শনিবার, ৩১ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

চিকিৎসকদের ভুল করার সুযোগ নেই

-------- ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন

নিজস্ব প্রতিবেদক

চিকিৎসকদের ভুল করার সুযোগ নেই

হাসপাতালে বাণিজ্যের কোনো সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন। তিনি বলেন, চিকিৎসাসেবার নামে বেহাল অবস্থা চলছে এমনটি মনে করার কোনো কারণ নেই। হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের একমাত্র দায়িত্ব মানুষের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা। ব্যবসা করা বা গাফিলতি করা নয়। জনসেবার মহান ব্রত মাথায় নিয়েই তারা এ পেশায় এসেছেন। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তিনি। বিশেষ সাক্ষাৎকারে দেশের চিকিৎসাসেবার বেহাল দশা, অভিজাত হাসপাতালগুলোর বাণিজ্য, রাজধানী ঢাকার হাসপাতালগুলোর বিরুদ্ধেই অভিযোগের পাহাড়, এ নিয়ে মাঝে মাঝে অভিযান এবং জরিমানাসহ চিকিৎসকদের দায়িত্বশীল আচরণের বিষয়গুলো উঠে আসে। ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেন, অভিজাত হাসপাতালগুলো শুধুই বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত কথাটি সব ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। ঢালাওভাবে এ মন্তব্য ঠিক হবে না। আমার জানা মতে, আমাদের নামকরা মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসকদের একজন প্রফেসর ডা. আবদুল্লাহ। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক। হাসপাতালের বাইরে সেন্ট্রাল হাসপাতালের উল্টো দিকে তার চেম্বার রয়েছে। সেখানে এখনো তিনি ১০০ টাকা ভিজিটে রোগী দেখেন। এরকম উদাহরণ আরও অনেক প্রবীণ চিকিৎসকের ক্ষেত্রেই আমরা দিতে পারি।

সরকারি হাসপাতালগুলোর বেহাল দশা মানতে রাজি নন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের সরকারি হাসপাতালগুলো এখন অনেক উন্নত। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, সলিমুল্লাহ হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা অত্যন্ত উন্নতমানের। শুধু তাই নয়, হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসার পাশাপাশি বিনামূল্যে ওষুধ দেওয়া হয়। নামমাত্র মূল্যে অপারেশন করা হয়। দেশে চিকিৎসা ক্ষেত্রের সাফল্য তুলে ধরে তিনি বলেন, কার্ডিওলজিতে অনেক বেশি এগিয়ে গেছে দেশ। আমি হৃদরোগের পেশেন্ট। জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট থেকেই বুকে প্রেসমেকার লাগিয়েছি। এরপর সব কাগজপত্র নিয়ে সিঙ্গাপুরে দেখিয়েছি। তারা অবাক হয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করল, বাংলাদেশ কীভাবে এটি পারল? কোথাও কোনো ভুল হয়নি। সিঙ্গাপুরের এই প্রশংসা শুনে একজন বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে, একজন চিকিৎসক হিসেবে গর্বে আমার বুক ভরে গেছে। শুধু তাই নয়, চোখের চিকিৎসার ক্ষেত্রেও অনেক এগিয়ে গেছে আমাদের দেশ। সরকারি-বেসরকারি প্রতিটি হাসপাতালেই চোখের চিকিৎসার জন্য উন্নতমানের বিভাগ রয়েছে। চোখের জন্য আলাদা ইনস্টিটিউট, আলাদা হাসপাতাল রয়েছে। হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের কাছে জিম্মি সাধারণ মানুষ। টাকা দিয়েও চিকিৎসা মেলে না। সাধারণ মানুষের এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) প্রতিষ্ঠাতা ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন। তিনি বলেন, আমি বলছি না, আমাদের কোথাও কোনো ভুল হচ্ছে না। হচ্ছে। কখনো কখনো অসতর্কতাবশত ভুল হচ্ছে। সে জন্য আমাদের আরও বেশি সতর্ক হতে হবে। সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, ইন্টার্ন চিকিৎসকরা হয়তো কখনো কখনো না বুঝে ভুল করে ফেলতে পারে। কিন্তু ডিগ্রিধারী চিকিৎসক ভুল করবেন না। এক্ষেত্রে কোনো চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে জানাই। আমাদের সংগঠন থেকে তাত্ক্ষণিক প্রতিবাদ করি। রাজধানীর হাসপাতালগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় এবং মাঝে-মধ্যে অভিযান ও জরিমানার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হ্যাঁ, আমাদের কিছু ঘাটতি রয়েছে। এটা ঠিক। তবে আমরা শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করছি। আরও শোধরানো উচিত। আর অভিযানের কথা বলছেন? অভিযোগ পেলে তো অভিযান এবং জরিমানা হবেই। এটি অব্যাহত থাকবে। তবে এই অভিযান ও জরিমানা সাধারণত চিকিৎসা অবহেলা, খাবারের নিম্নমান-সংক্রান্তই হয়ে থাকে। চিকিৎসকদের দায়িত্ব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চিকিৎসকদের সঙ্গে প্রতিটি বৈঠকেই আমি নিজেদের দায়িত্ব স্মরণ করে দেওয়ার চেষ্টা করি। কারণ রাষ্ট্র জনগণের টাকা দিয়ে আমাদের চিকিৎসক তৈরি করেছে। আমরা যেন নিজের প্রতি, রাষ্ট্রের প্রতি, দেশের জনগণের প্রতি, কর্তব্যের প্রতি অবহেলা না করি। একজন চিকিৎসক সেবা দেবেন, এটাই তার দায়িত্ব। এখানে ভুল করার সুযোগ নেই।

সর্বশেষ খবর