শুক্রবার, ২৩ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

দিনাজপুরের পুনর্ভবায় খেলার মাঠ

রিয়াজুল ইসলাম, দিনাজপুর

দিনাজপুরের পুনর্ভবায় খেলার মাঠ

দিনাজপুরে পুনর্ভবা নদীর মাঠে খেলছে শিশু-কিশোররা —বাংলাদেশ প্রতিদিন

একসময়ের খরস্রোতা নদীগুলোর কোনোটিতে এখন চলছে ধানসহ বিভিন্ন ফসলের চাষ, খেলাধুলা, বালু উত্তোলন। এ ছাড়া দখল আর দূষণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে অন্য নদীগুলো। অনেক এলাকায় নদী ভরাট করে চলছে দখল।

অথচ নদীকে বাঁচিয়ে রাখতে নেই কোনো পরিকল্পনা। অন্যদিকে শুকনো মৌসুমের আগেই নদী শুকিয়ে যাওয়ায় হারিয়েছে অনেক দেশীয় প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণী। জেলেরা দিন দিন পেশা বদলিয়ে অন্যত্র যাচ্ছে। তবে কয়েকটি নদীতে ড্রেজিং করার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে বলে জানায় পানি উন্নয়ন বোর্ড। আবার সেচসুবিধার জন্য রাবার ড্যামও স্থাপন করা হয়েছে নদীতে। ঢেপাসহ বিভিন্ন নদীর বুকে ধান, ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ হচ্ছে। নয় তো ধু-ধু বালুচর। চরের কোথাও হাঁটুপানি আবার কোথাও পানিবিহীন গর্ত। যেন বালু বুকে নিয়ে পানির জন্য আর্তনাদ করছে নদী। অথচ অতীতে ঢেপা, গর্ভেশ্বরী, পুনর্ভবাসহ বিভিন্ন নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল ব্যবসা-বাণিজ্য কেন্দ্র। এসব নদী দিয়ে একসময় চলত বড় বড় পালতোলা নৌকা। আজ আর নেই সেই অবস্থা। অনেক নদী হারিয়েছে গতিপথ অথবা অস্তিত্ব। অনেক স্থানে নদী টিকে আছে নামেই। খনন ও সংস্কার না করায় নদীর নাব্য হারিয়েছে। এতে এ অঞ্চলে পরিবেশ মারাত্মক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ছে। দখল আর ভরাটে নদীগুলোর পানির ধারণক্ষমতা কমে যাওয়ায় বর্ষাকালে দেখা দিচ্ছে বন্যা। বর্ষায় পা?নি থাক?লেও শুকনো মৌসুমে নদীর বুক হ?য়ে ও?ঠে বিস্তীর্ণ মাঠ। দিন দিন ফাঁকা মাঠগু?লোয় অবাধে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘর নির্মাণ করেছেন স্থানীয়রা। খেলার মাঠ না পে?য়ে নদীতে খেলা ক?রে শিশু-?কিশোররা। জেলার ওপর দিয়ে ১৯টি নদ-নদী প্রবাহিত হয়। এগুলো হলো ছোট আত্রাই, বড় আত্রাই, করতোয়া, কাঁকড়া, ঢেপা, পুনর্ভবা, গর্ভেশ্বরী, ছোট যমুনা, ইছামতী, পাথরঘাটা, নর্ত, ছোট ঢেপা, বেলান, নলসিসা, তুলসীগঙ্গা, চিরি, মহিলা, তেঁতুলিয়া (তুলাই) ও ভেলামতী। এসব নদ-নদীর মোট দৈর্ঘ্য ৭২৪ কিলোমিটার। ১৩ উপজেলায় ছোট-বড় বিল রয়েছে ৭৫টি। কৃষি বিভাগ জানায়, শুষ্ক মৌসুমে জেলার ছোট-বড় সব নদ-নদীর চরে সহস্রাধিক চাষি ৯০৬ হেক্টর জমিতে ব্রি-২৮ ও ৩২ জাতের বোরো ধান, তরমুজ, আলু, মরিচ, সবজিসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ করছেন। ভূমিহীন কৃষকরা সুযোগ পেলেই এসব নদ-নদীর চরে চাষাবাদ করেন। দিনাজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী সিদ্দিকুজ্জামান নয়ন বলেন, ‘ড্রেজিং না করায় ঢেপাসহ কয়েকটি নদ-নদীর প্রস্থ ও গভীরতা কমে প্রায় সমতল হয়ে গেছে। বর্ষা মৌসুমে পলি ও বালু পড়ে নদীগুলো ভরাট হয়ে মরা নদীতে পরিণত হয়। জেগে ওঠা চরে চলছে চাষাবাদ। আবার বর্ষা মৌসুমে দেখা দিচ্ছে কোনো কোনো নদীতে বন্যা। এজন্য বিগত বন্যার পরই নদীর প্রবাহ ঠিক রাখতে পুনর্ভবা, ছোট ও বড় ঢেপা এবং গর্ভেশ্বরী নদীতে ড্রেজিং করার প্রস্তাব ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।’ এর আগে কৃষি মৌসুমে উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে পুনর্ভবা নদীর গৌরীপুর এলাকায় একটি রেগুলেটর-কাম-ব্যারাজ নির্মাণ প্রকল্পের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল, যা এরই মধ্যে গৃহীত হয়েছে। নদী দখল হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নদী শাসন করার কাজ পানি উন্নয়ন বোর্ডের। কিন্তু নদীর ভূমি রক্ষার দায়িত্ব ভূমি অফিসের। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ভূমি অধিদফতরের যৌথ সমন্বয়ে দখলমুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে নদী রক্ষা কমিশন রয়েছে। এ বিষয়টা তারাই দেখে।’

তিনি বলেন, জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত নদ-নদী ড্রেজিং করে বাঁধ ও জলকপাট নির্মাণ করে পানির সঠিক ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে কৃষিক্ষেত্রে সেচসুবিধা অব্যাহত রাখা সম্ভব। উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে পার্বতীপুরের খড়খড়িয়া নদীতে রেগুলেটর স্থাপন করায় কৃষক এখন ভালো উপকার পাচ্ছেন। কয়েক বছর আগেই আত্রাই নদীর চিরিরবন্দর ও দিনাজপুর সদরের অংশে সেচের জন্য স্থাপিত হয়েছে তিনটি নদীতে রাবার ড্যাম।

সর্বশেষ খবর