শনিবার, ৭ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

যমদূত বেপরোয়া গণপরিবহন

যমদূত বেপরোয়া গণপরিবহন

বেপরোয়া বাসের মাঝে এভাবেই ঝুঁকি নিয়ে সাধারণ মানুষকে চলাচল করতে হয় —বাংলাদেশ প্রতিদিন

গণপরিবহন চালকদের লাগামহীন বেপরোয়া তাণ্ডবে সড়ক-মহাসড়কে যাত্রী ও পথচারী প্রাণহানির ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছানোর যানবাহন এখন অনিশ্চিত যাত্রার সাক্ষাৎ যমদূত হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। গণপরিবহনের চাকায় পিষ্ট এসব মৃত্যুকে দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেওয়া হলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সড়কে এসব মৃত্যুর ঘটনার অধিকাংশই আসলে বেপরোয়া পরিবহন চালকদের দায়হীন হত্যাকাণ্ড। পরিবহন শ্রমিকদের শক্তিশালী ট্রেড ইউনিয়ন ও মালিকদের তৎপরতার কারণে সড়কে নিহতদের পরিবার বিচার পায় না। চালকরাও দৃষ্টান্তমূলক কোনো শাস্তি ছাড়াই আইনের আওতা থেকে বেরিয়ে যান। জবাবদিহিতার অভাবে তারা আবারও গাড়ি রেসের পাল্লায় মেতে ওঠেন।  বিশেষজ্ঞদের মতে, চালকদের অতিরিক্ত যাত্রী তোলার লোভ এবং পরস্পরের সঙ্গে প্রাণঘাতী প্রতিযোগিতার কারণেই সড়ক ও বাসস্টপে-টার্মিনালে চাপা পড়ে কিংবা পিষ্ট হয়ে যাত্রী ও পথচারীর প্রাণ যায়। একাধিক বাসচালকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজধানীর বাস ড্রাইভারদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ মালিকদের কাছ থেকে চুক্তি নিয়ে গাড়ি চালান। দিন শেষে নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা গাড়ি মালিককে জমা দিতে হয়। কিছু গাড়ি বেতনভুক্ত ড্রাইভার দিয়ে চালানো হলেও তাদের দৈনিক আয়ের বিষয়টি নির্ভর করে দিন শেষে মোট আয়ের ওপর। একটি বাসের জন্য মালিককে দৈনিক ভাড়া বাবদ ২ হাজার ৫০০ থেকে তিন হাজার টাকা দিতে হয় চালকদের। গাড়ির জ্বালানি ও ট্রাফিক পুলিশসহ রাজনৈতিক চাঁদা ড্রাইভারকেই পরিশোধ করতে হয়। এগুলোর খরচ মিটিয়ে দিয়েই বেতন নিতে হয় ড্রাইভার, কন্ট্রাক্টর ও হেলপারকে। ফলে অত্যন্ত চাপের মধ্যে থাকতে হয় ড্রাইভারদের। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বাসের ড্রাইভার ও হেলপারদের ভোর ৪টা থেকে রাত ১০-১১টা পর্যন্ত গাড়ি নিয়ে রাস্তায় থাকতে হয়। এসব প্রেক্ষাপটে বাস ড্রাইভাররা রাস্তায় যাত্রী তুলতে বেপরোয়া হয়ে পড়েন। তারা একই রুটের প্রতিদ্বন্দ্বী বাসের সঙ্গে গতির প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হন। এমনকি একই কোম্পানির বাসের ড্রাইভারদের মধ্যেও এই প্রবণতা রয়েছে। গাজীপুর-বিমানবন্দর-সদরঘাট রুটে চলাচলকারী সুপ্রভাত স্পেশাল এবং উত্তরা-বিমানবন্দর-যাত্রাবাড়ী রুটে চলাচলকারী রাইদা পরিবহনের বাসের ড্রাইভাররা প্রায়ই রাস্তায় বিপজ্জনকভাবে রেস দিয়ে গাড়ি চালান। যাত্রীরা প্রতিবাদ করলেও তারা শুনতে চান না। ছুটির দিনে যাত্রী কম থাকার কারণে তাদের এই তৎপরতা অনেক বেড়ে যায়। গণপরিবহনের এমন রেসের তাণ্ডব রাজধানীর প্রায় সব রুটে। সন্ধ্যার পর থেকে গণপরিবহনের ড্রাইভিং সিটে বসে যায় কিশোর হেলপাররা। তারা বিপজ্জনক গতিতে গাড়ি চালিয়ে যাত্রীদের আতঙ্কিত করে রাখে। অনেক সময় মারাত্মক দুর্ঘটনাও ঘটায়। সড়ক নিয়ন্ত্রণের সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) হিসাবেই দেশে বর্তমানে বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্সবিহীন চালকের সংখ্যা ১০ লাখের বেশি। ফলে অদক্ষ ও অপ্রাপ্তবয়স্ক চালকরাই সড়কে বিশৃঙ্খলার মূল হোতা হিসেবে কাজ করছে। বিআরটিএ তথ্য অনুযায়ী, দেশে বিভিন্ন ধরনের প্রায় ৩৪ লাখ গাড়ির রেজিস্ট্রেশন রয়েছে। অন্যদিকে ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু করা সাড়ে ২৪ লাখ। প্রায় ১০ লাখ যানবাহন চালকের কোনো বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। কিন্তু তারাই রাজধানীসহ দেশের সড়ক-মহাসড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর