বৃহস্পতিবার, ৫ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

প্রত্যেক জেলায় হবে এসএমই পরামর্শ কেন্দ্র : প্রধানমন্ত্রী

প্রতিদিন ডেস্ক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্পের বিকাশে জেলায় এবং উপজেলায় এসএমই পরামর্শ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। এ পরামর্শ কেন্দ্রগুলো এসএমই শিল্প প্রসারে ওয়ানস্টপ সার্ভিস সেন্টার হিসেবে কাজ করবে। তিনি বলেন, প্রতিটি বিভাগীয় শহরে প্রদর্শনী ও বিক্রয় কেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে পণ্যের প্রদর্শনী ও বিক্রয়ের ব্যবস্থা করা হবে। খবর বাসস। গতকাল সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ষষ্ঠ জাতীয় এসএমই মেলার উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির লিখিত ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শারীরিক অসুস্থতার কারণে ভাষণ প্রদান করেননি। এর পরিবর্তে তাঁর ভাষণের লিখিত কপি অনুষ্ঠানে বিতরণ করা হয়। এসএমই ফাউন্ডেশন এবং এফবিসিসিআই যৌথভাবে পাঁচ দিনব্যাপী এই মেলার আয়োজন করে। বিশ্বব্যাপী অর্থনীতির চালিকাশক্তি হিসেবে এসএমইর গুরুত্ব অপরিসীম উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসএমই সবচেয়ে শ্রমঘন ও স্বল্প পুঁজিনির্ভর খাত হওয়ায় এই খাতের মাধ্যমে স্বল্প পুঁজি বিনিয়োগে অধিক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়। তিনি বলেন, আমাদের দেশে প্রায় ৯০ শতাংশ শিল্পই ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের অন্তর্ভুক্ত। তাই জাতীয় উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এসএমই খাত গুরুত্বপূর্ণ। জিডিপিতে এসএমই খাতের অবদান প্রায় ২৫ শতাংশ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকারের গৃহীত কর্মসূচির ফলে দেশব্যাপী টেকসই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতের দ্রুত প্রসার ঘটছে। উদ্যোক্তাবান্ধব নীতির কারণে প্রতিনিয়ত নারীরা ব্যবসায় মনোনিবেশ করছে। ফলে দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান, নারীর ক্ষমতায়নসহ আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির অনেক সূচকে বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশগুলোকে ছাড়িয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে যখন সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নিই, তখন বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। অনেক দেশ বিশ্ব মন্দার অভিঘাত কাটিয়ে উঠতে পারেনি। কিন্তু আমরা সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে দেশকে একটি শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করাতে সক্ষম হয়েছি। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৪৪তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশ্বে এখন বাংলাদেশ মর্যাদাশীল দেশ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। বর্তমানে আমাদের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭৫২ মার্কিন ডলার। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধি পেয়ে ৭ দশমিক ৬৫ শতাংশে উন্নীত। সরকারপ্রধান বলেন, বর্তমানে ১৯৯টি দেশে ৭৫০টি পণ্য রপ্তানি করা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে ৪১ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাংলাদেশে কুটির শিল্পের সুদীর্ঘ গৌরবের কথা স্মরণ করে  শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের ঐতিহ্যবাহী জামদানি, নকশিকাঁথা এবং সিলেটের শীতল পাটি ইতিমধ্যে ইউনেস্কোর আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য-তালিকায় স্থান পেয়েছে। তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে পণ্যের বাজার অনুসন্ধান এবং তাদের চাহিদা অনুযায়ী সেসব পণ্য উৎপাদন করতে হবে। মুষ্টিমেয় কয়েকটি পণ্যের ওপর রপ্তানি নির্ভরশীলতা কমিয়ে আমাদের এখন রপ্তানি বহুমুখীকরণের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। এ জন্য সরকার সব ধরনের সহযোগিতা করবে। এসএমই খাতের সম্প্রসারণে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ এবং দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের খণ্ডচিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সরকার নিজেরা ব্যবসা করে না। সহায়কের ভূমিকা পালন করে। ফলে আজ দেশে বেসরকারি খাত ব্যাপক প্রসার লাভ করেছে। তিনি বলেন, সারা দেশ থেকে বাছাইকৃত ২৬৭টি এসএমই প্রতিষ্ঠান তাদের উৎপাদিত পণ্য নিয়ে এ মেলায় অংশগ্রহণ করেছে। এর মধ্যে ৬৭ শতাংশই নারী উদ্যোক্তা। আমরা এখন উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবাইকে সঙ্গে নিয়ে আমরা স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে অর্থাৎ ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হব। অনুষ্ঠানে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু সভাপতিত্ব করেন। এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, শিল্প সচিব মো. আবদুল্লাহ এবং এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন কে এম হাবিবুল্লাহ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী সফল এসএমই উদ্যোক্তাদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন। তিনি মেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন এবং উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।

সর্বশেষ খবর