শনিবার, ৩১ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

আন্তর্জাতিক প্রতারক চক্রের কবলে শাবি অধ্যাপক

নাইজেরিয়ান আটক

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট

যুক্তরাষ্ট্রে একটি সেমিনারে অংশ নেওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার লোভ দেখিয়ে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপকের কাছ থেকে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার ডলার হাতিয়ে নিয়েছে আন্তর্জাতিক প্রতারক চক্র। প্রতারণার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ডোনাটস এমেকা ওনিজিউয়া নামের এক নাইজেরিয়ানকে আটক করেছে সিলেট মহানগর পুলিশ।

গতকাল সকালে এসএমপি সদর দফতরে এ তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার পরিতোষ ঘোষ।

তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রে একটি সেমিনারে অংশ নেওয়ার জন্য শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়ো টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. ফারুক মিয়ার কাছে গত ফেব্রুয়ারি মাসে একটি ই-মেইল আসে। ওই ই-মেইলে ‘ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন সেক্সুয়্যাল ট্রান্সমিটেড ডিজিস অ্যান্ড ইনফেকশন’ শীর্ষক একটি সেমিনারে অংশ নিতে তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। সেমিনারে অংশ নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে এবং প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে ১৪ ফেব্রুয়ারি তিনি ফিরতি মেইল পাঠান। এরপর কনফারেন্সে অংশ নেওয়ার জন্য তাকে যুক্তরাষ্ট্রের একটি হোটেলে ১০ দিনের রুম বুকিং দিয়ে বুকিং স্লিপ পাঠাতে বলা হয়। এ ব্যাপারে ড. ফারুক আয়োজকদের সহযোগিতা চাইলে রুম বুকিং বাবদ ৫০০ ডলার চায় তারা। ওই টাকা বেলজিয়ামে অবস্থানরত তার এক ছাত্রের মাধ্যমে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন মানি ট্রান্সফারের মাধ্যমে পরিশোধ করেন ওই অধ্যাপক। এরপর গত ১ মার্চ একটি ই-মেইলে অধ্যাপক ড. ফারুক মিয়াকে জানানো হয়, ১৯-২১ মার্চের জন্য তিনি আমেরিকার ভিসা পেয়ে যাবেন। ভিসা দেওয়ার বিষয়টি ইউএসএ ইমিগ্রেশন সার্ভিস কনফার্ম করেছে বলেও আশ্বস্ত করা হয় তাকে। এ জন্য তাকে পাসপোর্টের ফটোকপি, ভিসা ফি ১৬০ ডলার, ইন্স্যুরেন্স ফি ৯৫ ডলার এবং ফেরতযোগ্য জামানত ১৩৯৯ ডলার পরিশোধ করতে বলা হয়। জামানতের ১৩৯৯ ডলার সেমিনারে অংশ নিয়ে ফেরার সময় ওয়াশিংটন বিমানবন্দরে তাকে ফেরত দেওয়া হবে বলে উল্লেখ করা হয় ই-মেইলে। ওই ই-মেইল পাওয়ার পর অধ্যাপক ফারুক বেলজিয়ামে অবস্থানরত তার এক বন্ধুর মাধ্যমে ১৬৫৪ ডলার করে দুবারে ৩৩০৮ ডলার পাঠান তাদের দেওয়া ব্যাংক হিসাবে। এরপর এক ই-মেইলে কনফারেন্স প্যাকেজ, ভিসা অ্যাপ্রোভাল লেটার, ইউএস অ্যাম্বাসি অ্যাপয়েনমেন্ট লেটার ও বিমান টিকিটসহ প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট হ্যান্ডলিং বাবদ ১৮০০ ডলার পাঠাতে বলা হয়। ওই টাকাও ফেরতযোগ্য বলে উল্লেখ করা হয় ই-মেইলে। ২৫ মার্চ ওই ডলারের সমমূল্যের টাকা তিনি ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করেন। ২৭ মার্চ ঢাকার হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সংলগ্ন একটি পেট্রল পাম্পের কাছে অধ্যাপক ফারুকের সঙ্গে দেখা করেন এক আফ্রিকান নাগরিক। তিনি তার গাড়িতে একটি লাগেজ তুলে দেন এবং সেটি সিলেট নিয়ে এসে সেমিনার আয়োজক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। লাগেজটি সিলেটে নিয়ে এসে ভিতরে ডিজিটাল লক করা একটি বাক্স দেখতে পান তিনি। কিন্তু লক করা থাকায় তিনি তা খুলতে ব্যর্থ হন। পরদিন ২৮ মার্চ বিকালে আয়োজক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি তাকে লাগেজটি নিয়ে গাড়িতে করে নগরীর উপশহরের হোটেল রোজভিউর কাছে একা আসতে বলেন। সেখানে গিয়ে একজন নাইজেরিয়ানকে দেখতে পান অধ্যাপক ফারুক। নাইজেরিয়ান ব্যক্তিটি গাড়িতে উঠে তাকে পার্শ্ববর্তী একটি স্কুলের মাঠে নিয়ে যান। সেখানে লক করা বাক্সটি খুলে জাল ডলার তৈরির একটি মেশিন দেখায়। এ সময় সে দুটি ১০০ ডলারের জাল নোট তৈরি করেও দেখায়। ওই অধ্যাপকের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, এ সময় তিনি জাল নোট তৈরির মেশিন কেন তাকে দিতে চাইছে তা জানতে চান। এই মেশিন ফেরত নিয়ে সেমিনারে অংশ নেওয়ার কাগজপত্র দিতে বললে তাকে গাড়িতে বসিয়ে রেখে হোটেলের দিকে যায় ওই নাইজেরিয়ান। এর কিছুক্ষণ পর তিনি মোবাইল বন্ধ করে দিলে অধ্যাপক ফারুক প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে পুলিশকে জানান। তার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের মাধবপুরের হাইওয়ে ইন রেস্টুরেন্ট থেকে প্রতারক নাইজেরিয়ানকে আটক করে পুলিশ।

সর্বশেষ খবর