রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর জাতিগত নিধনযজ্ঞ এবং নির্যাতনের ঘটনায় সমালোচনা ও নিন্দার মুখে থাকা মিয়ানমারের ডি ফ্যাক্টো নেত্রী অং সান সু চি অস্ট্রেলিয়া সফরের একমাত্র প্রকাশ্য ভাষণ বাতিল করেছেন। বিস্তারিত কারণ উল্লেখ না করে শুধু জানানো হয়েছে, সুস্থবোধ না করায় ভাষণটি বাতিল করা হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজ জানায়, গতকাল সিডনিতে একটি অনুষ্ঠানে মূল ভাষণ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আগের দিন তা বাতিল করা হয়। গত শনিবার অস্ট্রেলিয়ায় পৌঁছে এখনো জনসম্মুখে কোনো কথা বলেননি সু চি। উল্লেখ্য, অস্ট্রেলিয়ায় আসিয়ানের বিশেষ সম্মেলনে যোগ দিতে সিডনিতে অবস্থান করছেন সু চি। সফরে তিনি সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন এবং অস্ট্রেলীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একান্ত রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন। সম্মেলন ও রুদ্ধদ্বার বৈঠকে সু চির বক্তব্যের বিস্তারিত জানা যায়নি। ফলে লোয়ে ইনস্টিটিউট আয়োজিত অনুষ্ঠানে সু চির একমাত্র প্রকাশ্য ভাষণ নিয়ে আগ্রহ ছিল অনেকেরই। সফরে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বেশ বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছে তাকে। অনুষ্ঠানটিতে ভাষণের পাশাপাশি দর্শকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেওয়ার কথা ছিল সু চির। আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, লোয়ে ইনস্টিটিউটকে মিয়ানমার দূতাবাস জানিয়েছে, সুস্থবোধ না করায় অনুষ্ঠানটিতে অংশ নিতে পারছেন না রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা। তাই অনুষ্ঠানটি বাতিল করা হয়েছে।
এবিসি জানিয়েছে, অনুষ্ঠানটিতে সু চির বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারীদের উপস্থিত থাকার কথা ছিল। অস্ট্রেলিয়া সফরে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে সু চিকে বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছে। সু চিসহ ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, ফিলিপাইনের নিপীড়ক নেতৃত্বের বিরুদ্ধে উত্তাল বিক্ষোভ হয়েছে। আসিয়ান সম্মেলন স্থলের বাইরে এই বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। সিডনিতে নিপীড়ক নেতাদের বিরুদ্ধে মিছিলে নেমেছেন হাজার হাজার মানুষ। বিক্ষোভকারীরা ফিলিপাইনে মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়ন, ভিয়েতনামের রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি, কম্বোডিয়ায় মানব হুন সেনের সীমাহীন বল প্রয়োগ ও স্বেচ্ছাচার এবং মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর সামরিক নিধনযজ্ঞ বন্ধের দাবি জানান। বিক্ষোভ মিছিলের এক ব্যঙ্গাত্মক প্লাকার্ডে সু চির আদলে হিটলারকে জীবন্ত করা হয়। বিক্ষোভকারীরা নানা ধরনের ব্যঙ্গাত্মক চিত্র সংবলিত প্লাকার্ড আর ব্যানার নিয়ে মিছিলে অংশ নেন। প্লাকার্ডগুলোর একটিতে দেখা যায়, অং সান সু চির মুখে হিটলার জীবন্ত হয়েছে তার গোঁফ আঁকার মধ্য দিয়ে। আরেকটি ছবিতে দাবি জানানো হয়েছে নোবেল পুরস্কার ফিরিয়ে দেওয়ার। এদিকে আসিয়ান সম্মেলনের আলোচনায়ও উঠে এসেছে রোহিঙ্গা সংকটের প্রশ্ন। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, তিন দিনের সম্মেলনের সমাপনী দিনের একটি দীর্ঘ সময় এই সংকট নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে আসিয়ান দেশগুলো রোহিঙ্গা সংকটে হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছে।