শনিবার, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

ইংরেজি ধারাবাহিকতা ত্যাগ করতে পারিনি

ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত

ইংরেজি ধারাবাহিকতা ত্যাগ করতে পারিনি

বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। এই শ্রুতিমধুর ভাষায় আমরা মনের আবেগ, উচ্ছ্বাস প্রকাশ করি। পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর সঙ্গে পূর্ব বাংলার জনসাধারণের প্রথম সংঘাত বেধেছিল রাষ্ট্রভাষার প্রশ্নে। গণপরিষদে বাংলা ভাষার ব্যবহার সিদ্ধ করার উদ্দেশ্যে কুমিল্লার সন্তান ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের আনীত প্রস্তাব অগ্রাহ্য হলে ভাষার দাবি আন্দোলনে রূপ নেয়। ১৯৫২ এর একুশে ফেব্রুয়ারি সালাম, বরকত, জব্বার, রফিক প্রমুখের রক্তের বিনিময়ে বাংলা রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা পায়। এই বিরল ঘটনাকে কেন্দ্র করে মহান একুশে ফেব্রুয়ারিকে ইউনেস্কো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করেছে। বিশ্বব্যাপী যথাযথ মর্যাদায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়। তবে আমাদের জাতীয় জীবনে রাষ্ট্রভাষা বাংলার সর্বত্র প্রয়োগ সম্ভব হয়নি। আমাদের চিকিৎসাবিদ্যা পড়াশোনার মাধ্যম ইংরেজি। এর মূল কারণ আমরা বহু বছর ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনে ছিলাম। ওই সময় ইংরেজি ভাষার চর্চা সংক্রমিত হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অফিস, আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য কর্মক্ষেত্রে ব্যবহারিক ভাষা হিসেবে ইংরেজির আধিপত্য বেড়েছে। আমরা সেটি আর ত্যাগ করতে পারিনি। অথচ রাশিয়া, জার্মানি, পর্তুগালসহ পৃথিবীর বহু দেশে তাদের মাতৃভাষায় চিকিৎসাশাস্ত্র পড়ানো হয়। তারা মেডিকেল সায়েন্সের বইগুলো মাতৃভাষায় প্রণয়ন করে। বিদেশি বইগুলো নিজের ভাষায় অনুবাদ করে নেয়। আমরা সচেষ্ট হলে সেটি সম্ভব। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল ও বাংলা একাডেমি যৌথভাবে কাজটি করতে পারে। আর একটি বিষয় বলে রাখা ভালো, রাশিয়া, জার্মানিসহ যেসব দেশে মেডিকেল সায়েন্সের বই মাতৃভাষায় রচিত ও পঠিত হচ্ছে সেখানে চিকিৎসকরা দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে ইংরেজিটা খুব ভালোভাবে জানে। আমাদের দেশ এক্ষেত্রে পিছিয়ে। আমাদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে রোগীদের সমস্যা জানা, চিকিৎসা দেওয়ায় কোনো সমস্যা নেই কিন্তু পঠন-পাঠন ইংরেজি মাধ্যমে। আমাদের মাতৃভাষায় চিকিৎসাবিদ্যা চর্চার উদ্যোগ নেওয়ার কথা ভাবা দরকার। আর চিকিৎসক ও উচ্চতর গবেষকরা নিজেদের প্রয়োজনে অবশ্যই দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে ইংরেজি ভাষা শিখে নেবে।      

লেখক : সাবেক উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।

সর্বশেষ খবর