শনিবার, ৭ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা
সিলেটে মা-ছেলে খুন

এখনো আতঙ্ক তাড়া করছে রাইসাকে

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

পাঁচ বছরের শিশু রাইসা বেগম। এই বয়সে হেসে-খেলে দিন পার করার কথা ছিল তার। কিন্তু নির্মমতার শিকার হওয়া রাইসা পড়ে আছে পুলিশের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে। চার দেয়ালের সীমিত গণ্ডির মধ্যে ভয় আর আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে সে। চোখের সামনে মা ও ভাইকে খুন হতে দেখা এবং নিজেও প্রায় মরতে বসা— এই দুঃসহ বিভীষিকা তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে তাকে। গত ৩১ মার্চ দিবাগত রাতে সিলেট নগরীর মিরাবাজারস্থ খাঁরপাড়া মিতালী ১৫/জি নম্বর বাসায় পারলার ব্যবসায়ী রোকেয়া বেগম এবং তার একমাত্র ছেলে রবিউল ইসলাম রোকনকে খুন করা হয়। ঘাতকরা একের পর এক ছুরিকাঘাতে ছিন্নভিন্ন করে দেয় তাদের শরীর। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রোকেয়া ও রোকনের শরীরে ১০৮টি ছুরিকাঘাতের চিহ্ন মিলেছে। সেদিন রাইসাকেও খুন করতে চেয়েছিল ঘাতকের দল। রাইসার গলা চেপে ধরে তাকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যার চেষ্টা করা হয়। রাইসা অজ্ঞান হয়ে পড়লে তাকে মৃত ভেবে ফেলে যায় ঘাতকরা। ১ এপ্রিল সকালে রোকেয়া ও রোকনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তখন জ্ঞান ছিল রাইসার। তাকে নেওয়া হয় পুলিশ হেফাজতে। এরপর থেকে পুলিশের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে আছে সে। সূত্র জানায়, সেদিনকার রাতের স্মৃতি ভুলতে পারছে না রাইসা। ঘাতকদের নৃশংসতা প্রত্যক্ষ করা রাইসা এখনো ভয়ে আঁতকে ওঠছে বারবার। কেউ এসে তাকে মেরে ফেলবে এমন ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে থাকে। বিশেষ করে পুরুষ দেখলেই সে লুকিয়ে পড়ছে।

সিলেট মহানগরীর কোতোয়ালি থানার ওসি (তদন্ত) রোকেয়া বেগম বলেন, রাইসার মনে এখনো ভয় কাজ করছে। সে যে কক্ষে থাকছে, সেটির চাবি বারবার লুকিয়ে রাখছে। তার ধারণা, কেউ এসে তাকে মেরে ফেলবে। সে পুরুষ দেখলে ভয় পেয়ে লুকাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাইসাকে সেদিনকার রাতের ভয়ঙ্কর স্মৃতির ঘেরাটোপ থেকে বের করে আনতে তাকে মনোবিদের চিকিৎসা দেওয়া প্রয়োজন। এ বিষয়ে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল ওয়াহাব বলেন, রাইসা এখন মানসিক বিপর্যয়ের মধ্যে আছে। তাকে সেই অবস্থা থেকে বের করে আনতে মনোবিদের সাহায্য নেব। ঘটনার তদন্তের সঙ্গে যারা সংশ্লিষ্ট, তাদের সঙ্গে কথা বলব যাতে রাইসা মনোবিদের সাহায্য পায়।

প্রসঙ্গত, সিলেটে এই জোড়া খুনের ঘটনায় গত ৩ এপ্রিল দিবাগত রাতে নাজমুল হাসান নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরদিন তাকে সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। রাইসার গলায় যে আঙ্গুলের ছাপ পাওয়া গেছে, তা সংরক্ষণ করেছে পুলিশ।

সর্বশেষ খবর