বৃহস্পতিবার, ২২ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা
পুলিশ পরিদর্শক জালাল হত্যা

দুই দিনেও গ্রেফতার হয়নি খুনি

সাখাওয়াত কাওসার

দুই দিনেও গ্রেফতার হয়নি খুনি

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক জালাল উদ্দীন হত্যাকাণ্ডের ৪৮ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও খুনি এখনো গ্রেফতার হয়নি। উদ্ধার হয়নি গত ১০ জানুয়ারি মিরপুর ঝিলপাড়ের বাসা থেকে খোয়া যাওয়া পুলিশ সার্জেন্ট মামুনুর রশীদ ও সোহেল রানার সরকারি অস্ত্র দুটিও। তবে সন্দেহজনক হাসানের ছবিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদি দেশের সবকটি বিমানবন্দর, সমুদ্র বন্দর এবং স্থলবন্দরে পাঠিয়ে দিয়েছে পুলিশ। অন্যদিকে, ঘটনাস্থলের বৈশিষ্ট্য এবং ঘটনার পারিপার্শ্বিকতার সঙ্গে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের কিছুটা মিল খুঁজে পাচ্ছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টদের অনেকেই। পেশা ভাঙারি  ব্যবসায়ী হলেও হাসানের সঙ্গে এলাকার কারও কোনো সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায়নি। আবার মাত্র পাঁচ মাস আগে সে ওই বাড়িতে ভাড়া উঠেছিল। আর তার পার্শ্ববর্তী রুমের ভাড়াটিয়া এর মাত্র এক মাস আগে ওই বাড়িতে ভাড়া উঠেছিলেন। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ডিবির হেফাজতে থাকা হাসানের স্ত্রী ও দুই শিশু সন্তানসহ মোট সাতজনকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। পুলিশ কর্মকর্তা জালাল খুনের ঘটনায় ডিবি পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করছে। জালাল উদ্দিনের মাথা থেকে উদ্ধারকৃত বুলেটের খোসাটির পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। গত ১৯ মার্চ রাত সাড়ে ১২টার দিকে ডিবির পশ্চিম বিভাগের সিনিয়র সহকারী কমিশনার শাহাদাত হোসেন সোমার নেতৃত্বে দুই সার্জেন্টের অস্ত্র চুরির সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করতে মিরপুর মডেল থানাধীন মধ্য পীরেরবাগের আলিম উদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়ের কাছেই ১০৫/এ/১ নম্বর আড়াইতলা বাড়িতে অভিযান চালায়। সেখানেই পরিদর্শক জালাল দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত হন। আড়াইতলা ওই বাড়িটির মালিক মৃত হেলাল। তিনি সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হয়েছেন। তার স্ত্রী লাভলী বেগমও মারা গেছেন। দুই মেয়ে লিজা আর এমিকা পাশের পাবনা গলির ২৬২/১ নম্বর মধ্য পীরেরবাগের নয়তলা বাড়ির দ্বিতীয় তলায় বসবাস করেন। তাদের একমাত্র ভাই রাফী কারাবন্দী। মেয়েদের বাড়িতে গিয়ে তাদের পাওয়া যায়নি। তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ। গতকাল সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িটির সামনে বিশাল বিশাল গর্ত করে বাড়ি তৈরির কাজ করছেন হেলালের ভাই বেলাল। আড়াইতলা বাড়িটির প্রবেশের তেমন কোনো রাস্তা নেই। সামনের দিক থেকে বাড়িটিতে ইট-বালু-মাটি পেরিয়ে যেতে হয়। আর পেছন দিক থেকে বাড়িটিতে দেড় ফুট গলির রাস্তা দিয়ে ঢুকতে হয়। এ ছাড়া বাড়িটিতে প্রবেশের আর কোনো রাস্তা নেই। বাড়িটির দক্ষিণ ও পূর্ব দিকে লাগোয়া দুটি বাড়ি। এ দুটি বাড়ির মাঝে প্রায় দুই ফুট সরু একটি গলি রয়েছে। বাড়িটির এক মহিলা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলছিলেন, বাড়িটির নিচতলায় ও দোতলায় পাঁচটি করে দশটি আর তৃতীয় তলায় চিলেকোঠায় তিনটি রুম। চিলেকোঠার তিনটি রুমের মধ্যে মাঝের রুমে হাসান নামে একজন ছিল। সে চার মাস আগে রুমটি ভাড়া নেয়।

 তার বাড়ি বরিশাল বলে জানতাম। হাসান তার স্ত্রী আর দুই মেয়েকে নিয়ে বসবাস করত। এক মেয়ের বয়স দুই থেকে আড়াই বছর হবে। আরেক মেয়ে কোলে। পাঁচ থেকে ছয় মাস বয়স হবে। হাসান ভাঙারির ব্যবসা করে বলে জানিয়েছে। তার স্ত্রীর চলাফেরা ছিল রহস্যজনক। কোনো কোনো দিন বোরকা পরত। আবার কোনো সময় বোরকা ছাড়াই বের হতো। হাসানের বয়স কম। পরিবারটির চলাফেরার মধ্যে এক ধরনের লুকিয়ে থাকা বা জঙ্গি জঙ্গি ভাব ছিল।

হাসানের উত্তর দিকের একটি রুমে একজন গাড়ি চালক থাকত। তিনি হাসানের এক মাস আগে অর্থাৎ পাঁচ মাস আগে স্ত্রী আর এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে বসবাস করছিলেন। হাসানের স্ত্রী ও দুই সন্তান, পাশের রুমের চালককে পুরো পরিবারের সবাইকেসহ ধরে নিয়ে গেছে। আর নিচ থেকে একজন সবজি বিক্রেতা ও একজন চালককে পুলিশ নিয়ে গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, পুলিশের অস্ত্র চুরি করা এবং পুলিশকে খুন করার সাহস বড় বড় অপরাধীরও নেই। হাসান ও তার পাশের এক ভাড়াটিয়া এক মাসের ব্যবধানে ওই বাড়িটিতে উঠেছিলেন। যে এলাকায় তারা বাসা ভাড়া করেছিলেন সেখানটায় নজরদারি অপেক্ষাকৃত কম। বাড়িটির পিছন সাইড থেকে পালানোর সুযোগও রয়েছে। স্কেচ করে হাসানের বিভিন্ন ভঙ্গির ছবি দেওয়া হয়েছে বিমান, স্থল ও সমুদ্র বন্দরে। যাতে সে দেশ ত্যাগ না করতে পারে।

তবে হাসান জঙ্গি সংগঠনের সদস্য, এ বিষয়ে ভিন্ন মত পোষণ করেন ডিবির যুগ্ম কমিশনার আবদুল বাতেন। যদিও হাসানের অতীত অপরাধের রেকর্ডও তার কাছে নেই। তিনি বলেন, হাসানকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। প্রাথমিকভাবে হাসান সন্ত্রাসী বলে ধারণা করা হচ্ছে। হাসান কোনো জঙ্গি সংগঠনের সদস্য কিনা তা এখনো নিশ্চিত নয়। সে বিষয়টি জানার চেষ্টা চলছে। হাসান গ্রেফতার হলেই সব পরিষ্কার হয়ে যাবে। এ ঘটনায় ডিবি পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করবে।

তিনি বলেন, নিহত পুলিশ কর্মকর্তার মাথা থেকে উদ্ধারকৃত বুলেটের খোসাটির ব্যালাস্টিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সিআইডির ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ সার্জেন্টের খোয়া যাওয়া অস্ত্রের গুলিতে জালাল উদ্দিনের মৃত্যু হয়েছে কিনা তা উদ্ধারকৃত বুলেটের পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বা হাসান গ্রেফতার হওয়ার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে। তার আগে সুনিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

সর্বশেষ খবর