রবিবার, ১১ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

কীভাবে হবে আগামী ভোট

ইসি নিচ্ছে তাদের মতো পূর্ণ প্রস্তুতি, ক্ষমতাসীন দল করবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নির্বাচনকালীন সরকার

গোলাম রাব্বানী ও রফিকুল ইসলাম রনি

কীভাবে হবে আগামী ভোট

কীভাবে হবে আগামী ভোট? নির্বাচন কমিশনে (ইসি) অনুষ্ঠিত সংলাপে রাজনৈতিক দল, সুশীলসমাজ, সিনিয়র সাংবাদিকসহ সবার প্রস্তাব সামনে রেখে আগামী সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি। এ ক্ষেত্রে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে মাথাব্যথা থাকবে না ইসির। অন্যদিকে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তিন মাসের জন্য মন্ত্রিসভা স্বল্পপরিসরে রেখে দশম সংসদের (২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি) নির্বাচনকালীন সরকারের মতো একই ধাঁচের সরকার গঠন করবে। এই সরকারের প্রধান থাকবেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দল ও জোটের দক্ষ ও গ্রহণযোগ্যরাই প্রাধান্য পাবেন মন্ত্রিসভায়। এ সরকার কেবল দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবে। উন্নয়নমূলক কোনো কাজে তাদের সম্পৃক্ততা থাকবে না। এ ছাড়া প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনকে যেভাবে সহযোগিতা করা দরকার সেভাবেই করবে।

এদিকে দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকদের একাদশ সংসদের ভোট পর্যবেক্ষণে কোনো বাধা থাকবে না। এমনকি ভোটের দিন নির্বাচন কমিশনের ফলাফল ঘোষণার পর তা বেসরকারি টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারে কোনো বিধিনিষেধ নেই। তবে ভোট চলাকালে কেন্দ্র থেকে বেসরকারি টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারের পক্ষে বিএনপির অবস্থান থাকলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এক পক্ষ এর বিরোধিতা করছে। সেই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনও ভোট কেন্দ্রের গোপন কক্ষ ছাড়া কেন্দ্রের অন্যান্য জায়গায় সাংবাদিকদের বিচরণে বাধা দেবে না। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ কর্মকর্তার অনুমতিসাপেক্ষে কেন্দ্রে সাংবাদিকরা সংবাদ সংগ্রহের জন্য যেতে পারবেন বলে জানিয়েছে ইসি। নির্বাচন  কমিশনকে চলতি বছরের ৩০ অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচন করতে  হবে। অর্থাৎ আগামী ৮ থেকে ১১ মাসের মধ্যে সংসদ নির্বাচন হবে। নভেম্বরের মাঝামাঝিতে হতে পারে তফসিল। নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান এ কে আজাদ চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘নির্বাচনকালীন সরকারের আকার ছোট হবে। তারা নির্বাচনকালীন সরকারের মতোই আচরণ করবে। কোনো নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে না। রুটিনমাফিক দিনের কাজগুলো করবে। একই সঙ্গে তারা নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচনসংক্রান্ত যাবতীয় কাজে সহায়তা করবে।’ নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে কমিশনের ভূমিকার বিষয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম. সাখাওয়াত হোসেন (অব.) বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘নির্বাচনের সময় সব কাজই চ্যালেঞ্জিং। কমিশন এখনই চ্যালেঞ্জে পড়েছে।’ ‘কাউকে নির্বাচনে আনতে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হবে না’ সিইসির সাম্প্রতিক এমন বক্তব্যের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কমিশন যদি আগেভাগেই এমন কথা বলে, এতে জনগণের আস্থা হারিয়ে যায়।’

ছোট হবে নির্বাচনকালীন সরকার : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ‘সহায়ক সরকার’ দাবি করে আসছে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি। সংবিধানে সহায়ক সরকার পদ্ধতি বা ফরমুলা না থাকায় তা সরাসরি নাকচ করেছে আওয়ামী লীগ। সংবিধানের আলোকে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের কথাই ভাবছে ক্ষমতাসীন দলটি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বেই নির্বাচনকালীন সরকার থাকবে। শুধু আওয়ামী লীগেরই নয়, নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভায় জোট নেতারাও থাকছেন। বর্তমানে সরকারে থাকা অনেকেই নির্বাচনকালীন সরকার থেকে বাদ পড়তে পারেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এখনই নির্বাচনী জনসভা করছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইতিমধ্যে চারটি বিভাগীয় জেলায় সফর শেষ করেছেন তিনি। এ মাসেই তাঁর চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, ঠাকুরগাঁও সফর করার কথা রয়েছে। নির্বাচনকালীন সরকারপ্রধান থাকলে বিধি অনুযায়ী তিনি নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন না। সে কারণেই জেলা সফর ও দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীর মনোবল চাঙ্গা করতে জেলা সফর করছেন তিনি। এ সরকারে মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির ভূমিকা কী হবে, তা নিশ্চিত করে বলা না গেলেও দলটি যে এবার নির্বাচনের বাইরে থাকবে না তা নিজেরাই বলছে। আওয়ামী লীগ সূত্র জানিয়েছে, যারা মন্ত্রিসভায় থাকবেন, তারাও নির্বাচনী এলাকায় জনসভা ও প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন না। সে কারণে ওই মন্ত্রিসভার সদস্যরাও নির্বাচনী এলাকায় জনসভা থেকে শুরু করে প্রচারণা আগেই সারতে চান। সে অনুযায়ীই পরিকল্পনা তৈরি করছেন তারা। আগামী ৩১ অক্টোবরই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ক্ষণ গণনা শুরু হয়ে যাবে। এ অবস্থায় সরকারি মহলে নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। সরকার সবুজ সংকেত দিলে আগামী ডিসেম্বরে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে পারে।

চলছে প্রস্তুতি : একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জোর প্রস্তুতি চলছে নির্বাচন কমিশনে। চূড়ান্ত হয়েছে ভোটার তালিকা। শুরু হচ্ছে নির্বাচনসামগ্রী কেনাকাটার কাজও। সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ দিতে চলতি মাসের মধ্যে নিবন্ধন দেওয়া হবে নতুন রাজনৈতিক দলের। নির্বাচনী আইন সংস্কারের কাজ প্রায় শেষের দিকে। এপ্রিলের মধ্যে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের কাজ শেষ করবে কমিশন। এরপর ভোট কেন্দ্র প্রস্তুত, ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রিন্টের কাজে হাত দেবে সাংবিধানিক এই সংস্থাটি।

নির্বাচন বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে এই ভোট (একাদশ সংসদ নির্বাচন) হবে ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিনতমের একটি। রাজনৈতিক দলগুলোর দূরত্ব সামাল দিয়ে কীভাবে এ নির্বাচন করবে তা নিয়ে চিন্তিত নির্বাচন কমিশন। সব জটিলতা মিটিয়ে একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান কমিশনের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ হবে বলে মনে করছেন তারা।

নির্বাচনী মালামালের মধ্যে ব্যালট পেপারের কাগজ, স্ট্যাম্প প্যাড, অফিশিয়াল সিল, মার্কিং সিল, ব্রাশ সিল, লাল গালা, আম কাঠের প্যাকিং বাক্স, অমোচনীয় কালি, বিভিন্ন ফরম, প্যাকেট, সুই-সুতা, খাম, মোমবাতি কেনাকাটার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রায় ৩৫ কোটি টাকার কাগজ কেনার জন্য অর্থ বরাদ্দের বিষয়টি মুদ্রণ ও প্রকাশনা অধিদফতর নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচনের জন্য প্রায় ১ লাখ ৯০ হাজার রিম কাগজ প্রয়োজন হবে। এগুলো জুনের মধ্যে সংগ্রহ করতে হবে। সংসদসহ অন্যান্য নির্বাচনের জন্য জাতীয় বাজেটে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ চাইছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা ও নির্বাচন পরিচালনা— এ দুই খাতে ব্যয় বরাদ্দ করে নির্বাচন কমিশন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর