বুধবার, ২১ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা
নেপাল ট্র্যাজেডি

চিরনিদ্রায় শায়িত নিহতরা

প্রতিদিন ডেস্ক

হাজারো মানুষের ভালোবাসায় চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন নেপালে ইউএস-বাংলার বিমান দুর্ঘটনায় নিহতরা। ১২ মার্চ নেপালের ত্রিভুবন বিমানবন্দরে বিমান দুর্ঘটনায় ৫১ জন যাত্রী নিহত হন। এর মধ্যে বাংলাদেশের ২৬ জন রয়েছেন। গত সোমবার নিহতদের মধ্যে ২৩ জনের লাশ দেশে নিয়ে আসা হয়। সোমবারই জানাজা শেষে তাদের লাশ হস্তান্তর করা হয় স্বজনদের কাছে। এরপর গতকাল নিজ নিজ এলাকায় তাদের লাশ দাফন করে স্বজনরা। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :—

রাজশাহী : বিমান দুর্ঘটনায় নিহত আখতারা বেগমের মরদেহ দাফন করা হয়েছে। গতকাল সকালে মহানগরীর গোরহাঙ্গা গোরস্তান মসজিদের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হন তিনি। নিহত আখতারা নগরীর উপশহর এলাকার নজরুল ইসলামের স্ত্রী। এ দুর্ঘটনায় নজরুল ইসলামও নিহত হয়েছেন। তবে তার মরদেহ এখনো দেশে আসেনি। সকাল ৯টা ২০ মিনিটে তার মরদেহ উপশহর ক্রীড়া সংঘের মাঠে পৌঁছায়। এখানে তার শেষ জানাজায় মানুষের ঢল নামে। এ সময় শোকাবহ হয়ে ওঠে এলাকার পরিবেশ। জানাজায় রাজশাহী সিটি মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, সাবেক মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সরকার, মহানগর ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি লিয়াকত আলী লিকুসহ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ উপস্থিত ছিলেন। আখতারা বেগমের জামাতা অ্যাডভোকেট ইমরান আলী বলেন, তার শাশুড়ির মরদেহ দেশে এলেও শ্বশুর নজরুল ইসলামের মরদেহ শনাক্ত হওয়া নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। মরদেহ দ্রুত দেশে আনার জন্য রাষ্ট্রের সহযোগিতা কামনা করেন ইমরান আলী। বিমান দুর্ঘটনায় রাজশাহীর তিন দম্পতিসহ মোট সাতজন ছিলেন। এদের মধ্যে ছয়জনই নিহত হয়েছেন। নিহত ছয়জনের মধ্যে সোমবার পাঁচজনের মরদেহ দেশে আসে। এর মধ্যে কেবল আখতারা বেগমের মরদেহ দাফনের জন্য রাজশাহী নিয়ে যাওয়া হয়। বাকি চারজনের মধ্যে তিনজনের মরদেহ ঢাকার শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। রাজশাহীর নওদাপাড়া এলাকার গোলাম কিবরিয়ার নিউইয়র্ক প্রবাসী মেয়ে বিলকিস আরা মিতু, শিরোইল এলাকার বেগম হুরুন নাহার ওরফে বিলকিস বানু ও তার স্বামী হাসান ইমামকে ঢাকায় দাফন করা হয়েছে। আর রুয়েট শিক্ষক এমরানা কবির হাসির স্বামী রকিবুল হাসানের মরদেহ দাফন করা হয়েছে তার গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার বাগুটিয়া গ্রামে। ফরিদপুর : হাজারো মানুষের ভালোবাসায় চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন নিহত ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার লস্করদিয়া ইউনিয়নের মাহমুদুর রহমান রিমন। গতকাল বেলা ১০টার দিকে চতুর্থ দফা জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয় লস্করদিয়া গ্রামের দানেশমান বাগদাদী মাজার শরিফের পাশে পারিবারিক কবরস্থানে। মাহমুদুর রহমান রিমনের লাশ সকাল সাড়ে ৮টায় গ্রামের বাড়ি পৌঁছালে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। সকাল ১০টার দিকে লস্করদিয়া আতিকুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ে রিমনের জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বদরুদ্দোজা সুমন, উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দ শাহিনুজ্জামানসহ হাজারো মানুষ শরিক হন। রিমনের লাশ গ্রামের বাড়িতে আসার পর যান জেলা প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়া। এ সময় তিনি শোকাহত পরিবারকে সমবেদনা জানান। জেলা প্রশাসক নিহতের পরিবারকে তাত্ক্ষণিকভাবে ৫০ হাজার টাকা অনুদান প্রদান করেন এবং উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়। রিমনের পিতার নাম মশিউর রহমান। মা বাবার দুই ছেলের মধ্যে রিমন ছিল সবার বড়। বিয়ে করেছেন প্রায় সাত বছর আগে। তার স্ত্রীর নাম সানজিদা বেগম ঝর্ণা। শরীয়তপুর :  বৈশাখী টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার আহম্মেদ ফয়সালের মরদেহ তার শরীয়তপুরের ডামুড্যায় গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়েছে। সোমবার রাত ৩টার দিকে তার মরদেহ বহনকারী গাড়িটি ডামুড্যায় এসে পৌঁছায়। সকাল ১০টায় পূর্ব মাদারীপুর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ মাঠে জানাজা শেষে তার মরদেহ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার দক্ষিণ ডামুড্যার সামছুদ্দিন সরদারের ছেলে ফয়সাল। নোয়াখালী : নিহত নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার একই পরিবারের তিনজনের জানাজা শেষে তাদের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। সকাল সাড়ে ১০টায় উপজেলার কেশারখিল গ্রামের সাতানি ভূঁইয়াবাড়ির সামনে তাদের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে ভোর ৫টায় নিহতদের মৃতদেহ গ্রামের বাড়িতে এসে পৌঁছে। নিহতরা হচ্ছেন, সোনাইমুড়ী উপজেলার কেশারখিল গ্রামের সাতানি ভূঁইয়াবাড়ির মৃত আবদুস সালেকের ছেলে রফিক জামান রিমু ও রফিক জামানের স্ত্রী ও সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সমন্বয়ক সানজিদা হক বিপাশা এবং তাদের ৭ বছর বয়সী একমাত্র ছেলে অনিরুদ্ধ। জানাজায় সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের সম্পাদক ডা. বদিউল আলম, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, আত্মীয়স্বজন ও স্থানীয় লোকজন অংশগ্রহণ করেন। মানিকগঞ্জ : নিহত তাহিরা তানভীন শশীর দাফন মানিকগঞ্জে সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল বাদ জোহর সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ মাঠে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় জেলা প্রশাসক, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম মহীউদ্দীন, আইনজীবী সমিতির সভাপতি আবদুল মজিদ ফটোসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। শহরের সেওতা কবরস্থানে তাহিরা তানভীন শশীকে দাফন করা হয়। স্বজনরা জানান, ৭ম বিবাহবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে শশী এবং তার স্বামী ডা. শাওন নেপালের উদ্দেশে যাত্রা করেন। বিমানটি দুর্ঘটনায় পতিত হলে ঘটনাস্থলেই মারা যান শশী। আশঙ্কাজনক অবস্থায় ডা. শাওনকে উদ্ধার করা হয়। শশী মানিকগঞ্জ শহরের দাশড়া এলাকার রেজা হাসানের মেয়ে। স্বামী ডা. রেজোয়ানুল হক শাওন মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার গোপালপুর এলাকার মোজাম্মেল হকের সন্তান। শাওন এখন আশঙ্কামুক্ত। 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর