বহুল আকাঙ্ক্ষিত মেট্রোরেলের প্রথম স্প্যান দৃশ্যমান হলো। নির্মাণকাজ উদ্বোধনের দেড় বছর পর রাজধানীবাসীর জন্য এলো এই সুসংবাদ। আগামী ১৪ এপ্রিল পয়লা বৈশাখের দিন মেট্রোরেলের প্রথম স্প্যান উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাজধানীবাসীর প্রতি এটি প্রধানমন্ত্রীর বৈশাখী উপহার। ইতিমধ্যে দৃশ্যমান প্রথম স্প্যানের কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। আজকালের মধ্যেই প্রথম স্প্যান বসানোর কাজ শেষ হবে। এ ছাড়া চলতি মাসের মধ্যেই আগারগাঁওয়ে প্রকল্পের দ্বিতীয় স্প্যান বসানো হবে। মেট্রোরেলের প্রকৌশলীরা জানান, উত্তরায় মেট্রোরেলের মূল ডিপো এলাকার একটি স্প্যান স্থাপনের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। পরবর্তী স্প্যান বসানো হবে আগারগাঁওয়ে।রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ীতে মেট্রোরেলের দুটি খুঁটির ওপর বসানো হচ্ছে উড়াল রেলপথের প্রথম স্প্যান। এর মধ্য দিয়ে রাজধানীবাসীর স্বপ্নের মেট্রোরেল নির্মাণকাজের দৃশ্যমান অগ্রগতি হচ্ছে। প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা বলেছেন, প্রকল্পের মূল কাজ এখন দ্রুত গতিতে এগোবে। মাটি থেকে ১০ মিটার উঁচুতে দুটি খুঁটিতে প্রথম স্প্যানটি বসানো হচ্ছে। ৩৭৭টি পিলারের ওপর এ রকম ৩৭৬টি স্প্যান বসে বিস্তৃত হবে ২০ কিলোমিটারের মেট্রোরেল। তবে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই পাঁচ সেট ট্রেন দিয়ে উত্তরা-আগারগাঁও রুটে যাত্রা করবে এই দ্রুততম যান। ১০০ কিলোমিটার গতিতে চলবে মেট্রোরেল। গতকাল দুপুরে উত্তরা ১৫ নম্বর এলাকায় রাজউকের উত্তরা তৃতীয় আবাসিক প্রকল্পের দিয়াবাড়ীতে গিয়ে দেখা যায়, প্রখর রোদের মধ্যে শত শত শ্রমিক ও প্রকৌশলী কাজ করছেন। মেট্রোরেলের ডিপো ও স্টেশন নির্মাণের কর্মযজ্ঞ চলছে সেখানে। ডিপো ও লাইন নির্মাণকাজের অংশ বেষ্টনী দিয়ে রাখা হয়েছে। দুপুরের খাবার সময় একদল শ্রমিক নির্মাণকাজের পাশেই খাবার নিয়ে বসেছেন। অন্য একটি দল পাইলিংয়ের রডে তার বাঁধছেন। তাদের তদারকি করছেন একজন প্রকৌশলী। রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের (ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি)-৬) ভায়াডাক্ট (স্প্যান) নির্মাণকাজ শুরু হয় গত বছর। এর আগে ২০১৬ সালের ২ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেট্রোরেল নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২৪ হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ২০২৪ সালে। তবে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দিয়াবাড়ী থেকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পেছন দিয়ে পল্লবী, মিরপুর হয়ে আগারগাঁও অংশে যাত্রী পরিবহন শুরু হবে আগামী বছরের শেষ দিকে। সেই লক্ষ্য নিয়েই রাতদিন কাজ চলছে। প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আগারগাঁও থেকে উত্তরা পর্যন্ত পুরো এলাকায় জায়গায় জায়গায় পাইলিংয়ের কাজ চলছে। গতকাল বিকালে মেট্রোরেলের অন্য প্রান্ত আগারগাঁওয়ে গিয়ে দেখা যায়, পরিকল্পনা কমিশনের পাশে, আইডিবি ভবনের পাশে গভীর গর্ত খুঁড়ে পিলার বসানোর কাজ হচ্ছে। এরও দক্ষিণে চন্দ্রিমা উদ্যানের পূর্ব কোণে মাটি খোঁড়া চলছে।
ডিএমটিসিএল প্রকল্প অনুযায়ী, প্যাকেজ ৩ ও ৪-এর কাজ করছে ইতালিয়ান-থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি লিমিটেড (ইতাল-থাই) ও চীনের প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রো করপোরেশন লিমিটেড। প্যাকেজ-২-এর আওতায় উত্তরায় ডিপো নির্মাণ করছে ইতাল-থাই ও সিনোহাইড্রো। আর প্যাকেজ-১-এর আওতায় ডিপো এলাকায় ভূমি উন্নয়নকাজ করা হচ্ছে। আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল প্রকল্পের প্যাকেজ-৫ ও ৬-এর কাজ। প্যাকেজ ৭-এ হলো মেট্রোরেলের বৈদ্যুতিক-যান্ত্রিক সব কাজ। বর্তমানে এর মূল্যায়ন কার্যক্রম চলছে। ৮ নম্বর প্যাকেজে রয়েছে রেলকোচ ও ট্র্যাক পরিচালনা রক্ষণাবেক্ষণ কাজ। আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে পাঁচ সেট ট্রেন উত্তরা-আগারগাঁও রুটে চালানো শুরু হবে। ডিসেম্বর ২০২১-এর মধ্যে বাকি ১৯ সেট ট্রেন ও ডিপো যন্ত্রাংশ সরবরাহ শেষ হবে। রেল কোচ আমদানি করা হবে জাপানের গাড়ি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান কাওয়াসাকি-মিটসুবিশি থেকে। মেট্রোরেলের এ পুরো পথটাই হবে এলিভেটেড (উড়ালপথে)।