শনিবার, ৩১ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

২০ রোগীর চোখ নষ্ট করেছে ইম্প্যাক্ট

জামান আখতার, চুয়াডাঙ্গা

‘চোখে ছানি পড়ায় সবকিছু ঝাপসা দেখা যেত। ভালোভাবে দেখাতে পাব, এ আশায় ইম্প্যাক্ট হাসপাতালে ছানি অপারেশন করে আমার চোখটা পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেল।’ চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার আলোকদিয়া গ্রামের অলি মোহাম্মদ তার চোখ হারানোর বর্ণনা দিচ্ছিলেন এভাবে। তার সঙ্গে একই দিনে একই অপারেশন করে ২০ জনের চোখ পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। অনেকের আশঙ্কা কোনো কারণে বাকি চোখটি নষ্ট হলে চিরতরে অন্ধ হয়ে থাকতে হবে তাদের। রোগীর স্বজন ও ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ৫ মার্চ চুয়াডাঙ্গার ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক হাসপাতালে ২৪ রোগীর চোখের ছানি অপারেশন করা হয়। পরদিন ৬ মার্চ ২৪ রোগীর সবাইকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ছাড়পত্র প্রদান করে। ওই সময় বলা হয়, চোখ ভালো আছে, তাদের অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে।

হাসপাতালের ছাড়পত্র পেয়ে সব রোগী নিজ নিজ বাড়ি চলে যান। কিন্তু তিন-চার দিন পর থেকে রোগীদের চোখে ইনফেকশন দেখা দেয়। চোখ ফুলে যায়। রক্ত-পুঁজ জমা হতে থাকে। চোখে যন্ত্রণা শুরু হয়। এ অবস্থায় রোগীরা ইম্প্যাক্ট হাসপাতালে আসতে থাকেন। এভাবে ২৪ জনের মধ্যে ২০ জনের চোখেই দেখা দেয় ইনফেকশন।

চোখ নষ্ট হয়ে যাওয়া ব্যক্তিরা হলেন- চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার নতিডাঙ্গা গ্রামের ফাতেমা খাতুন, দামুড়হুদা উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামের তায়েব আলী, আলমডাঙ্গা উপজেলার খাসকররা গ্রামের লাল মোহাম্মদ, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার গাইদঘাট গ্রামের গোলজার হোসেন, দামুড়হুদা উপজেলার চিত্লা গ্রামের নবিছদ্দিন, বড়বলদিয়া গ্রামের আয়েশা খাতুন, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার আলোকদিয়া গ্রামের অলি মোহাম্মদ, জীবননগর উপজেলার সিংনগর গ্রামের আজিজুল হক, দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা গ্রামের গোলজান বিবিসহ ২০ জন। এ অবস্থায় বিপাকে পড়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তারা নিজেদের উদ্যোগে জীবাণু আক্রান্ত ২০ রোগীকে নিয়ে যান ঢাকায়। ঢাকায় নিয়ে ২০ জনকে ভর্তি করা হয় ইস্পাহানি ইসলামিয়া আই ইনস্টিটিউটে। পরে সেখান থেকে ১০ জনকে ভর্তি করা হয় ঢাকার ভিশন আই হাসপাতালে। কিন্তু সব প্রচেষ্টা ভেস্তে গেছে। জীবাণু আক্রান্ত ২০ রোগীর কারোরই চোখ ভালো হয়নি। নষ্ট হয়ে গেছে পুরোপুরি।

ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি স্বাস্থ্য ক্লিনিকের প্রশাসক ডা. শাফিউল কবীর বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত রোগীদের অন্য চোখটি যাতে নষ্ট না হয় সে জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে। চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জন ডা. খায়রুল আলম জানান, ২০ রোগীর চোখ নষ্ট হওয়ার বিষয়টি জানার পর আমরা ইম্প্যাক্ট হাসপাতাল পরিদর্শন করেছি। তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। একই সঙ্গে বৃহস্পতিবার থেকে ওই হাসপাতালে সব ধরনের চোখের চিকিৎসা বন্ধ রাখার নিদের্শ দেওয়া হয়েছে। আগামী ২ এপ্রিলের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমাদানের নির্দেশনাও রয়েছে।

সর্বশেষ খবর