শনিবার, ৭ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা
জাতিসংঘে সায়মা ওয়াজেদ

অটিজম আক্রান্তদের কল্যাণে কাজ করুন

প্রতিদিন ডেস্ক

অটিজম আক্রান্তদের কল্যাণে কাজ করুন

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অটিজম সম্পর্কিত শুভেচ্ছা দূত সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুল বলেছেন, ‘অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তিরা সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাদের সফল, ক্ষমতায়িত ও কর্মক্ষম ব্যক্তিতে পরিণত করতে আমাদের সমন্বিত ও সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করতে হবে।’

নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে ‘বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস’ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সকালে ইকোসক চেম্বারে ‘অটিজম আক্রান্ত নারী ও মেয়েদের ক্ষমতায়ন’ শীর্ষক আলোচনায় অন্যতম বক্তা হিসেবে অটিজম আন্দোলনের বিশ্বনেতা সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুল বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি এ আহ্বান জানিয়েছেন। খবর এনআরবি নিউজের।

‘অ্যাবলিজম, সেক্সিজম, রেসিজম...হাউ দে ইন্টারসেক্ট’ বিষয়ে আলোকপাতকালে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তি বিশেষ করে নারী ও মেয়েদের যেসব সামাজিক ও পারিবারিক চ্যালেঞ্জ রয়েছে তা মোকাবিলার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। সায়মা ওয়াজেদ উপস্থাপন করেন অটিজমের শিকার নারীদের বিভিন্ন বৈষম্য ও তাঁদের প্রতি গতানুগতিক সামাজিক ও পারিবারিক ধারণার কথা, তাদের নাজুক পরিস্থিতি এবং পরিবারের সদস্যসহ আশপাশের মানুষের দ্বারা নিগ্রহ ও নির্যাতনের বিষয়গুলো। সায়মা হোসেন বলেন, অটিজম আক্রান্ত নারী ও মেয়েরা নানাবিধ সীমাবদ্ধতার কারণে নিজেদের একান্ত চাওয়া পাওয়ার কথাও ঠিকমতো বোঝাতে পারেন না। এসব নারীর বিবাহ ও দাম্পত্য জীবনসহ প্রাত্যহিক জীবন-যাপন বিষয়ে পর্যাপ্ত ব্যবহারিক শিক্ষা ও জ্ঞান অর্জনের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।

পাশাপাশি তারা যাতে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের মাধ্যমে তাদের অন্তর্নিহিত শক্তি ও সম্ভাবনার প্রকাশ ঘটাতে পারে সে ব্যাপারে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি আরও বলেন, ‘অটিজম আক্রান্তদের সমাজে জায়গা করে দিতে হবে যাতে তারা তাদের অবদান রাখতে পারে, অন্যথায় সমাজে বড় ধরনের বিভেদ তৈরি হবে।’ ‘জাতিসংঘের কমিটি অন দ্য রাইট অব পারসন উইথ ডিসঅ্যাবিলিটি’র মেম্বার প্রফেসর জোনাস রুজকুসের এক প্রশ্নের জবাবে সায়মা হোসেন বলেন, ‘কনভেনশন অন দ্য রাইট অব পারসন উইথ ডিসঅ্যাবিলিটির সদস্যরাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ সরকার অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তিবর্গ বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে বহুমাত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আন্তমন্ত্রণালয় পরামর্শক কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে নীতি প্রণয়ন ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। এর ফলে এক্ষেত্রে ব্যাপক সাফল্য অর্জিত হয়েছে।’ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দূত হিসেবে সায়মা ওয়াজেদ হোসেন আরও জানান, বাংলাদেশ ও দক্ষিণ পূর্ব-এশিয়ায় অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার আক্রান্ত ব্যক্তিবর্গের কল্যাণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া কার্যালয়ের সহযোগিতায় আঞ্চলিক সমন্বিত কাঠামো গঠন করা হয়েছে যা সরকার ও বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে একযোগে কাজ করে।

এ উপলক্ষে জাতিসংঘ সদর দফতরের গ্রাউন্ড ফ্লোরে একটি প্রদর্শনীর উদ্বোধনকালে তাঁর প্রতিষ্ঠান সূচনা ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ সরকার, সংশ্লিষ্ট অংশীজন ও এনজিওদের সঙ্গে সমন্বিতভাবে অটিজম স্পেক্ট্রাম ডিসঅর্ডারসহ অন্যান্য ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত ব্যক্তিবর্গের কল্যাণে নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেন সায়মা ওয়াজেদ। তিনি বলেন, ‘সবারই সমাজে সমানভাবে এবং সম্মানের সঙ্গে বসবাস করার অধিকার রয়েছে। অটিজম আক্রান্তদের বিশেষ করে মেয়ে ও নারীদের সব ধরনের সুযোগ দিতে হবে যা তাদের প্রয়োজন।’ জাতিসংঘে বাংলাদেশ ও কাতার মিশনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন সায়মা ওয়াজেদ হোসেন।  প্রদর্শনীতে বিভিন্ন সদস্য দেশ, জাতিসংঘের সহযোগী সংস্থা যেমন ইউনিসেফ ও বিভিন্ন এনজিও স্টল স্থাপন করে।

সায়মা ওয়াজেদ হোসেনের প্রতিষ্ঠান ‘সূচনা ফাউন্ডেশন’ এই প্রদর্শনীতে অংশ নেয় যা দর্শকদের মধ্যে যথেষ্ট আগ্রহের সৃষ্টি করে। প্রদর্শনীতে স্বাগত বক্তব্য দেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার গত ৯ বছরে অটিজম ও অন্যান্য নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার আক্রান্ত ব্যক্তিবর্গের কল্যাণে ব্যাপক উন্নয়নমূলক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে মর্মে উল্লেখ করে স্থায়ী প্রতিনিধি বলেন, ‘‘এজেন্ডা ২০৩০ গ্রহণকালে আমরা ‘কেউ পেছনে পড়ে থাকবে না’, বিশেষ করে যারা অসহায়— মর্মে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। অটিজম ও অন্যান্য নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার আক্রান্ত ব্যক্তিবর্গ যাতে অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে উন্নত জীবন-যাপন করতে পারে তার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির জন্য আমরা প্রতিবছর অটিজম সচেতনতা দিবস পালনের মাধ্যমে আমাদের সেই প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করছি।’’ প্রদর্শনীর উদ্বোধনীতে অন্যদের মাঝে আরও বক্তব্য দেন জাতিসংঘে নিযুক্ত কুয়েত ও কাতারের প্রতিনিধিরা।

সর্বশেষ খবর