পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেছেন, ‘বাংলাদেশ আমাদের সীমান্তবর্তী রাষ্ট্র, আমাদের বন্ধুরাষ্ট্র। আমরা বাংলাদেশের একেবারে পাশে থাকি। ভারত ও বাংলাদেশ বা পশ্চিমবঙ্গ ও পূর্ববঙ্গের মধ্যে একটা বোঝাপড়ার সম্পর্ক চিরকালই ছিল, আছে এবং আগামী দিনেও থাকবে।’ গতকাল পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার গঙ্গারামপুর স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মঞ্চে উপস্থিত থেকে মুখ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন। গঙ্গারামপুরে ভাষাশহীদদের জন্য নির্মিত একটি স্মারক বেদিতে মহান ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মমতা বলেন ‘‘এ সময়টাতে আমি কলকাতাতেই থাকি। কিন্তু গঙ্গারামপুরে এ অনুষ্ঠান বেছে নিয়েছি কারণ আমার পাশেই বাংলাদেশ সীমান্ত। আজকের এই দিনটায় এপার বাংলায় থেকেও ওপার বাংলার সব ভাই-বোনকে আমার অভিনন্দন জানিয়ে বলি, আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি। একদিকে যেমন ‘জন গণ মন অধিনায়ক’, তেমনি অন্যদিকে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা’। দুটোই বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচনা করেছিলেন। সুতরাং দুই দেশের এ সম্পর্ক আরও উন্নত হোক, আরও সুন্দর হোক, পারস্পরিক বোঝাপড়া আরও ভালো হোক। দুই পার বাংলা ভালো থাকুক। এটা আমরা নিশ্চয়ই চাই। তাই আজ এখান থেকে এ অনুষ্ঠান করে গর্ব বোধ করছি। আমার মনে হচ্ছে, যেন আমি বাংলাদেশে দাঁড়িয়েই এ অনুষ্ঠান করছি।’ তিন বছর আগে একুশে ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা সফরের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে মমতা বলেন, ‘‘বাংলাদেশের আমন্ত্রণে আমি একবার একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে গিয়েছিলাম এবং দেখে এসেছিলাম যে একুশে ফেব্রুয়ারি তাদের কাছে কতটা প্রাণের দিন। ভাষা আন্দোলন করতে গিয়ে আজকের এ দিনে যারা শহীদ হয়েছিলেন, তাদের সবাইকে আমরা সম্মান জনাই। ভাষা আন্দোলন করতে গিয়ে ঢাকায় অনেক রক্ত ঝরেছিল। ১৯৫২ সালে সারা বিশ্বে যে আন্দোলন হয়েছিল, তারপর ১৯৯২ সালে জাতিসংঘ বাংলা ভাষাকে আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। আমরা গর্বিত যে বাংলা ভাষাও আজ একটা আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে পরিচিত। সারা বিশ্বে বাংলা ভাষায় কথা বলে পঞ্চমতম স্থানে রয়েছি। বাংলা ভাষায় কথা বলার লোক প্রচুর। সারা এশিয়াতেও আমরা দ্বিতীয় স্থানে রয়েছি। সেদিক দিয়ে বাংলা ভাষার গুরুত্ব খুব বেশি। তাই আমরা বলব, ‘আমাদের প্রিয় একুশে ফেব্রুয়ারি, তোমাকে কি ভুলতে পারি?’ অথবা বলতে পারি, ‘মোদের গরব মোদের আশা, আ-মরি বাংলা ভাষা...’।’’ মমতার অভিমত, ‘আমি যে ভাষায় কথা বলি বা যে ভাষায় কথা বললে মনের ভাব পরিষ্কার করে জানাতে পারি, সেটিই হচ্ছে আমার মাতৃভাষা। আমরা ইংরেজি, বাংলা, অলচিকি, নেপালি সব ভাষাই শিখব। কিন্তু মাতৃভাষার অবদান অপরিহার্য।’ মহান শহীদ দিবস উপলক্ষে এর আগে টুইট করে মুখ্যমন্ত্রী জানান, ‘আজ ভাষা দিবস, যে দিনে বাংলাকে সরকারি ভাষার স্বীকৃতির দাবিতে ঢাকায় আন্দোলন করতে গিয়ে অনেকে শহীদ হয়েছিলেন। একুশে ফেব্রুয়ারির সেই সব মহান শহীদের প্রতি আমার সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা। আমাদের সব ভাষাকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার চোখে দেখা উচিত।’ পরের একটি টুইটে মমতা জানান, ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশের ভাই ও বোনদের জানাই শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। ভাষাশহীদদের জানাই সশ্রদ্ধ প্রণাম। একুশে ফেব্রুয়ারি অমর রহো।’