মঙ্গলবার, ১০ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা
কোটা পদ্ধতি পরীক্ষা-নিরীক্ষার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

এক মাসের জন্য আন্দোলন স্থগিত, সচিবালয়ে বৈঠক

নিজস্ব প্রতিবেদক

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে আলোচনা বৈঠকের পর আন্দোলনকারী ছাত্ররা  কোটা সংস্কার আন্দোলন আগামী ৭ মে পর্যন্ত স্থগিত ঘোষণা করেছেন। এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি পরীক্ষা-নিরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ নির্দেশ দেওয়া হয় বলে বৈঠক শেষে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম। তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে ব্রিফ করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তিনি জানান, প্রসঙ্গটি মন্ত্রিসভার আলোচ্যসূচিতে ছিল না। কিন্তু একজন মন্ত্রী বিষয়টি তোলার পর এ নিয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় হলো এটার স্থায়ী স্টেইক হোল্ডার। তারা বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবে।

এদিকে গতকাল বিকালে সচিবালয়ে আন্দোলনরত ২০ সদস্যের প্রতিনিধি দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে আন্দোলন আগামী ৭ মে পর্যন্ত স্থগিত ঘোষণা দেন। সচিবালয়ে সড়ক মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সরকারের তরফে আন্দোলনকারীদের আশ্বস্ত করে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আগামী ৭ মে মধ্যে সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থার বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবীর নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, এনামুল হক শামীম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, মুক্তিযুদ্ধ সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, সংস্কৃতি সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আফজাল হোসেন, উপ দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া  সদস্য এস এম কামাল হোসেন। এ ছাড়াও ঢাকা মেট্রো পুলিশ পলিটন-ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। আরও ছিলেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন, মো. সুমন, একরামুল হক, উজ্জ্বল মিয়া, শাহীদুল আনোয়ার নিলয়, সন্ধ্যানী চক্রবর্তী, সুহেল ইসলাম, সাকিব হাসান, কানিজ ফাতেমা, আফসানা সাফা, তিথী চক্রবর্তী, দিনা মিত্র, আরজিনা আহসান, নুবনা জাহান, বুলবুল, তারেক রহমান, মাহিম রেজা, আল ইমরান হুসাইন, ফারুক হাসান প্রমুখ। প্রায় সোয়া দুই ঘণ্টা আলোচনার পর আন্দোলনকারী প্রতিনিধিদের পাশে নিয়ে ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, ‘সরকার রিজিড অবস্থানে নেই। আমি তাদের আশ্বস্ত করেছি। তাদের দাবির যৌক্তিকতা আমরা ইতিবাচকভাবেই দেখব।’ মন্ত্রী বলেন, ‘আগামী ৭ মের মধ্যে সরকার এই বিষয়টি রিভিউ বা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে। রেজাল্ট কী আসে আমরা সেটা জানিয়ে দেব। ছাত্র প্রতিনিধিরা কথা দিয়েছেন, ওই পর্যন্ত তারা তাদের চলমান আন্দোলন স্থগিত রাখবেন।’ ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তরুণ সমাজ যারা রাজনীতির অপরিহার্য অংশ। আমরা তাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনেছি। তাদের পাঁচজন কথা বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন, বর্তমান কোটা পদ্ধতি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য। এ ব্যাপারে তিনি সংশ্লিষ্টদেরও নির্দেশনা দিয়েছেন। তাদের দাবির বিষয়টা ইতিবাচকভাবে দেখছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি কোটা সংস্কারের সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত নয়। তাহলে কেন তার বাসভবনে হামলা ভাঙচুর করা হলো? তার পরিবারের সদস্যরা প্রাণ বাঁচাতে বাগানে আশ্রয় নিয়েছিলেন। এ ব্যাপারে ছাত্র প্রতিনিধিরা আমাদের বলেছেন, তারা হামলা করেননি। অনুপ্রবেশকারী ও বহিরাগতরা এ হামলা করেছে।’ ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা ছাত্রদের বলেছি যারা এই হামলার সঙ্গে জড়িত, ভিডিও ফুটেজ দেখে পুলিশ তাদের গ্রেফতার করবে এবং আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে। ছাত্র প্রতিনিধিরা তাতে একমত হয়েছেন। পুলিশ যাতে সাধারণ ও নিরীহ কোনো ছাত্রকে হয়রানি না করে সে জন্যও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ভিসির বাসভবনে যারা হামলায় জড়িত তাদের শাস্তি পেতে হবে।’ অন্যদিকে ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন কোটা সংস্কারের বিষয়টি আমলে নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে, আগামী মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমার যে সব ভাই বোন গ্রেফতার হয়েছেন তাদের সবাইকে নিঃশর্তভাবে মুক্তি দেওয়া হবে এবং পাশাপাশি যারা আহত হয়েছেন তাদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করবে সরকার।’

এদিকে গতকাল মন্ত্রিপরিষদ বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘আজকে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে কোটা পদ্ধতি পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিষয় আছে। এটা নিয়ে মন্ত্রিসভায় কিছুটা অনির্ধারিত আলোচনা হয়েছে।’ এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী কোনো নির্দেশনা দিয়েছেন কি না— এমন প্রশ্নে সচিব বলেন, ‘এটা ইনফরমাল আলোচনা তো, ইনফরমালভাবে ধরুন’— এভাবে বলেই তিনি থেমে যান। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘বিগত তিনটি বিসিএসে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত ছিল, মুক্তিযোদ্ধা বা অন্যান্য কোটা যদি কোটা সংশ্লিষ্টদের দিয়ে পূরণ না হয় তাহলে সেটা মেধা তালিকা থেকে যারা শীর্ষে অবস্থান করবে তাদের দিয়ে পূরণ করা হবে। এবং সেটিই করা হয়েছে। আসলে এখানে কোটার মাধ্যমে মেধা কখনো অবহেলিত হয় না’—এমন মন্তব্য করে সচিব বলেন, ‘যেমন ধরুন মহিলা কোটায় যারা থাকবে তাদের মধ্যে যারা মেধায় এগিয়ে তারাই পাবে। এমন নয় যে তাদের মধ্যে মেধার কোনো প্রতিযোগিতা হয় না। ফলে তারা অবহেলিত হচ্ছে না। প্রতিটি সেক্টরেই মেধায় যারা অগ্রসর তারাই আসবে। কোটার দ্বারা কারও কোনো মেধার ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।’ অন্য এক প্রশ্নে সচিব বলেন, ‘কোটায় পূরণ না হলে মেধায় যারা এগিয়ে থাকবে তাদের মধ্যে থেকে নেওয়া হবে।

এটাই তো একটি সংস্কার। কথা হচ্ছে সংবিধানে বলা হয়েছে, মেধায় যারা অগ্রসর তাদের সামনে নিয়ে আসার জন্য। তবে কোটার কারণে যারা মেধাবী তারা বঞ্চিত হয়নি।’ তিনি বলেন, ‘শুধুমাত্র মেধায় নিলে যারা অনগ্রসর জেলার জন্য যে জেলা কোটা রাখা হয়েছে, তারা বঞ্চিত হবে। এটা তো বুঝতে হবে। তখন ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী পাবে না। তবে আমরা বিগত মন্ত্রিপরিষদ সভায় যে সংশোধনী আনা হয়েছে তাতেই তো মেধাবীরা অনেক বেশি সুবিধা পাচ্ছে।’

উল্লেখ্য, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে রবিবার দুপুরের পর রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেয় সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা। এরপর গতকাল সকাল থেকে সেই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে।

সর্বশেষ খবর