শনিবার, ৩১ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

সোনা চোরাচালানের মূল হোতারা আড়ালেই

ডাটাবেজ হচ্ছে লাগেজ পার্টির সদস্যদের

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিমানবন্দরভিত্তিক সোনা চোরাচালানিদের শনাক্তের পাশাপাশি তাদের আইনের আওতায় আনতে সন্দেহভাজন যাত্রীদের বিশেষ এক ডাটাবেইজ তৈরি করতে যাচ্ছে শুল্ক গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সোনা চোরাচালান বন্ধে এবার লাগেজ পার্টি সদস্যদের ডাটাবেইজে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ। মূলত আন্তর্জাতিক এবং অভ্যন্তরীণ রুটে ঘন ঘন যাতায়াত করছে— এমন যাত্রীদের নজরদারিতে আনতে চাইছে কর্তৃপক্ষ। সোনার চালানসহ আগে গ্রেফতার হয়েছে- এমন ক্যারিয়ারদেরও তথ্য থাকবে ডাটাবেইজে। মূলত ডাটাবেইজ থেকে যাত্রীদের সব ধরনের তথ্য সংযুক্ত ও পর্যালোচনা করা হবে। বিশেষ করে আর্থিক সঙ্গতি না থাকা সত্ত্বেও ঘন ঘন বিমান যাত্রা করছেন— এ ধরনের যাত্রীদের বিশেষ নজরদারিতে আনা হবে। কারণ লাগেজ পার্টি হিসেবে পরিচিত যাত্রীরা সোনা চোরাচালানে

ক্যারিয়ার হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে বলে তথ্য মিলেছে। ওয়াকিবহাল সূত্র মতে, আমদানি এবং শুল্ক সংক্রান্ত নানা জটিলতার কারণে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতারসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে চোরাচালান হয়ে সোনা আসে বাংলাদেশে। আর এ কাজে পুরোপুরি ব্যবহার করা হয় আকাশপথকে। নিত্য নতুন কৌশলে বিমানবন্দর দিয়ে সোনা চোরাচালান যেমন হচ্ছে, তেমনি সোনার চালানসহ ধরা পড়ছে ক্যারিয়াররা। বিশেষ করে লাগেজ পার্টির মাধ্যমে সোনা চোরাচালান হওয়ায় মূল হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। আর ক্যারিয়াররাও জামিনে মুক্তি পেয়ে যাওয়ায় বন্ধ হচ্ছে না রাজস্ব ফাঁকির পথ। কারণ হিসেবে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মো. সহিদুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমাদের অভিযানে বেশিরভাগই ধরা পড়ে বহনকারীরা। তারা ভালো করে চেনে না কারা এই চোরাচালানের মূল হোতা। এ ছাড়া আমরা সোনাসহ হাতেনাতে ধরার পর মামলা দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেই, এরপর বাকি তদন্ত কাজ পুলিশ করে থাকে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমাদের গোয়েন্দারাও কাজ করে।’ এ বিষয়ে সিআইডির কর্মকর্তারা জানান, সোনা চোরাচালানে এমন হাতবদল হয় যে ধরা পড়ারা অনেক সময় জানেনও কোথা থেকে এগুলো এসেছে। জানে না কে দিয়েছে। হয়তো যে দিয়েছে তার নামটা বলতে পারে তারা। বিস্তারিত ঠিকানা কী সেগুলোর কিছুই জানে না তারা। শুল্ক গোয়েন্দারা বলেন, ‘বিশ্বের সব বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশনে যে সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয় সেটি শুল্ক গোয়েন্দাদের দেওয়া হয়। উভয় সংস্থা এটি ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু ব্যতিক্রম বাংলাদেশে। যদি এখানে সে ব্যবস্থা থাকত তাহলে আমরা জানতে পারতাম এক যাত্রী কত দিনের মধ্যে কতবার একটি দেশে গেছে। সে অনুযায়ী নজরদারি করা সহজ হতো। এখন পর্যন্ত সোনার চালানসহ আটককৃতদের মধ্যে ৯৫ ভাগই ক্যারিয়ার। যারা সোনার বার পৌঁছে দেয়ার জন্য বিমান ভাড়ার পাশাপাশি প্রতি পিস হিসেবে ৫ হাজার টাকা করে পেয়ে থাকেন।’ শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৩ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত চার অর্থবছরে সোনা জব্দের পরিমাণ ১৬২২.৭৭ কেজি। যার বাজার মূল্য ৭৬৯.৭৬ কোটি টাকা। আটক হয়েছেন ১২৬ জন। আর ২০১৭ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত মোট সোনা জব্দের পরিমাণ ১৭১৭.২০ কেজি। যার বাজারমূল্য ৮১৭.২২ কোটি টাকা। চোরাচালানের দায়ে আটক হয়েছেন ১৮৯ জন। এত আটকের পরও বন্ধ হয়নি সোনা চোরাচালান। বরং চোরাই সোনার চালান আসছেই। এ পর্যন্ত যত সোনা আটক হয়েছে, তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি সোনা পাচার হয়েছে নিরাপদে। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, পাচারের ক্ষেত্রে অবলম্বন করা হয় নিত্যনতুন কৌশল। রুট পরিবর্তন করেও সোনা চোরাচালান হয়। কখনো শরীরের ব্যান্ডেজে, কখনো পায়ুপথে, হুইল চেয়ারে, জুতা, স্যান্ডেল, বেল্ট, সাবান কেস, ল্যাপটপের ভেতরসহ অদ্ভুত সব কায়দায় সোনা পাচার করা হয়।

সর্বশেষ খবর