রবিবার, ১১ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

হলমার্কের জমি কোথায়

জানতে চায় সোনালী ব্যাংক

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

ঋণের নামে অর্থ আত্মসাতের দায়ে অভিযুক্ত কোম্পানি হলমার্ক গ্রুপের জমি ও কারখানা কোথায় কী অবস্থায় রয়েছে তা জানতে চায় সোনালী ব্যাংক। এ জন্য সরকারি সার্ভেয়ার (কানুনগো) নিয়োগ দিতে ঢাকা জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটি। ৪ মার্চ জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে ব্যাংকের সিইও এবং এমডি ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ এ আবেদন করেন। এরই মধ্যে এ বিষয়ে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদে সিদ্ধান্ত হয়েছে। সোনালী ব্যাংকের পাশাপাশি হলমার্কের জমি চিহ্নিতকরণের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষ থেকেও একটি কমিটি হয়েছে।

জানতে চাইলে ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, হলমার্কের ক্ষেত্রে দুটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। একটি হচ্ছে, প্রতিষ্ঠানটির যে জমি আছে আমরা তা সরকারি সার্ভেয়ারের মাধ্যমে চিহ্নিত করতে চাই। কারণ এসব জমির সঙ্গে খাস জমিও থাকতে পারে। খাস জমি পৃথক করে হলমার্কের জমি ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে নিতে পারলে তখন তা বিক্রি করে অর্থ আদায় সম্ভব হবে। একই বিষয়ে দুদকের পক্ষ থেকেও একটি কমিটি করার কথা জানিয়ে সোনালী ব্যাংকের এমডি জানান, তারা (দুদক) তাদের সার্ভেয়ারের মাধ্যমে হলমার্কের জমি চিহ্নিত করবে। সেখানে আমাদের প্রতিনিধিও থাকবে।

ঢাকা জেলা প্রশাসককে লিখিত চিঠিতে বলা হয়, হলমার্ক গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সোনালী ব্যাংকের অনুকূলে মর্টগেজকৃত এবং মর্টগেজের জন্য প্রস্তাবিত যেসব জমি রয়েছে, এর আশপাশে সরকারি খাসজমিও আছে। এ অবস্থায় জামানতের জন্য প্রস্তাবিত জমি-সংলগ্ন সরকারি খাসজমি চিহ্নিতকরণসহ ওই গ্রুপের সম্পত্তির অবস্থান জানা, দলিলপত্র যাচাই, চৌহদ্দি ও পরিচিতি (দাগ নম্বর, খতিয়ান নম্বরসহ জমির পূর্ণাঙ্গ তফসিল) নির্ণয়, কারখানা ভবনের অবস্থান নির্ণয়, অর্থঋণ আইনে প্রাপ্ত জমি ও চালু মিলের অবস্থান নির্ণয় এবং মিলগুলো কোন খতিয়ানে/কোন দাগে অবস্থিত তা নিরূপণের লক্ষ্যে সরকারি সার্ভেয়ার নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়। ব্যাংকটির কর্মকর্তারা জানান, হলমার্কের ঋণ কেলেঙ্কারি উদ্ঘাটনের আগে ২ হাজার ৬০১ দশমিক ৬ শতাংশ এবং উদ্ঘাটনের পর আরও ৩ হাজার ৫১৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ সম্পত্তি কিছু দলিলপত্র ছাড়াই বন্ধক নেয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। ব্যাংকের মূল্যায়নে বন্ধকীকৃত এই সম্পদের মূল্য ৩৮৯ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।

অন্যদিকে ঋণ কেলেঙ্কারি ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর ব্যাংকের দায় মেটাতে আরও ৭ হাজার ৬২৯ দশমিক ২১ শতাংশ জমি বন্ধকির জন্য প্রস্তাব করেছিল হলমার্ক গ্রুপ। ব্যাংকের হিসাবে ওই সম্পদের মূল্য ৭৮০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। সোনালী ব্যাংক বলছে, বন্ধকির জন্য প্রস্তাবিত এই সম্পত্তির মূল দলিল/সার্টিফায়েড কপি ব্যাংকের হেফাজতে আনা হয়েছে। এ অবস্থায় ব্যাংকটির অনুকূলে গৃহীত ও প্রস্তাবিত জামানতের মোট মূল্য এক হাজার ১০৭ কোটি ৪ লাখ টাকা। আর ব্যাংকটিতে শুধু হলমার্ক গ্রুপ কর্তৃক আত্মসাত্কৃত অর্থের পরিমাণ ২ হাজার ৫০৮ কোটি ২২ লাখ টাকা। এর মধ্যে ফান্ডেড দায় এক হাজার ৭০৮ কোটি ২৩ লাখ টাকা এবং নন ফান্ডেড দায় প্রায় ৮০০ কোটি টাকা।

জানা গেছে, হলমার্ক গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে থাকা ঢাকা জেলার সাভার থানার নন্দখালী মৌজার কান্দি বৈলারপুরে জামুর মুচিপাড়ায় এবং ধামরাই থানার সূতিপাড়ার চাড়িপাড়ায় বিভিন্ন দাগে ৬ হাজার ১১৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ জমির বন্ধক নিয়েছে সোনালী ব্যাংক। ওই দুই মৌজায় আরও ৭ হাজার ৬২৯ দশমিক ২১ শতাংশ জমি বন্ধকের জন্য প্রস্তাব করা হয়। এসব জমি চিহ্নিত করতে চায় সোনালী ব্যাংক। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বলছে, হলমার্ক গ্রুপের পরিচালকরা দুদকের মামলায় জেলে অন্তরীণ/পলাতক থাকায় প্রস্তাবিত সম্পত্তি ব্যাংকের অনুকূলে বন্ধক নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে ওই সম্পত্তি বিভিন্ন মামলায় অ্যাটাচমেন্ট করার জন্য আদালতে আবেদন দাখিল করা হয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর