বৃহস্পতিবার, ৫ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

অবশেষে রহস্যের জট খুলল স্ত্রীর পরকীয়ার বলি রথীশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর

অবশেষে রহস্যের জট খুলল স্ত্রীর পরকীয়ার বলি রথীশ

স্বামী রথীশের সঙ্গে দীপা

রংপুরের আইনজীবী রথীশচন্দ্র ভৌমিক বাবু সোনা নিখোঁজ হননি। তার স্ত্রী দীপা ভৌমিকের পরকীয়ার জেরে তিনি নিজ বাড়িতেই খুন হয়েছেন। দীপাকে গ্রেফতারের পর তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মঙ্গলবার মধ্যরাতে পাশের আধা কিলোমিটার দূরে তাজহাট মোল্লাপাড়ায় একটি নির্মাণাধীন বাড়ি থেকে বালুচাপা দেওয়া অবস্থায় রথীশের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। জানা গেছে, নির্মাণাধীন বাড়িটি দীপার প্রেমিক কামরুল ইসলামের বড় ভাইয়ের। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেফতারের পর পরদিন দীপাকে গ্রেফতার করা হয়। রথীশের ছোট ভাই সাংবাদিক সুশান্ত ভৌমিক সুবল ভাইয়ের লাশ শনাক্ত করেন। লাশ উদ্ধারের পর রথীশ হত্যাকাণ্ডের রহস্য বেরিয়ে আসে। গতকাল দুপুরে রংপুরের র‌্যাব-১৩ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ বাহিনীর মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেন, ৩০ মার্চ সকাল থেকে রথীশচন্দ্রের নিখোঁজ থাকার বিষয়টি ছিল ‘তার স্ত্রীর সাজানো নাটক’। হত্যার ঘটনা ধামাচাপা দিতে ওই কৌশলে সবার নজর তিনি ভিন্নদিকে সরানোর চেষ্টা করেছেন। আসলে ২৯ মার্চ রাতেই নিজের শোবার ঘরে খুন হন রথীশ। র‌্যাব জানায়, স্থানীয় তাজহাট উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক দীপা ভৌমিকের সঙ্গে তার স্কুলের সহকর্মী কামরুল ইসলামে পরকীয়া চলছিল। এ নিয়ে রথীশের সঙ্গে দীপার কলহ লেগেই থাকত। তাদের মধ্যে বনিবনা ছিল না। দুই মাস ধরে রথীশকে হত্যার পরিকল্পনা করেন দীপা ও কামরুল। রথীশ এ স্কুলের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ছিলেন। কামরুলের বাড়ি তাজহাট মোল্লাপাড়া হলেও তিনি বেশ কিছুদিন ধরে নগরীর রাধাবল্লভ এলাকায় বাড়ি করে সেখানে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বসবাস শুরু করেন।  সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, রথীশ ও তার ভাই সাংবাদিক সুশান্ত ভৌমিক সুবল পাশাপাশি বাড়িতে থাকেন। ২৯ মার্চ ঢাকায় যান সুশান্ত ভৌমিক। এ সুযোগে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ২৯ মার্চ রাত ১০টার দিকে রথীশ পেশাগত কাজ শেষে বাসায় আসেন। খেতে বসলে ভাত ও দুধের সঙ্গে ১০টি ঘুমের বড়ি খাওয়ানো হয় রথীশকে। এর আগে মেয়ে রিক্তি রানী ভৌমিককেও দুধের সঙ্গে ঘুমের বড়ি খাইয়ে ঘুম পাড়ানো হয়। কামরুল আগে থেকেই রথীশের শোবার ঘরে লুকিয়ে ছিলেন। রথীশ অচেতন হয়ে গেলে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে তাকে হত্যা করা হয়। হত্যার পর রাতে রথীশের লাশ রেখে দেওয়া হয় তারই শোবার ঘরে। ভোরে কামরুল ওই বাসা থেকে বেরিয়ে গিয়ে সকাল ৯টার দিকে একটি রিকশাভ্যান নিয়ে আসেন। একটি আলমারি পরিবর্তনের নাম করে সেই আলমারিতে রথীশের লাশ ভরে নিয়ে যাওয়া হয় তাজহাটের মোল্লাপাড়ায় কামরুলের বড় ভাই খাদেমুল ইসলামের নির্মাণাধীন বাড়িতে। সেখানে লাশ পুঁতে ফেলার জন্য আগে থেকেই একটি কক্ষে বালু খুঁড়ে গর্ত করে রাখা হয়েছিল। র‌্যাব জানিয়েছে, কামরুল তার দুই ছাত্র তাজহাট উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির সবুজ ইসলাম ও রোকনুজ্জামানকে ৩০০ টাকা করে দিয়ে ওই গর্ত খোঁড়ার কাজটি করিয়েছিলেন ২৬ মার্চ। সবুজ ও রোকনুজ্জামানের বাড়ি মোল্লাপাড়া এলাকায়। তাদেরও র‌্যাব আটক করেছে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা বলেছে, শিক্ষকের নির্দেশে তারা ওই কাজ করেছে। রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক রথীশ জাপানি নাগরিক হোশি কোনিও এবং মাজারের খাদেম রহমত আলী হত্যা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন। হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি, জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতির দায়িত্বেও ছিলেন তিনি। রথীশচন্দ্র নিখোঁজ হওয়ার পর তার ছোট ভাই সুশান্ত ভৌমিক গত ১ এপ্রিল অজ্ঞাত পরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা করেন। দীপা, কামরুলসহ চারজনকে র‌্যাব পুলিশের কাছে হস্তান্তর করার পর ওই মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়েছে বলে কোতোয়ালি থানার ওসি বাবুল মিঞা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, লাশের গলায় শুধু দাগ রয়েছে। তার পরনে শার্ট-প্যান্ট ও পায়ে জুতা ছিল। লাশ পেঁচানো ছিল বিছানার চাদর ও লুঙ্গি দিয়ে। রথীশের দুই সন্তানের মধ্যে ছেলে দীপ্ত ভৌমিক ঢাকায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ের শেষ বর্ষের ছাত্র। ঘটনার সময় তিনি ঢাকাতেই ছিলেন। আর ছোট মেয়ে রিক্তি রানী ভৌমিক পড়ালেখা করছে রংপুর লায়ন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণিতে। ঘটনার রাতে সন্ধ্যায় ঘুমিয়ে পড়ে রিক্তি। পরদিন সকালে স্কুলের পিকনিকে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া যায় সে। রাতে বাসায় ফিরে বাবার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি জানতে পারে। ময়নাতদন্তের পর বিকালে দখিগঞ্জ শ্মশানে রথীশের শেষকৃত সম্পন্ন করা হয়। এদিকে পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, এ ঘটনা দুঃখজনক। দ্রুত মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর