রবিবার, ১৮ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ থেকে আজকের উন্নয়নশীল

— মাসুদ বিন মোমেন

নিজস্ব প্রতিবেদক

যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ থেকে আজকের উন্নয়নশীল

জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. মাসুদ বিন মোমেন বলেছেন, কেউ পেছনে পড়ে থাকবে না— এই প্রতিশ্রুতি ধারণ করে শান্তি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ থেকে আজকের উন্নয়নশীল কাতারে এই উত্তরণ। যেখানে রয়েছে এক বন্ধুর পথ পাড়ি দেওয়ার ইতিহাস। প্রথমবারের মতো এলডিসি ক্যাটাগরি থেকে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন করল বাংলাদেশ। এটি সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে সাহসী এবং অগ্রগতিশীল উন্নয়ন কৌশলে। যা সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কাঠামোগত রূপান্তর, যা সামাজিক অগ্রগতির মাধ্যমে বাংলাদেশকে দ্রুত উন্নয়নের পথে নিয়ে এসেছে। জাতিসংঘ সদর দফতরসংলগ্ন নিউইয়র্কের ডিপ্লোম্যাট সেন্টারে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশন কার্যালয়ে স্থানীয় সময় শুক্রবার বিকালে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন রাষ্ট্রদূত ড. মাসুদ বিন মোমেন। এই অনুষ্ঠানেই বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার ঘোষণার প্রাথমিক সনদ রাষ্ট্রদূতের হাতে তুলে দেন জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি) সেক্রেটারিয়েটের প্রধান রোলান্ড মোলেরাস। মিশনের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য উল্লেখ করা হয়। ওই অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত ড. মাসুদ বিন মোমেন বলেন, আমাদের সবার জন্য আজ এক ঐতিহাসিক দিন। অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে আপনাদের জানাচ্ছি যে, বাংলাদেশ এই প্রথম এলডিসি ক্যাটাগরি থেকে উত্তরণের সব নির্ণায়ক পূর্ণ করেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ শুধু একটি স্লোগানই নয়, সারা দেশের মানুষ আজ এর সুবিধা পাচ্ছেন। প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা ও জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আজ আমাদের হাতিয়ার।

 তিনি বলেন, এলডিসি ক্যাটাগরি থেকে উত্তরণের জন্য মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ সূচক এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা (ঝুঁকি) সূচক এ তিনটির যে কোনো দুটি অর্জনের শর্ত থাকলেও বাংলাদেশ এ তিনটি সূচকের মানদণ্ডেই উন্নীত হয়েছে। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিলের (ইকোসক) মানদণ্ড অনুযায়ী এ ক্ষেত্রে এ বছরে একটি দেশের মাথাপিছু আয় হতে হবে কমপক্ষে ১ হাজার ২৩০ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় তার থেকে অনেক বেশি, অর্থাৎ ১ হাজার ৬১০ মার্কিন ডলার। মানবসম্পদ সূচকে ৬৬ প্রয়োজন হলেও বাংলাদেশ অর্জন করেছে ৭২ দশমিক ৯। অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা (ঝুঁকি) সূচক হতে হবে ৩২ ভাগ। সেখানে ২৪ দশমিক ৮ ভাগ অগ্রগতি নিয়ে আরও ভালো অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। স্বল্পোন্নত দেশসমূহের জন্য ইস্তাম্বুল ঘোষণার কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, ২০২০ সালের মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশসমূহের অর্ধেক এই ক্যাটাগরি থেকে উত্তীর্ণ হবে। এটিই ছিল ইস্তাম্বুল ঘোষণার একটি প্রধানতম উদ্দেশ্য যা এজেন্ডা ২০৩০ বাস্তবায়ন অর্থাৎ দীর্ঘস্থায়ী শান্তি ও সমৃদ্ধি বিনির্মাণের পরিপূরকও বটে। বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

রাষ্ট্রদূত মাসুদ বলেন, আমরা আমাদের দেশকে উন্নয়নের ক্ষেত্রে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে চাই যা আমাদের দীর্ঘদিনের লালিত আকাঙ্ক্ষা। আজ বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ। আমরা এসডিজির সঙ্গে আমাদের জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনাকে একীভূত করেছি। এসডিজি বাস্তবায়নেও আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের এলডিসি থেকে উত্তরণ এসব দর্শনের সঙ্গে একই সূত্রে গাঁথা। এলডিসি ক্যাটাগরির দেশসমূহের এই উত্তরণ প্রক্রিয়া জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সম্মিলিত সাফল্যের স্বাক্ষর বহন করছে জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশকে উত্তরণের প্রক্রিয়ায় সহযোগিতার জন্য তিনি জাতিসংঘসহ বাংলাদেশের সব উন্নয়ন সহযোগীকে ধন্যবাদ জানান। এই উত্তরণকে টেকসই করতে এবং এজেন্ডা ২০৩০ বাস্তবায়নে এই সহযোগিতার ধারা অব্যাহত থাকবে। উত্তরণ প্রক্রিয়ায় থাকা স্বল্পোন্নত দেশসমূহের সঙ্গে বাংলাদেশ তার অভিজ্ঞতা ও সর্বোত্তম কর্মপন্থা ভাগ করে নিতে সদা প্রস্তুত রয়েছে। ওই অনুষ্ঠানে সিডিপি সেক্রেটারিয়েটের প্রধান রোলান্ড মোলেরাস বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় আয়ের কাঙ্ক্ষিত বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্য ও শিক্ষাসহ সামাজিক খাতগুলোর ব্যাপক উন্নয়ন এই উত্তরণের ক্ষেত্রে কমিটির সুপারিশ প্রদানকে সহজতর করেছে। সিডিপি এক্সপার্ট গ্রুপের চেয়ার প্রফেসর হোসে অ্যান্তোনিও ওকাম্পো বলেন, বাংলাদেশের সাফল্যমণ্ডিত উন্নয়নের ইতিহাস রয়েছে। তিনি বাংলাদেশের গতিশীল রপ্তানি খাত, মানবিক সম্পদ এবং স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতের ব্যাপক উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন। জাতিসংঘের এলডিসি, এলএলডিসি ও সিডস্-সংক্রান্ত কার্যালয়ের উচ্চতম প্রতিনিধি আন্ডার-সেক্রেটারি জেনারেল উটইকামানু বলেন, দারিদ্র্য হ্রাস ও উন্নয়নের অগ্রগতির জন্য বাংলাদেশে একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি হয়েছে। ১৪ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে অতিদারিদ্র্য সীমা। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অনেক বছর ধরে স্থিতিশীল রয়েছে। রূপকল্প ২০২১ নিরবচ্ছিন্নভাবে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রাধিকারসমূহকে পরিচালিত করে যাচ্ছে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বেলজিয়ামের স্থায়ী প্রতিনিধি মার্ক পিস্টিন, তুরস্কের স্থায়ী প্রতিনিধি ফেরিদুন হাদি সিনিরলিওলু, ইউএনডিপির এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের আঞ্চলিক ব্যুরোর পরিচালক ও জাতিসংঘের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হাওলিয়াং ঝু, ইউএনডিপির মানবিক উন্নয়ন রিপোর্ট অফিসের পরিচালক ড. সেলিম জাহান প্রমুখ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর