সোমবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

রাজধানীতে ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা

ব্যাগ বন্দী তরুণীর লাশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর দক্ষিণ মহাখালীতে নাসির কাজী (৪৮) নামের এক ঠিকাদার খুন হয়েছেন। গতকাল সকাল সাড়ে ৮টার দিকে দক্ষিণপাড়া বড় মসজিদের কাছে তাকে খুব কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় বনানী থানা পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠায়। কী কারণে বা কারা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে গত রাত এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পুলিশের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে নিহতের স্বজনদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, পূর্ব শত্রুতার জের ধরেই হয়তো তাকে হত্যা করা হতে পারে। গতকাল রাত সাড়ে ৭টার দিকে অজ্ঞাত পাঁচজনকে আসামি করে নিহতের স্ত্রী সেলিনা আক্তার বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। অন্যদিকে বিমানবন্দর এলাকা থেকে ব্যাগে ভর্তি আঁখি আক্তার (১৬) নামের এক তরুণীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আঁখি পল্লবী শহীদ জিয়া ডিগ্রি কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থী। নাসির হত্যা প্রসঙ্গে প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, অস্ত্রধারী তিন যুবক খুব কাছ থেকে তাকে গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরে গলির ভিতর দিয়ে মহাখালী বাসস্ট্যান্ডের দিকে চলে যায়।

গতকাল দুপুরে সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, দক্ষিণপাড়া জামে মসজিদ এবং জি.পি.ক-৭২ নম্বর কাজী ভিলার মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গাতেই সকালে খুন হন নাসির কাজী। নিহত নাসির পেশায় ঠিকাদার ছিলেন। গতকাল সকালে তিনি শ্রমিকদের দিয়ে দক্ষিণপাড়া বড় মসজিদে টাইলসের কাজ করাচ্ছিলেন। এ সময় হঠাৎ দুর্বৃত্তরা নাসিরকে গুলি করে পালিয়ে যায়। কাজী ভিলার সিসিটিভি ক্যামেরার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা। তবে ভোর সাড়ে ৫টা পর্যন্ত ফুটেজ পাওয়া গেছে। বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) বোরহান উদ্দিন বলেন, এটা যে পূর্ব পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড এ ব্যাপারে আমরা অনেকটাই নিশ্চিত। কারণ সিসিটিভি সংযোগ আগেই বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল। হত্যাকাণ্ডের কারণ হিসেবে সম্ভাব্য সব কিছুই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নিহত নাসির রাজধানীর দক্ষিণখানের মুক্তিযোদ্ধা সেক্টর কার্যালয়ের পাশে দীর্ঘদিন বসবাস করে আসছিলেন। সম্প্রতি ঠিকাদারের কাজের জন্য তিনি মহাখালীতে পরিবার নিয়ে ভাড়া বাসায় ওঠেন। তার গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার ইঁদুরপুর ইউনিয়নে। জানা গেছে, ২০০৪ সালে শরীয়তপুরের গোসাইরহাট ইঁদুরপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান বিএম খালেক খুন হন। ওই হত্যা মামলায় প্রধান আসামি ছিলেন নাসির কাজী। ওই মামলায় নাসির ১৪ মাস জেল খেটে জামিনে বের হন। পরে নাসির পরিবার নিয়ে ঢাকায় এসে ঠিকাদারি ব্যবসায় জড়িত হয়ে পড়েন। নিহতের ছোট ভাই মামুন কাজী বলেন, আমরা আসলে কোনো কিছুই অনুমান করতে পারছি না। সম্প্রতি কিছু অজ্ঞাত নম্বর থেকে ভাইকে ফোন করে হুমকি দিয়ে আসছিল। এ ব্যাপারে থানায় জিডি করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়। কিন্তু জিডি করার আগেই আমার ভাইকে মেরে ফেলা হলো। নিহতের ভায়রা জসিম দাবি করেন, হুমকির বিষয়টি ভাই তার স্ত্রীর কাছে জানিয়ে গেছেন। সম্প্রতি কারা কারা আমার ভায়রাভাইকে হুমকি দিয়েছিল, সে তথ্য আমার শ্যালিকার (নাসিরের স্ত্রী) কাছে আছে। তবে নিহতের স্ত্রী সেলিনা আক্তার এ ব্যাপারে কোনো কিছু বলতে রাজি হননি।

ব্যাগ বন্দী তরুণীর লাশ : গতকাল ভোর সাড়ে ৪টার দিকে বিমানবন্দর রেলস্টেশনের দক্ষিণ পাশে গাড়ি পার্কিংয়ের কাছে কালো ব্যাগের ভিতর থেকে আঁখি আক্তার (১৬) এক তরুণীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। পুলিশের ধারণা তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে ব্যাগের ভিতরে ঢুকিয়ে খুনিরা সেখানে ফেলে গেছে। এ খবর পেয়ে গতকাল বিকালে মর্গে গিয়ে লাশ দেখে তার মামা-মামি শনাক্ত করেন। জানা গেছে, মাদারীপুর জেলার কালকিনি থানার আন্ডারচর গ্রামের আরিফ হোসেন ও মা হাসনাহেনার মেয়ে আঁখি। পাঁচ বছর আগে তার বাবা-মা চাকরি করার জন্য মরিসাস চলে গেলে মামা রোকন খান ও মামি জেসমিনের সঙ্গে পল্লবীর ১২ নম্বর সেকশনের ই ব্লকের ৩৩ নম্বর রোডের ৩৮ নম্বর বাড়িতে থাকতেন আঁখি। পল্লবীর শহীদ জিয়া মহিলা ডিগ্রি কলেজে এইচএসসিতে পড়াশোনা করছিলেন। গত শনিবার সকাল ১১টায় কলেজের উদ্দেশে আঁখি বাসা থেকে বের হলে আর ফেরেননি। এ ঘটনায় রাতেই পল্লবী থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয় বলে জানিয়েছেন তার মামি জেসমিন।

সর্বশেষ খবর