত ২৫০-৩০০ স্কয়ার ফুটের একটি কক্ষেই কাটবে তার সময়। এদিকে গতকাল বিকাল ৩টার দিকে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন তার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার ও তার স্ত্রী কানিজ ফাতেমা, ছেলে অভি ইস্কান্দার ও খালেদা জিয়ার বোন সেলিমা হোসেন। কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, জেল কোড অনুযায়ী সাধারণ বন্দীর সব সুযোগ-সুবিধাই দেওয়া হচ্ছে খালেদা জিয়াকে। যদিও নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, খালেদার পছন্দ অনুযায়ী খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। তার ব্যক্তিগত গৃহপরিচারিকা ফাতেমা বেগমকে খালেদা জিয়ার সেবা করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, খালেদা জিয়া দুবারের প্রধানমন্ত্রী, এ জন্য তাকে আমরা যতটুকু পারা যায় সম্মান দেখাচ্ছি। কারাগার সংশ্লিষ্টরা জানান, খালেদা জিয়ার সঙ্গে গতকাল ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার, তার স্ত্রী কানিজ ফাতেমা, ছেলে অভি ইস্কান্দার এবং খালেদা জিয়ার বোন সেলিমা হোসেন দেখা করতে বিকাল ৩টা ৩৫ মিনিটে কারাগারে যান। অনুমতি নিয়ে তারা খালেদা জিয়ার সঙ্গে এক ঘণ্টারও বেশি সময় কথা বলেন। সাক্ষাৎ শেষে তারা বের হয়ে মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলবেন- এমনটি মনে করে শতাধিক সংবাদকর্মী অপেক্ষা করলেও শেষ পর্যন্ত তারা নাজিম উদ্দিন রোডের পথে না এসে কারাগারের পূর্ব পাশের রাস্তা দিয়ে চলে যান। সাক্ষাতের সময় কারা কর্মকর্তা ছাড়াও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এদিকে গতকাল সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে সুপ্রিম কোর্ট বারের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনের নেতৃত্বে ৩ জন সিনিয়র আইনজীবী খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করার আবেদন নিয়ে কারাগারে যান। রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এ সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি। এর আগে সকালে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান জাতীয়বাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবুর স্ত্রী বিথীকাসহ দুজন। তারা ফল নিয়ে দীর্ঘক্ষণ কারাগারে অপেক্ষা করলেও তাদের সাক্ষাতের অনুমতি দেয়নি কারা কর্তৃপক্ষ। গতকাল বিএনপি চেয়ারপারসনের পারিবারিক একটি সূত্র কারাগারে পরিবারের সাক্ষাতের বিষয়টি নিশ্চিত করে সন্ধ্যার পর বলেন, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ম্যাডামের সাক্ষাৎ হয়েছে। তারা সঙ্গে কিছু শুকনা খাবার নিয়ে গিয়েছিলেন। সাক্ষাতে তারা খালেদা জিয়ার শরীরের খোঁজখবর নেন। এ সময় তাদের সঙ্গে পারিবারিক, রাজনৈতিক ও মামলা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। খালেদা জিয়া তাদের কাছে বাইরের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কেও জানতে চেয়েছেন।

সময় কাটছে যেখানে : বেগম খালেদা জিয়ার সময় কাটছে কারাগার অফিস সংলগ্ন দক্ষিণ পাশের শেষ সীমানায় থাকা সিনিয়র জেল সুপার পদবি কর্মকর্তার ২৫০-৩০০ স্কয়ার ফুটের একটি কক্ষের মধ্যে। যদিও তার থাকার জন্য কারাগারের উত্তর পাশে ডে-কেয়ার সেন্টারের দ্বিতীয় তলায় নতুন খাট, চেয়ার, টেবিল,  এসিসহ প্রয়োজনীয় সবকিছুই ক্রয় করা হয়েছে। শিরিন সুলতানা নামের একজন মহিলা ডেপুটি জেলার ছাড়াও আশরাফ হোসেন ও জাহিদ হোসেন নামে আরও দুজন ডেপুটি জেলার মিলিয়ে ১০ জন মহিলা কারারক্ষী খালেদা জিয়ার সেবায় সার্বক্ষণিক নিয়োজিত আছেন। পাশাপাশি কারা কর্তৃপক্ষ তাকে কাশিমপুর মহিলা কারাগারে (পার্ট-৩) রাখারও ব্যবস্থা গ্রহণ করে রেখেছে। তবে জেল কোডের বাইরে অনানুষ্ঠানিক সুবিধার বিষয়ে গতকাল পর্যন্ত কারা কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে কেউ মুখ খোলেননি। গতকাল দুপুরে পুরাতন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকায় সরেজমিন খোঁজ নিতে গেলে দেখা গেছে, খালেদা জিয়ার নিরাপত্তায় দুই স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। ওই এলাকার চারপাশের প্রতিটি ভবনের ছাদে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। কারাগারের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, খালেদা জিয়া কারাগারে যথেষ্ট ভালো আছেন এবং স্বাভাবিক আছেন। রুনা নামের একজন কারা ফার্মাসিস্ট সকালে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছেন। তিনি সকাল, দুপুর, বিকাল ও রাতের খাবার স্বাভাবিকভাবেই খেয়েছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর