শুক্রবার, ৯ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা
বেসিক ব্যাংক ঋণ কেলেঙ্কারি

দুদকে ফের বাচ্চুকে জিজ্ঞাসাবাদ

নিজস্ব প্রতিবেদক

বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুকে চতুর্থ দফা জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। পরে দুদকের চিকিৎসকের প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে সুস্থ হন। এর আগেও গত ৮ ডিসেম্বর জিজ্ঞাসাবাদের সময় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। গতকালও টানা ১০ ঘণ্টার জিজ্ঞাসাবাদে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন তিনি। আবদুল হাই বাচ্চু আরও বলেছেন, সব ঋণ  বেসিক ব্যাংকের বোর্ডের অনুমোদন ও কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে দেওয়া হয়েছে। গতকাল বাচ্চুকে শিপিং ব্যবসার মূলধন সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ প্রসঙ্গে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, বেসিক ব্যাংকের লুণ্ঠিত টাকা উদ্ধার করাই হচ্ছে দুদকের প্রধান কাজ। আমরা টাকা উদ্ধার বিষয়টি বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। দুদক পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে একটি দল বাচ্চুকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এর আগে তৃতীয় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাংবাদিকদের এড়িয়ে যান বেসিক ব্যাংকের আলোচিত সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চু। গত চার দিনের পৃথক জিজ্ঞাসাবাদে ৫৬টি মামলার মধ্যে ২৪টি মামলার বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তারা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এর আগে গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর তৃতীয়বারের মতো জিজ্ঞাসাবাদের কথা থাকলেও অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে সময় চেয়ে দুদকে লিখিত আবেদন করেন আবদুল হাই বাচ্চু। তার আবেদন নাকচ করে দুদক। তাকে গত বছরের ৪ ডিসেম্বর প্রথম দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। ওই দিন সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নিজেকে দোষী মনে করি না। এরপর গত ৬ ডিসেম্বর দ্বিতীয়বারের মতো প্রায় সাত ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। দ্বিতীয় দিনের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্নের জবাব না দিয়ে এড়িয়ে যান এই সাবেক সংসদ সদস্য। এর আগে ব্যাংকের সাবেক ১০ পরিচালককেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।’

প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা লোপাটের ঘটনায় ২০১৫ সালের ২১, ২২ ও ২৩ সেপ্টেম্বর তিন দিনে টানা ৫৬টি মামলা করে দুদকের অনুসন্ধান দলের সদস্যরা। রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন ও গুলশান থানায় এসব মামলায় আসামি করা হয় ১৫৬ জনকে। অনিয়মের মাধ্যমে ২ হাজার ৬৫ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয় বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়। এর মধ্যে রাজধানীর গুলশান শাখায় ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা, শান্তিনগর শাখায় ৩৮৭ কোটি টাকা, প্রধান শাখায় প্রায় ২৪৮ কোটি টাকা এবং দিলকুশা শাখায় ১৩০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়। অভিযোগের বাকি অংশের অনুসন্ধান দুদকে চলমান। মামলায় আসামিদের মধ্যে বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তা আছেন ২৬ জন। বাকি ১৩০ আসামি ঋণগ্রহীতা। ৫৪ প্রতিষ্ঠানের মালিক ও সার্ভে প্রতিষ্ঠান। ব্যাংকার ও ঋণগ্রহীতাদের অনেকেই একাধিক মামলায় আসামি হয়েছেন। এর মধ্যে ব্যাংকের সাবেক এমডি কাজী ফখরুল ইসলামকে আসামি করা হয়েছে ৪৮টি মামলায়। সম্প্রতি গ্রেফতার হওয়া ডিএমডি ফজলুস সোবহান ৪৭টি, কনক কুমার পুরকায়স্থ ২৩টি, মো. সেলিম আটটি, বরখাস্ত হওয়া ডিএমডি এ মোনায়েম খান ৩৫টি মামলার আসামি। ২০০৯ সাল থেকে ২০১২ সালের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের গুলশান, দিলকুশা ও শান্তিনগর শাখা থেকে অনিয়মের মাধ্যমে মোট সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ বিতরণের অভিযোগ ওঠার পর তদন্তে নামে দুদক। ঋণপত্র যাচাই না করে জামানত ছাড়া, জাল দলিলে ভুয়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেওয়াসহ নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে বিধিবহির্ভূতভাবে ঋণ অনুমোদনের অভিযোগ ওঠে ব্যাংকটির তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে। আবদুল হাই বাচ্চুকে ২০০৯ সালে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান নিয়োগ করে সরকার। ২০১২ সালে তার নিয়োগ নবায়নও হয়।

সর্বশেষ খবর