বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর অ্যাডভোকেট আহমেদ আলী বলেছেন, রাজনীতি এখন আর সেবা নয়, অনেকের কাছে তা ব্যবসা হয়ে গেছে। নগরীর বাগিচাগাঁওয়ে নিজ বাসায় সংক্ষিপ্ত আলাপচারিতায় গতকাল তিনি এ কথা বলেন।
আহমেদ আলী এখন গুরুতর অসুস্থ। তার প্রোস্টেট ক্যান্সার। সব সময় শয্যাশায়ী হয়ে থাকতে হয়। একটি কথার পর আরেকটি কথা গুছিয়ে বলতে তাকে কিছুক্ষণ সময় নিতে হয়। বয়সের ভারে ন্যুব্জ হয়ে পড়লেও প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ এখনো চিন্তা করেন দেশ ও জাতিকে নিয়ে। বিশেষ করে নিজের রাজনৈতিক গুরু বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কাটানো স্মৃতিগুলো তাকে সব সময় তাড়া করে ফেরে। তিনি ভাবেন আওয়ামী লীগের অতীত ও বর্তমান নিয়ে। তার মেয়ে আইরিন আহমেদ জানান, বর্ষীয়ান এই রাজনীতিকের প্রোস্টেট ক্যান্সার। তার মেরুদণ্ডের অনেক হাড় ক্ষয় হয়ে গেছে। প্রতি মাসে একটা করে হরমোন ইনজেকশন নিতে হয় তাকে। ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাকালীন সহসভাপতি এবং আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আহমেদ আলী বলেন, দেশমাতৃকাকে বহিঃশত্রুর হাত থেকে মুক্ত করতে জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল আওয়ামী লীগসহ আপামর জনসাধারণ। সেদিন কারও কোনো ব্যক্তিগত চাওয়া ছিল না। সবাই বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসে তার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করেছিল। জাতির অবিসংবাদিত নেতাকে অর্থের মোহ কখনো কাবু করতে পারেনি। তাই স্বাধীনতা-পরবর্তী রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলেও ব্যক্তিগত আদর্শ থেকে তিনি কখনো বিচ্যুত হননি। তবে চারপাশে থাকা কতিপয় চাটুকার তার বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র করে তাকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করেছে। এসব ষড়যন্ত্রের বলি হয়ে শেষ পর্যন্ত সপরিবার নিজের জীবনকে বিলিয়ে দিতে হয়েছে তাকে। তবে সে ষড়যন্ত্র এখনো শেষ হয়নি বলে তিনি মনে করেন। কারণ নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত একটি পক্ষ। তিনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার কাছে আবেদন জানান এসব চাটুকারের লাগাম টেনে ধরতে। অন্যথায় জাতি গঠনে আওয়ামী লীগের সব ত্যাগ ম্লান হয়ে যেতে পারে বলে তিনি মনে করেন। অ্যাডভোকেট আহমেদ আলী ভাষা আন্দোলন করেছেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন আগরতলা যুবশিবির কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর কুমিল্লা শত্রুমুক্ত হলে প্রথম মুক্তির বিজয় পতাকা উত্তোলন করেন তিনি। সত্তরের সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করে মেম্বার অব কনস্টিটিউশন অ্যাডমিনিস্ট্রেটর (এমসিএ) হয়েছিলেন। বৃহত্তর কুমিল্লা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। বার কাউন্সিলের প্রথম নির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যানও হয়েছিলেন আহমেদ আলী। এ বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ ১৯৩২ সালের পয়লা মার্চ বৃহত্তর কুমিল্লার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার কাজলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। ‘আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার ইতিকথা’সহ কয়েকটি বই লিখেছেন আহমেদ আলী।