মঙ্গলবার, ১০ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

কোটায় উত্তাল সারা দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

কোটায় উত্তাল সারা দেশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গতকাল ছাত্রদের বিক্ষোভ — রোহেত রাজীব

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ ও ছাত্রলীগের হামলার ঘটনায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ, মহাসড়ক অবরোধসহ নানা কর্মসূচিতে গতকাল দিনভর উত্তাল ছিল সারা দেশ। কোটা সংস্কারের দাবিতে সারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা ক্ষোভে ফুঁসে ওঠেন। এ পরিস্থিতিতে ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’-এর ব্যানারে আন্দোলনরতদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল সচিবালয়ে গতকাল বিকাল ৫টায় বৈঠক করে। বৈঠকে সরকারি চাকরির বিদ্যমান কোটাব্যবস্থা পরীক্ষা-নিরীক্ষার আশ্বাস পেয়ে ৭ মে পর্যন্ত আন্দোলন এক মাসের জন্য স্থগিত করেন শিক্ষার্থীরা। সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আন্দোলনকারীদের সঙ্গে প্রায় পৌনে দুই ঘণ্টা বৈঠকের পর এই সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠক শেষে তিনি বলেন, ‘কোটা সংস্কারের ব্যাপারে সরকার অনড় অবস্থানে নেই। আমরা তাদের দাবির যৌক্তিকতা ইতিবাচকভাবে দেখি।’

বৈঠকের পর বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, তারা সরকারের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে ৭ মে পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত করছেন। তিনি বলেন, সরকারের সঙ্গে বৈঠকে আজকের (গতকালের) মধ্যে আন্দোলনের সময় গ্রেফতার হওয়া সবাইকে মুক্তি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা সংস্কারের দাবিতে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীর আন্দোলন নিয়ে গতকাল মন্ত্রিসভার বৈঠকেও অনির্ধারিত আলোচনা হয়। বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. শফিউল আলম সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, কোটা নিয়ে সম্প্রতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে যে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে, সে বিষয়টিও পরীক্ষা করে দেখা হবে। গত রবিবার দুপুর ২টায় শাহবাগ মোড়ে গণজমায়েতের মাধ্যমে এ আন্দোলন শুরু হয়। পুলিশ আন্দোলনকারীদের জোর করে হটিয়ে দিতে চাইলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। পরে পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে থেমে থেমে রাতভর সংঘর্ষ চলে। গভীর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবন ভাঙচুর করেন একদল আন্দোলনকারী। অবশ্য পরে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতারা জানান, উপাচার্যের বাসভবন ভাঙচুরের সঙ্গে তারা সম্পৃক্ত নন। তারা এ হামলার সঙ্গে দায়ীদের বিচার দাবি করেন।

গতকালও দিনভর উত্তাল ঢাবি : রবিবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হওয়া কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন গতকাল তীব্র আকার ধারণ করে। সকাল থেকে টিএসসি মোড় অবরোধ করে রাখেন কয়েক হাজার আন্দোলনকারী। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সব বিভাগের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ছিল। দুপুর ২টার দিকে ঢাবির কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে চারটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর হয়। এ সময় কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীকেও মারধর করেন আন্দোলনকারীরা। ছাত্রলীগেরও হাজারখানেক কর্মী মধুর ক্যান্টিনে অবস্থান করেন। ফলে দিনভর বিশ্ববিদ্যালয়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করে ক্যাম্পাসে। এ পরিস্থিতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করে দেশকে অশান্ত করার ষড়যন্ত্র করছে একটা মহল। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিজেদের স্বার্থেই এগিয়ে আসবে। তারা বিশ্ববিদ্যালয় অস্থিতিশীল হতে দেবে না। আন্দোলনকারীরা গতকাল সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে আটক ছাত্রদের মুক্তির দাবি জানিয়ে বলেন, তা না হলে সারা দেশে দাবানল ছড়িয়ে পড়বে। সাধারণ মানুষ, শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা এই আন্দোলনে যুক্ত হবেন। সংগঠনের যুগ্মআহ্বায়ক মো. রাশেদ খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা পুলিশের মহাপরিদর্শককে (আইজি) বলতে চাই, যারা আন্দোলন করছেন, তারা আপনার ভাই বা সন্তানের মতো। তারা কারও বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন না। তারা অধিকারের প্রশ্নে আন্দোলন করছেন।’ পরে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে থেকে শত শত শিক্ষার্থী মিছিল নিয়ে শাহবাগ ঘুরে ক্যাম্পাসে আসেন। তারা টিএসসিতে অবস্থান নিয়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধুর বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই স্লোগান দেন। মিছিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপুলসংখ্যক ছাত্রীও অংশ নেন। বিভিন্ন হল থেকে ছাত্রছাত্রীরা মিছিল নিয়ে আসেন। কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সায়েন্স অ্যানেক্স ভবনের সামনে মানববন্ধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগসহ কয়েকটি বিভাগের শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধন কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা বলেন, ক্যাম্পাসে যে ঘটনা ঘটেছে, তা লজ্জাজনক। শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে নিরাপদ নন। মানববন্ধনে অংশ নেওয়া এক শিক্ষার্থী বলেন, কোটা সংস্কারের যে দাবি, তা যৌক্তিক। এটা সরকারের মেনে নেওয়া উচিত।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় : সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে পুরান ঢাকাকে কার্যত অচল করে দেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা। গতকাল সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত প্রথমে রায়সাহেব বাজার মোড়, পরে নয়াবাজার মোড়ে অবস্থান নেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এতে ঢাকা-মাওয়া, গুলিস্তান-সদরঘাট, সদরঘাট-যাত্রাবাড়ী মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। এ সময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরান ঢাকা। ‘কোটা দিয়ে কামলা নয়, মেধা দিয়ে আমলা চাই’, ‘শেখ মুজিবের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘শেখ হাসিনার বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘তিতুমীরের বাংলায়, কোটার কোনো ঠাঁই নাই’ ইত্যাদি স্লোগান দেন আন্দোলনকারীরা। বেলা সাড়ে ৩টায় জবি শিক্ষার্থীরা নয়াবাজার মোড়ে গতকালের মতো আন্দোলন সমাপ্ত ঘোষণা করলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক রাইসুল ইসলাম নয়ন বলেন, ‘আমাদের প্রাণের দাবি নিয়ে আন্দোলনে নেমেছি। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় : সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সিকদার জুলকারনাইনসহ আহত হয়েছেন ৮০ জন শিক্ষার্থী। ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা দুই ঘণ্টা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখলে পুলিশের আক্রমণে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে। গতকাল সকাল ১০টায় পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। এতে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের জয় বাংলা গেট দিয়ে বের হয়ে তারা ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেন। সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে এসে রাস্তায় অবস্থান নিয়ে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে সম্মিলিতভাবে স্লোগান দিতে থাকেন তারা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে অবরোধকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা। শেষ পর্যন্ত আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা দাঁড়ায় দুই হাজারে। এদিকে সকাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান করছিল আশুলিয়া থানার অর্ধশতাধিক পুলিশ। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল আউয়াল জাবির প্রক্টরকে রাস্তা থেকে শিক্ষার্থীদের সরিয়ে নিতে এক ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তাদের অবস্থানে অনড় থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম, শিক্ষক সমিতি ও শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা অবরোধ প্রত্যাহারের জন্য কয়েক দফা চেষ্টা চালান। অবশেষে অবরোধের দুই ঘণ্টা পর দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে অ্যাকশনে যায় পুলিশ। পুলিশের ছোড়া রাবার বুলেট ও টিয়ার শেলে ছত্রভঙ্গ হয়ে শিক্ষার্থীরা রাস্তা ছেড়ে ক্যাম্পাসে ঢুকে পড়েন। এ পর্যায়ে মহাসড়ক-সংলগ্ন সেন্ট্রাল ফিল্ড এবং ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের রাস্তায় অবস্থান নিয়ে পুলিশের উদ্দেশে ইটের টুকরা ছুড়তে থাকেন শিক্ষার্থীরা। পুলিশের টিয়ার শেলের ধোঁয়া আর রাবার বুলেটের আওয়াজে এক ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় এ সময়। কিন্তু একের পর এক টিয়ার শেল, রাবার বুলেট ও জলকামান ব্যবহার করেও শিক্ষার্থীদের পিছু হটাতে পারেনি পুলিশ। দুপুর ১টা ২০ মিনিটে শিক্ষার্থীদের ছোড়া ইটের আঘাতে উল্টো পিছু হটতে বাধ্য হয় পুলিশ। চলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা। পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল ছুড়তে থাকে। শিক্ষার্থীদের ইটপাটকেল ছোড়া অব্যাহত থাকলে বেড়ে যায় পুলিশের রাবার বুলেট ও টিয়ার শেলের সংখ্যা। এতে গুরুতর আহত হন শিক্ষার্থীরা। আহত শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। মেডিকেল সেন্টারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় ৮০ জন শিক্ষার্থী রক্তাক্ত ও আহত অবস্থায় সেখান থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। ৩৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের বাসে ও অ্যাম্বুলেন্সে করে সাভারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর দুপুর ২টার দিকে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি জুয়েল রানা ও সাধারণ সম্পাদক আবু সুফিয়ান চঞ্চলের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শান্ত করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় : কোটা প্রথা সংস্কার ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থীরা। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শাটল ট্রেন ক্যাম্পাসের উদ্দেশে ছেড়ে যেতে পারেনি। ফলে দিনভর চট্টগ্রাম ২ নম্বর গেট এলাকার ষোলশহর রেলওয়ে স্টেশনে অবস্থান নিয়ে শাটল ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেন শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ মিছিল করেন আন্দোলনকারীরা। বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী রাজু আহমেদ রূপক বলেন, ‘আমরা এই নৈতিক আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে আজকের পরীক্ষা বর্জন করেছি।’ ষোলশহর স্টেশন মাস্টার মো. শাহাব উদ্দিন বলেন, শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে সাড়ে ১০টার শাটল ট্রেন বন্ধ রাখা হয়। শাটল ট্রেনটি নিরাপদে রেলওয়ে স্টেশনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আপাতত ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো বিভাগ বা ইনস্টিটিউটের ক্লাস অনুষ্ঠিত হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হল থেকে ছাত্রছাত্রীরা শহীদ মিনারে এসে জড় হন। পরে তারা মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশন চত্বরে অবস্থান নেন। বিক্ষোভ মিছিলে পাঁচ শতাধিক ছাত্রছাত্রী অংশ নেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি বিভাগে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলেও রাজনীতিবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ৩০৫ নম্বর কোর্সের পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলনে যোগ দেন শিক্ষার্থীরা। ৯০ জন শিক্ষার্থী গণস্বাক্ষর করে বিভাগের সভাপতির কাছে পরীক্ষা না দেওয়ার কথা জানিয়ে হল থেকে বেরিয়ে আসেন। এ ছাড়া বাংলা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরাও পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলনে শামিল হন। জানা যায়, নগরীর ২ নম্বর গেটের ষোলশহর স্টেশনে শিক্ষার্থীরা গতকাল সকাল থেকে জড় হয়ে রেললাইন অবরোধ করে রাখেন। এ সময় তারা ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘শাহবাগে হামলা কেন প্রশাসন জবাব চাই’, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেব না’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় : সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে এবং ঢাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে গতকাল ভোর ৬টায় রাস্তায় নেমে দিনব্যাপী এই আন্দোলন করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী। এ সময় তারা ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। এতে মহাসড়কের দুই পাশে যানজটের সৃষ্টি হয়। ফলে ভোগান্তিতে পড়েন বিভিন্ন যানবাহনের যাত্রী। সরেজমিন দেখা যায়, এদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো বিভাগেই ক্লাস অনুষ্ঠিত হয়নি। সকাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো থেকে শিক্ষার্থীরা দলে দলে আন্দোলনে যোগ দেন। বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে জনসমুদ্রে পরিণত হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘পিতা তুমি ফিরে এসো বৈষম্য দূর কর’, ‘মরতে হলে একসঙ্গে মরব, তবু দাবি আদায় করে ছাড়ব’ এমন নানা স্লোগান দিতে থাকেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনের রাবি শাখার আহ্বায়ক মাসুদ মুন্নাফ বলেন, ‘সারা দেশে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস বর্জনের নীরব কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।’ এর আগে রবিবার দিবাগত রাত ১টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জোহা চত্বর থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। দুই হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর মিছিলটি আবাসিক হলগুলো প্রদক্ষিণ করে প্রধান ফটকে গিয়ে শেষ হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক দেড় ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন। তারা রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে দেন। পরে রাত ৩টার দিকে মহাসড়কে অবরোধ তুলে নিয়ে ক্যাম্পাসে ফিরে যান শিক্ষার্থীরা।

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় : সারা দেশে চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে এবং ঢাকায় বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশের হামলার ঘটনার প্রতিবাদে অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, পূর্বনির্ধারিত ছাত্র ধর্মঘটের অংশ হিসেবে গতকাল সকাল ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে অবস্থান নেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেন তারা। সকাল ৮টায় শাখা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রধান ফটক থেকে উঠিয়ে দেন। পরে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বেলা দেড়টায় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন। ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করেন তারা। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়ক নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করেছি। কেন্দ্রীয় কমিটির পরবর্তী নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা কর্মসূচি গ্রহণ করব।’

বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় (রাজশাহী) : কোটা সংস্কার দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন বেসরকারি বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধন থেকে শিক্ষার্থীরা সরকারকে দ্রুত দাবি মেনে নিতে হুঁশিয়ারি দেন।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় : কোটা সংস্কার দাবিতে আন্দোলনে উত্তাল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) ক্যাম্পাস। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বস্তরের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত হয় পুরো ক্যাম্পাস। কোটা সংস্কার দাবিতে গতকাল ভোর থেকেই শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরু হয়। ক্লাস বর্জন করে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়কে বিক্ষোভ মিছিল করেন কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দেয়। বিক্ষোভ মিছিল শেষে আন্দোলনকারীরা ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকে মহাসড়ক অবরোধ করতে গেলে তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরিয়াল বডি, শাখা ছাত্রলীগ ও পুলিশের বাধার মুখে পড়েন। এ সময় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে হাতাহাতি শুরু করেন। এক পর্যায়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রধান ফটক পার হতে না পেরে মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব ম্যুরালের পাশে অবস্থান নেন। তারা ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘মেধা জাতির মানদণ্ড’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরিয়াল বডি, শাখা ছাত্রলীগ ও পুলিশের চাপে আন্দোলন স্থগিত করতে বাধ্য হন শিক্ষার্থীরা।

রুয়েট (রাজশাহী) : রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) শিক্ষার্থীরা গতকাল বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হয়ে ক্যাম্পাস ও নগরীর তালাইমাড়ি মোড় পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল করেন। পরে শিক্ষার্থীরা রুয়েটের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক দুই ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন। বেলা ১টায় পরদিন (আজ) ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দিয়ে তারা অবরোধ তুলে ফিরে যান। রুয়েটের মেকাট্রনিকস বিভাগের ১৪ সিরিজের শিক্ষার্থী মিরাজ হোসেন বলেন, ‘সারা দেশে কোটা সংস্কারের যে আন্দোলন চলছে তাতে আমরাও একাত্মতা প্রকাশ করে কর্মসূচি পালন করছি। কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে হামলার প্রতিবাদে আমরা ক্লাস বর্জন করে অবরোধ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছি। আগামীকালও (আজ) রুয়েটে আমরা ক্লাস বর্জন কর্মসূচি পালন করব। দাবি না মানা পর্যন্ত আমরা এ আন্দোলন চালিয়ে যাব।’

কুয়েট (খুলনা) : কোটা পদ্ধতি সংস্কার দাবিতে খুলনায় ক্লাস বর্জন ও সড়ক অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল বেলা ১১টা থেকে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন শুরু করেন। এ সময় ঢাকার শাহবাগে আন্দোলনকারীদের ওপর কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপের ঘটনার প্রতিবাদ জানান শিক্ষার্থীরা।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় : কোটা সংস্কার দাবিতে গতকাল বেলা দেড়টায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক অবরোধ করেন। ক্যাম্পাস থেকে মিছিল বের করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়ক ৩০ মিনিট অবরোধ করে রাখেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিকালে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের খুলনা জেলা শাখার উদ্যোগে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করা হয়।

এর আগে রবিবার রাতে নগরীর জিরো পয়েন্টে জড়ো হন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতা-কর্মীরা। সেখানে তারা সড়ক অবরোধের চেষ্টা করলে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বাধা দেয়।

হাবিপ্রবি (দিনাজপুর) : কোটা সংস্কার দাবিতে দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা গতকাল তিন ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সামনে দিনাজপুর-রংপুর মহাসড়কে এ অবরোধ হয়। মহাসড়কে শিক্ষার্থীদের অবরোধ চলাকালে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুর্ভোগে পড়েন দূর-দূরান্ত থেকে আসা যাত্রীরা। ‘কোটা দিয়ে কামলা নয়, মেধা দিয়ে আমলা চাই’, ‘কোটা প্রথা নিপাত যাক, মেধাবীরা মুক্তি পাক’ ইত্যাদি স্লোগান দেন শিক্ষার্থীরা। মহাসড়কে হাবিপ্রবির সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে সড়ক অবরোধে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ঢল নামে। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের কয়েকশ শিক্ষার্থী মহাসড়কে অবস্থান নেন।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় : সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কার দাবিতে রেলপথ অবরোধ করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থীরা। জব্বারের মোড়ে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনে গতকাল বেলা সাড়ে ১১টা থেকে তারা এ রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন। রেলপথ অবরোধ করার ফলে বিভিন্ন স্টেশন থেকে কোনো ট্রেন ময়মনসিংহের দিকে ছেড়ে আসতে পারেনি। এ ছাড়া ছেড়ে যেতে পারেনি দুটি আন্তনগর ট্রেন। অবরোধ চলাকালে তা তুলে নেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসক ড. সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস ও পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম মাইকিং করলেও আন্দোলকারীরা সরেননি। এদিকে আন্দোলনকারীদের সমর্থন জানিয়েছেন বাকৃবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মিয়া মো. রুবেল। ময়মনসিংহ রেলস্টেশনের সুপার জহুরুল ইসলাম জানান, অবরোধের ফলে মহুয়া ট্রেনটি (নেত্রকোনা-মোহনগঞ্জগামী) ফাতেমা নগরে, অগ্নিবীণা (সরিষাবাড়ীগামী) আউলিয়ানগরে, ডেমু (ময়মনসিংহগামী) গফরগাঁওয়ে, বলাকা ও দেওয়ানগঞ্জ কমিউটার (ঢাকাগামী) ময়মনসিংহ জংশনে আটকে থাকে। এ ছাড়া যমুনা এক্সপ্রেস ও ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস ঢাকা থেকে ছেড়ে আসতে পারেনি। অবরোধ চলাকালে কয়েক দফা বিক্ষোভ মিছিল করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা চলমান কোটা ৫৬ ভাগ থেকে কমিয়ে ১০ ভাগে নামিয়ে আনাসহ পাঁচ দফা দাবি জানান।

রংপুর : কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে গতকাল থেকে রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব সরকারি ও বেসরকারি কলেজে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা। কেন্দ্রীয় কমিটির ঘোষণা অনুযায়ী ধর্মঘট শুরু করা হয়েছে বলে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের স্থানীয় নেতারা জানিয়েছেন। এদিকে একই দাবিতে গতকাল সকাল ৯টায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনসহ সব অনুষদের প্রধান গেটে তালা ঝুলিয়ে দেন। বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে নগরীর মডার্ন মোড়ে বেলা ১১টা থেকে দুই ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন শিক্ষার্থীরা। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, কারমাইকেল কলেজ, রংপুর সরকারি কলেজ, রংপুর মডেল কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী অবরোধ কর্মসূচিতে অংশ নেন। রংপুর বিভাগের সাত জেলার প্রবেশমুখ মডার্ন মোড় অবরোধ করে রাখায় সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। এতে দুর্ভোগের শিকার হন মানুষ।

কুমিল্লা : কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গতকাল ক্লাস বর্জন করেছেন। এ ছাড়া কুমিল্লার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা নগরীর পূবালী চত্বরে বিক্ষোভ মিছিল করেন। এ ছাড়া সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ জেলা শাখার সদস্যরা কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মো. আবুল ফজল মীর ও পুলিশ সুপার মো. শাহ আবিদ হোসেনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন। গতকাল ক্লাস বর্জনের পর দুপুরে কোটা পদ্ধতি সংস্কার করে শতকরা ৫৬ থেকে ১০ ভাগে নিয়ে আসাসহ পাঁচ দফা দাবি জানান তারা। এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা নগরীর পূবালী চত্বরে অবস্থান নেন এবং মিছিল করতে থাকেন। বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ কুমিল্লা জেলা শাখার সভাপতি মাজহারুল ইসলাম হানিফ বলেন, দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে একাত্ম হয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সব বিভাগের ক্লাস বর্জন করেছেন। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হবে।

বরিশাল : কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে বরিশালে সড়ক অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল সকাল সাড়ে ৯টায় ঢাকা-বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কের কর্ণকাঠী এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে অবরোধ করেন তারা। এ সময় শিক্ষার্থীরা মহাসড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন। মহাসড়ক অবরোধের ফলে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন জনসাধারণ। বেলা ১২টার দিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাসহ পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তারা বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের শান্ত করে অবরোধ প্রত্যাহার করানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। পরে কোটা পদ্ধতি সংস্কার না করা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। এদিকে একই দাবিতে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরিশাল বিএম কলেজের সামনে অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। কোটা পদ্ধতি সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। এর আগে রবিবার রাত ৮টা থেকে গতকাল ভোর ৪টা পর্যন্ত বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়ক অবরোধ রাখেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা।

বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি : কোটা প্রথা সংস্কারের দাবিতে গোপালগঞ্জ সদরের ঘোনাপাড়ায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গতকাল বেলা সাড়ে ১০টার দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে বিক্ষোভ-সমাবেশে যোগ দেন। পরে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনতিদূরে ঘোনাপাড়ায় গিয়ে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে বাঁশ, ব্লক ও ইট দিয়ে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেন। সেখানে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন। এদিকে মহাসড়ক অবরোধ করার ফলে রাস্তার উভয় প্রান্তে অসংখ্য যানবাহন আটকা পড়ে। এতে যাত্রীদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

কোটা সংস্কারের দাবিতে গতকাল দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও রাজপথে নেমে আসেন। দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংগঠন, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস অ্যালায়েন্স অব বাংলাদেশ (পুসাব)- এর ডাকে গতকাল দিনভর বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোটাবিরোধী পোস্টার ও ব্যানার নিয়ে আন্দোলন করেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ছিল ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ, স্টেট ইউনিভার্সিটি, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল  ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক, ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি, উত্তরা ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে রামপুরায় অবস্থিত ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা দুপুরে রামপুরা ব্রিজ অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। আর ঢাকার বাইরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে চট্টগ্রামের আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোটাবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর