সোমবার, ২ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা
চাঁদপুরে বিশাল জনসভায় শেখ হাসিনা

নৌকায় ভোট দিয়ে উন্নয়ন বজায় রাখুন

রফিকুল ইসলাম রনি ও নেয়ামত হোসেন, চাঁদপুর থেকে

নৌকায় ভোট দিয়ে উন্নয়ন বজায় রাখুন

চাঁদপুরে গতকাল বিশাল জনসভায় বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা —বাংলাদেশ প্রতিদিন

উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চাঁদপুরবাসীর কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চেয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, জিয়া-এরশাদ ও খালেদা জিয়া কেউই দেশের উন্নতি করতে পারে নাই। আমরা চাই, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত। উন্নয়নের জন্য সরকারের ধারাবাহিকতা থাকা দরকার।

গতকাল বিকালে চাঁদপুর স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

চাঁদপুরের হাইমচরে স্কাউটের একটি অনুষ্ঠান শেষে জেলা শহরে আসেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক চাঁদপুরের ঐতিহ্য ইলিশ দিয়ে বরণ করে নেন। বেলা ৩টা ৬ মিনিটে তিনি জনসভাস্থল চাঁদপুর স্টেডিয়ামে উপস্থিত হন। সেখান থেকেই ২৩টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ২৪টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে চাঁদপুরে মেডিকেল কলেজ, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন, পর্যটনের সুযোগ সৃষ্টি, নৌবন্দর, নদী ভাঙন রোধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের প্রতিশ্রুতি দেন। প্রধানমন্ত্রীর জনসভা উপলক্ষে নতুন সাজে সাজানো হয় গোটা চাঁদপুর শহর ও এর আশপাশের সড়ক ও মহাসড়কগুলো। রঙিন ব্যানার, ফেস্টুন ও তোরণে ছেয়ে যায় পুরো শহর। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ব্যানার, পোস্টার ছিল শহরজুড়ে। তাদের ব্যাপক শোডাউন করতেও দেখা গেছে। বিএনপি-জামায়াত জোটের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, যারা জাতির পিতার খুনিদের পুরস্কৃত করে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দেয়, যারা যুদ্ধাপরাধীদের হাতে লাখো শহীদের রক্তে রঞ্জিত পতাকা তুলে দেয়, তারা এ দেশের উন্নয়নে বিশ্বাস করে না। তারা উন্নয়ন করেওনি কোনোদিন, ভবিষ্যতেও করবে না। তিনি সমবেতদের উদ্দেশে বলেন, নৌকা আপনাদের মার্কা। এই নৌকা মার্কা সবসময় মানুষকে উদ্ধার করে। নূহ নবীর নৌকা মানবজাতি এবং পশুপাখি রক্ষা করেছিল। এই নৌকায় ভোট দিয়ে স্বাধীনতা পেয়েছেন। তাই আগামীতে যে নির্বাচন হবে, সেই নির্বাচনে আপনাদের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চাই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে আমাকে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে। আইভি রহমানসহ আমাদের অনেক নেতা-কর্মী তখন মারা গেছেন। এই চাঁদপুরেরও একজন কর্মী মারা গেছেন। বারবার ওরা আঘাত করার চেষ্টা করেছে, বেঁচে গেছি। আমার লক্ষ্য একটাই, বাংলাদেশ হবে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ। সেই লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, ওরা (বিএনপি) বাংলাদেশের সৃষ্টিতেই বিশ্বাস করে না। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে এটাই যেন ওরা মেনে নিতে পারে না। আপনারাই তুলনা করে দেখেন, ১৯৭৫ এর পর থেকে যারা ক্ষমতায় ছিল, ওই জিয়া বলেন, এরশাদ বলেন, খালেদা জিয়াই বলেন, বাংলাদেশের কোনো উন্নতি করতে পারে নাই। চাঁদপুরের কী উন্নতিটা করেছে তারা? তারা একটা উন্নতি করেছে, দুর্নীতির উন্নতি। তারা টানা পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন করেছে বাংলাদেশকে। বাংলাদেশের মাথা হেঁট হয়েছে বিশ্ব দরবারে। নিজেরা লুটপাট করেছে, টাকা পাচার করেছে বিদেশে। তিনি বলেন, এতিমের জন্য টাকা এসেছে বিদেশ থেকে। একটা টাকাও এতিমের হাতে যায়নি। সেই টাকা চুরি করে খেয়েছে। এতিমের টাকা চুরির দায়ে সাজা ভোগ করছেন খালেদা জিয়া। আর তার জন্য নাকি তারা আন্দোলন করে। আপনারা জানেন, কোরআন শরিফে বলা আছে, এতিমের হক এতিমকে দাও। এতিমের সম্পদ তোমরা চুরি করো না। সেই অপকর্ম করতে বিএনপি নেত্রী পিছপা হননি। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র নাছির উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জনসভায় আরও বক্তব্য রাখেন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, আবদুর রহমান, ডা. দীপু মনি, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মহীউদ্দীন খান আলমগীর, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, এনামুল হক শামীম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, ত্রাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, নুরজাহান বেগম মুক্তা প্রমুখ। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন।

স্কাউটদের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হওয়ার আহ্বান : এর আগে গতকাল সকালে চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলায় পৌঁছে চরভাঙ্গায় ষষ্ঠ কমডেকার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে ভবিষ্যতে বাংলাদেশে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য রোভার স্কাউটদের আরও যোগ্য ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আগামীর বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য তোমাদের যোগ্য হয়ে গড়ে উঠতে হবে। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে হবে, মানুষকে ভালোবাসতে হবে। যখন জীবনে প্রতিষ্ঠিত হবে তখনো যেন এই মানসিকতা থাকে। শিশু-কিশোরদের দেশ পরিচালনায় প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, দেশকে ভালোবাসতে হবে, দেশের জন্য মমত্ববোধ থাকতে হবে, দেশকে গড়ে তোলার মানসিকতা নিয়ে কাজ করে যেতে হবে। আজকে যে শিশু-কিশোররা এখানে, একসময় তোমরাই দেশের কর্ণধার হবে। এ দেশ যেন তোমরা পরিচালনা করতে পার সেভাবেই নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে। আমি চাই, তোমাদের সেবাধর্মী কার্যক্রম আরও বৃদ্ধি হোক, বিস্তৃতি পাক। সারা দেশে স্কাউট কার্যক্রম সম্প্রসারণ ও উন্নয়নে সরকার সব ধরনের সহায়তা দেওয়ার কথা জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, স্কাউটের সুফল দেশের সব পর্যায় পৌঁছাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানভিত্তিক ও কমিউনিটিভিত্তিক স্কাউটিং আরও সম্প্রসারণ করা হবে। বক্তৃতা পর্ব শেষে কমডেকা পতাকা উত্তোলন করা হয়। এরপর প্রধানমন্ত্রী শান্তির প্রতীক পায়রা এবং বেলুনের সঙ্গে কমডেকা ফেস্টুন অবমুক্ত করেন। পরে স্মারক ডাক টিকিট উন্মোচন করেন তিনি। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বাংলাদেশের সংস্কৃতি এবং উন্নয়ন তুলে ধরা হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর