শনিবার, ৩১ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

কেমন আছেন খালেদা জিয়া

বিদেশ পাঠানোর দাবি বিএনপির, চিকিৎসকরা বললে পাঠানো হবে : কাদের

নিজস্ব প্রতিবেদক

কেমন আছেন খালেদা জিয়া

কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ঘিরে ‘অসুস্থতার’ গুজব তৈরি হলেও তা নাকচ করে দিয়েছে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ। তারা বলছেন, যথেষ্ট সুস্থ আছেন বেগম খালেদা জিয়া। তার জীবনাচরণও স্বাভাবিক। একজন সুশৃঙ্খল বন্দীর মতোই কারা অভ্যন্তরে সময় কাটছে তার। এতদিন টিভি না দেখলেও এখন তিনি টিভি দেখছেন। নিয়মিত পত্রিকা পড়ছেন। এদিকে খালেদা জিয়ার ‘অসুস্থতা’ নিয়ে রাজনীতিতেও উত্তাপ বইছে। খালেদা জিয়ার অসুস্থতার খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করে অবিলম্বে উন্নত চিকিৎসার জন্য তার মুক্তির দাবি করেছে বিএনপি। এর পর তার ইচ্ছা অনুযায়ী দেশ-বিদেশে চিকিৎসার কথাও বলছে দলটি। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ বলছে, প্রয়োজনে খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে গিয়েও চিকিৎসা করানো হবে। বিএনপির সন্দেহ, সরকার গোপনে বেগম জিয়াকে বিদেশে পাঠাতে চেয়েছিল।

নাজিম উদ্দিন রোডের ১৭ একর জমির ওপর পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে গত ৫০ দিন ধরে বন্দী বেগম খালেদা জিয়া। কীভাবে তিনি সময় পার করছেন এই নিয়ে আগ্রহের শেষ নেই দলের নেতা-কর্মীসহ সাধারণ মানুষের। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের দেখভাল করার জন্য একজন  ফার্মাসিস্ট এবং একজন চিকিৎসক সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি চাইলেই তাদের ডেকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে নিচ্ছেন। এর বাইরে নিয়ম মতো খাবার গ্রহণসহ সবকিছুই স্বাভাবিক তার। কারা সূত্র বলছে, কারাবন্দী হওয়ার কিছুদিন পর থেকেই দীর্ঘদিনের রাতজাগা অভ্যাস ত্যাগ করেছেন বেগম জিয়া। রাত সাড়ে ৯টা থেকে ১০টার মধ্যেই বাতি নিভে যায় তার কক্ষের। খালেদা জিয়ার প্রতিদিনের খাবারের জন্য বাজার-সদাইয়ের দায়িত্ব পালন করছেন কারাগারের পদস্থ এক কর্মকর্তা। মাঝে মাঝে তিনি নিজেই বাজারে গিয়ে কেনাকাটা করছেন। মেন্যুতে থাকে তার পছন্দের পাবদা, শিং, রুই মাছ এবং খাসির মাংস। খালেদা জিয়া কখনো গরুর মাংস খান না। সকাল বেলা নাস্তার মেন্যুতে থাকছে রুটি, সবজি এবং চা। তবে মাঝে মাঝেই ফজরের নামাজ পড়ে পুনরায় ঘুমানোর কারণে তিনি সকালের নাস্তা খান না। একবারেই দুপুরের খাবার গ্রহণ করেন।

জিয়া অরফানেজ মামলার রায় ঘোষণার পরই সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীকে নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারকে ‘বিশেষ কারাগার’ ঘোষণা দিয়ে সেখানে রাখা হয়। কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার স্থানান্তরের ৫৫৮ দিন পর নতুন করে বন্দী হিসেবে পায় বেগম খালেদা জিয়াকে। এদিকে, গত বৃহস্পতিবার বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সাক্ষাৎ স্থগিত হয়ে যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিএনপি নেতারা। তাদের অভিযোগ, অসুস্থতার অজুহাত দেখিয়ে সাক্ষাৎ স্থগিত করে সরকার বিএনপিকে চাপে রাখতে চাইছে। কারা সূত্র জানায়, কারাগারের সব নিয়ম মেনেই চলছেন বেগম খালেদা জিয়া। তাকে কোনো বিষয় নিয়ে কারা কর্তৃপক্ষের অনুরোধও করতে হয় না। তবে খাবারেও তার কোনো চাহিদা নেই। প্রায় এক ঘণ্টা সময় নিয়ে গোসল করেন তিনি। এরপর দুপুরের খাবার খান। জোহরের নামাজের পর নিয়মিত অজিফা পড়েন বেগম খালেদা জিয়া। বিকালে কিছু সময় ডে-কেয়ার সেন্টারের বারান্দায় পায়চারি করেন। সেখানে থাকা একটি চেয়ারে বসেও সন্ধ্যা পর্যন্ত সময় কাটে তার।

কারা চিকিৎসক মাহমুদুল হাসান শুভ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যথেষ্ট সুস্থ আছেন বেগম জিয়া। তবে ৭৩ বছর বষস্ক কোনো মানুষের তো কিছু সমস্যা থাকেই। আগে থেকেই খালেদা জিয়া ব্যাক পেইন, হাঁটুতে ব্যথা ও আর্থাইটিসে ভুগছেন। তবে তার ডায়াবেটিস নেই। আমরা সার্বক্ষণিক তার খবর রাখছি।

প্রয়োজনে চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠানো হবে : কাদের কারাবন্দী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া অসুস্থতার ধরন বুঝে তার সুচিকিৎসার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। প্রয়োজনে খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে গিয়েও চিকিৎসা করানো হবে বলে জানান তিনি। গতকাল রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।

কাদের বলেন, বিএনপি মহাসচিব জোর গলায় খালেদা জিয়ার অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছেন। খালেদা জিয়া যদি সত্যিই অসুস্থ হয়ে থাকেন, তার অসুস্থতার ধরন অনুযায়ী সুচিকিৎসার প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি জেলে রয়েছেন বলে সরকার তার প্রতি অমানবিক আচরণ করবে না। আমরা এই ধরনের সরকার নই। অবশ্যই আমাদের দেশে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা আছে। আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

দেশেই যদি তার সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা যায়, তাহলে দেশেই তার চিকিৎসা করা হবে। আর যদি মেডিকেল বোর্ড মনে করে তাকে বিদেশে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানো দরকার, প্রয়োজনে সেই ব্যবস্থাও করা হবে। কথা উঠছে, খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার নামে বিদেশ পাঠিয়ে দেওয়া হবে। বিএনপির পক্ষ থেকেও একই ধরনের দাবি করা হয়েছে। এটা যোগসাজশ কিনা— সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নকে গুজব বলে উড়িয়ে দেন ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া কারাগারে আছেন। আমরা তো কারাগারে গিয়ে দেখিনি তিনি কেমন অসুস্থ। এটা আমরা বলতেও পারব না। এটা চিকিৎসকরা বলতে পারবেন। খালেদা জিয়ার অসুস্থতা কতটা গুরুতর, সে বিষয়ে চিকিৎসকদের পরামর্শ নিয়েই সব হবে।

এর আগে ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্পাদকমণ্ডলীর সভায় দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবীর নানক, আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, বি এম মোজাম্মেল হক, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, কৃষিবিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, শ্রমবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, উপ-দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

খালেদা জিয়ার অসুস্থতার খবরে উদ্বেগ বিএনপি : কারাবন্দী খালেদা জিয়ার অসুস্থতার খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করে অবিলম্বে উন্নত চিকিৎসার জন্য তার মুক্তি দাবি করেছে বিএনপি। গতকাল সকালে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই দাবি জানান। তিনি বলেন, আমরা তার (খালেদা জিয়া) স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন-উৎকণ্ঠিত।  দুঃখজনকভাবে বলতে হচ্ছে, এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্টভাবে  কোনো সংবাদই পাইনি তার অসুস্থতা কী ধরনের। কারা তাকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছেন এবং কীভাবে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে তাও জানি না। এই বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষ ও সরকারের কাছ থেকে এর কোনো ব্যাখ্যাও আমরা পাইনি। সেজন্য অতি দ্রুত তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের দিয়ে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো জরুরি। একইসঙ্গে উন্নত চিকিৎসার জন্য মুক্তি দিতে আমরা সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।

সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার  মোশাররফ  হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মামুন আহমেদ, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। মির্জা ফখরুল দাবি করেন, আজকে  যে পরিবেশে তাকে রাখা হয়েছে সেটা তার প্রাপ্য নয়। সেটা তার স্বাস্থ্য অবনতির দিকে যাচ্ছে বলেই আমরা আশঙ্কা প্রকাশ করছি। তার  যে খাবারটা  দেওয়া হয় সেটাও সঠিকভাবে পরীক্ষা করা হয় কিনা আমরা বলতে পারি না। সরকারের উচিত বিষয়টা খোলাসা করা। তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার সুযোগ দিতে হবে। এখানে আমরা সুস্পষ্ট প্রস্তাব রাখছি— অবিলম্বে তার (খালেদা জিয়া) ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের তার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ব্যবস্থা করতে হবে এবং তাদের সুপারিশ অনুযায়ী পরবর্তী চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।

উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানো হবে কিনা প্রশ্ন করা হলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা সুনির্দিষ্টভাবে বলেছি আমরা এখন তার নিঃশর্ত মুক্তি চাই যাতে করে তার উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা দেশে হোক বিদেশে হোক আমরা করতে পারি। যেহেতু উনি বাইরে চিকিৎসা করেছেন সেজন্য উনি সিদ্ধান্ত নেবেন দেশে চিকিৎসা করবেন না বিদেশে চিকিৎসা করবেন। প্যারোলে মুক্তি চান কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমরা প্যারোলে মুক্তির কথা বলিনি। আমরা বলেছি তাকে মুক্তি দিতে হবে। মুক্তি তার প্রাপ্য। উনার জামিন হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। এখন তাকে মুক্তি দেওয়া যেতে পারে। মুক্তি পেয়ে তিনি দেশে হোক, বিদেশে হোক চিকিৎসা নেবেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর