বিএনপির গঠনতন্ত্রে সংশোধনী এনে কমিটির সদস্য পদের অযোগ্যতা-সংক্রান্ত সপ্তম ধারা বিলুপ্তিকে সাংঘর্ষিক বলেছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, সপ্তম ধারা বিলুপ্তি করা দুর্নীতি নিয়ে তাদের দলীয় অবস্থানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। গঠনতন্ত্র সংশোধন হওয়া উচিত দলের প্রয়োজনে, ব্যক্তির স্বার্থে নয়। আর দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয় এমন অবস্থানও কোনো দলের কাছ থেকে কাম্য হতে পারে না। অনেকে বলছেন, খালেদা জিয়ার মামলার রায় সামনে রেখেই গঠনতন্ত্রে সংশোধনী এনেছে বিএনপি।
এদিকে বিএনপি প্রতিষ্ঠার পর ‘দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে’ জিয়াউর রহমান যে ১৯ দফা কর্মসূচি দিয়েছিলেন, ‘দুর্নীতিমুক্ত, ন্যায়ভিত্তিক’ সমাজ প্রতিষ্ঠা ছিল তার অন্যতম। কিন্তু বিএনপি তাদের গঠনতন্ত্রের সপ্তম ধারা বিলুপ্ত করায় দুর্নীতিতে দণ্ডিত ব্যক্তির দলের কমিটিতে সদস্য হতে বাধা থাকছে না। উল্লেখ্য, বিএনপির গঠনতন্ত্রের সপ্তম ধারায় বলা ছিল, সমাজে দুর্নীতিপরায়ণ ব্যক্তি বিএনপির কোনো পর্যায়ের কমিটির সদস্য কিংবা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে ‘অযোগ্য’ বিবেচিত হবেন। বিএনপির গঠনতন্ত্রের সংশোধনীকে সাংঘর্ষিক বলেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। গতকাল তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে দলের যে অবস্থান, তার সঙ্গে গঠনতন্ত্রের এই পরিবর্তন সাংঘর্ষিক। এ ছাড়া আরও দুটি দিক থেকে এই পরিবর্তন সাংঘর্ষিক। এক. নীতির সঙ্গে, দুই. দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ব্যক্তির দিকে তাকিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক এই সংশোধনী অগ্রহণযোগ্য। তিনি বলেন, গঠনতন্ত্র একটি প্রাতিষ্ঠানিক বিষয়। কিন্তু এই পরিবর্তনটা প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক হয়নি, হয়েছে ব্যক্তিকেন্দ্রিক।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, রাজনীতিতে অন্যায়, অনৈতিকতা জেঁকে বসেছে। এ পরিবর্তন তারই প্রতিফলন। চারদিকে দুর্নীতি আর দুর্নীতি। বড় বড় দুর্নীতি হয় আঁতাতের মাধ্যমে। তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্র নেই, সব রাজনৈতিক দলেই পরিবারতন্ত্র। আর পরিবারতন্ত্রের কারণে এমন পরিবর্তন।’২৮ জানুয়ারি বিএনপির সংশোধিত গঠনতন্ত্র নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হয়। সেখানে বলা হয়, ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ বিএনপির কাউন্সিলে এসব সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। আট পৃষ্ঠার ওই সংশোধনী প্রস্তাবের বিষয়ে দলীয় চেয়ারপারসন ও কাউন্সিল অধিবেশনের সভাপতি হিসেবে খালেদা জিয়া ইসিতে পাঠানো চিঠিতে লিখেছেন, উপরোক্ত সংশোধনীগুলো কাউন্সিলের অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করা হলে কাউন্সিল সর্বসম্মতিক্রমে তা অনুমোদন করে। একই সঙ্গে কাউন্সিলের গৃহীত সংশোধনী অনুযায়ী অনুচ্ছেদ ও উপ-অনুচ্ছেদগুলোর ক্রমিকের অনিবার্য পরিবর্তন, ভাষা ও ছাপার ভুলগুলো সংশোধন করার প্রস্তাবও কাউন্সিলে অনুমোদিত হয়।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, নিবন্ধিত হওয়ার সময়ই দলীয় গঠনতন্ত্র জমা দিতে হয়। আর সংশোধন করা হলেও তা নির্বাচন কমিশনকে জানানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কোনো দলের গঠনতন্ত্র সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হলো কি না, তা দেখা ইসির দায়িত্ব। বিএনপি তাদের গঠনতন্ত্রে যে পরিবর্তন এনেছে, সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা সোমবার বলেন, ‘আমরা তো তাদের গঠনতন্ত্র সংশোধন করব না। তারা গঠনতন্ত্র সংশোধন করে আমাদের কাছে জমা দিয়েছে।’ ওই সংশোধনী নীতিসিদ্ধ হয়েছে কি না এমন প্রশ্নে কোনো মন্তব্য করেননি সিইসি।