মঙ্গলবার, ১০ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা
ঢাকায় ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব

অপশক্তির বিরুদ্ধে একসঙ্গে লড়াই

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

সন্ত্রাস, উগ্রবাদ ও কট্টরপন্থার মতো সব অপশক্তির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ও ভারত একসঙ্গে লড়বে বলে জানিয়েছেন ঢাকা সফররত ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিজয় কেশব গোখলে। তিনি বলেন, এ ধরনের অপশক্তির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ, ভারত ও সমমনা দেশগুলো একসঙ্গে কাজ অব্যাহত রাখবে। এ সময় ভারতীয় সচিব আরও জানিয়েছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের অমীমাংসিত ইস্যুগুলোর সমাধানে নয়াদিল্লি জোরালোভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশকে ‘সোনার বাংলা’ হিসেবে অভিহিত করে ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার মাইল ফলক অর্জন করায় এ দেশকে অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, আগামী ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়া ও ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হওয়ার লক্ষ্য অর্জনে উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে ভারত পাশে থাকবে। গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায়  যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বিজয় কেশব গোখলে এসব কথা জানান। বাংলাদেশের সঙ্গে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকের পর অনুষ্ঠিত ওই সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহিদুল হকও উপস্থিত ছিলেন। বিজয় গোখলে এরপরই সোনারগাঁও হোটেলে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কবিষয়ক একটি আলোচনা অনুষ্ঠানেও অমীমাংসিত ইস্যুগুলো নিরসনে ভারতের জোরালোভাবে কাজ করে যাওয়ার কথা জানান। তবে দুটি অনুষ্ঠানের কোথাও তিনি প্রস্তাবিত তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির কথা উল্লেখ করেননি। তবে ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিবকে পাশে রেখে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মো. শহিদুল হক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, আনুষ্ঠানিক বৈঠকে তারা তিস্তা ইস্যুতেও আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে এ ব্যাপারে ভারত সরকার তাদের অঙ্গীকার পূণর্ব্যক্ত করেছে। এই ইস্যুটি তারা যত দ্রুত সম্ভব নিরসনের চেষ্টা চালাচ্ছে।’ জানা যায়, পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকের পর গতকাল বাংলাদেশ ও ভারত উন্নয়ন সহযোগিতা জোরদারে ছয়টি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করেছে। এগুলো ভারতের নুমালিগড় থেকে বাংলাদেশের পার্বতীপুরে হাইস্পিড ডিজেল পরিবহনের জন্য ১২৯ দশমিক পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ মৈত্রী পাইপ লাইন নির্মাণ, ভারতের প্রসার ভারতি ও বাংলাদেশ বেতারের মধ্যে সহযোগিতা, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিশেষজ্ঞ নিয়োগ বিষয়ে চুক্তিতে সংযুক্তি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) উর্দু চেয়ার প্রতিষ্ঠা, ২৫ কোটি টাকা ভারতীয় মঞ্জুরি সহায়তায় বাংলাদেশে ৫০৯টি স্কুলে কম্পিউটার ও ল্যাঙ্গুয়েজ ল্যাব স্থাপন এবং ২৫ কোটি টাকা ভারতীয় মঞ্জুরি সহায়তায় রংপুর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন বিভিন্ন সড়ক সংস্কার। যৌথ সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহিদুল হক বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুসহ সব প্রেক্ষাপট নিয়ে তাঁরা আলোচনা করেছেন। ভারত এই ইস্যুকে যেভাবে দেখছে তাতে বাংলাদেশ অত্যন্ত খুশি। ভারত এই ইস্যুর শান্তিপূর্ণ সমাধান দেখতে চায়। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব ‘রোহিঙ্গা’ শব্দ ব্যবহার না করে ‘রাখাইন রাজ্যের বাস্তুচ্যুত ব্যক্তি’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, যত দ্রুত সম্ভব এ সংকট সমাধানে ভারত বাংলাদেশকে সহযোগিতা দেওয়া অব্যাহত রাখবে। কক্সবাজারে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের জন্য তিনি ভারতের দ্বিতীয় দফায় ত্রাণ কার্যক্রমের ঘোষণা দেন। রোহিঙ্গাদের প্রতি বাংলাদেশের মানবিক ভূমিকারও তিনি প্রশংসা করেন। বিজয় গোখলে বলেন, বাংলাদেশ থেকে ফিরে যাওয়া রোহিঙ্গাদের চাহিদা মেটাতে ভারত মিয়ানমারে ‘প্রি ফেব্রিকেটেড হাউজ’ নির্মাণসহ আর্থ-সামাজিক সহায়তা দিচ্ছে। বৈঠকে তারা একসঙ্গে দুই দেশের সামনে চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা ও সুযোগগুলো কাজে লাগানোর বিষয়ে আলোচনা করেছেন। ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব আরও বলেন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, নিরাপত্তা, কানেক্টিভিটি, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, জাহাজ চলাচল, মানুষে মানুষে যোগাযোগসহ বিভিন্ন ইস্যুতে অগ্রগতিতে তারা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে ভারতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী, বাংলাদেশে ভারতের রাষ্ট্রদূত হর্ষ বর্ধন শ্রিংলাসহ দুই দেশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের পর মধ্যাহ্ন ভোজে চীনসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে যোগ দেন।

আরো জোরালো সম্পর্ক প্রত্যাশা: ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব গতকাল দুপুরে ঢাকার সোনারগাঁও হোটেলে বেসরকারি সংস্থা ইনস্টিটিউট ফর পলিসি, অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড গভর্ন্যান্স (আইপ্যাগ) আয়োজিত বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কবিষয়ক আলোচনা অনুষ্ঠানে আরো জোরালো দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক গড়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, দুই পক্ষের লাভের ভিত্তিতেই বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা এগিয়ে চলছে। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে কেবল রাজনৈতিকভাবে না দেখে অবশ্যই অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট থেকেও দেখা উচিত। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী এই অঞ্চলের জনগণের স্বার্থে উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদারে বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ উদ্যোগ নেওয়ার তাগিদ দেন। অনুষ্ঠানে ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলাও বক্তব্য রাখেন। উল্লেখ্য, ভারতের পররাষ্ট্র সচিব গত রবিবার বিকালে বাংলাদেশে আসেন। এরপর রবিবার সন্ধ্যায় তিনি নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে রূদ্ধদ্বার বৈঠকে অংশ নেন। তিনি গতকাল সকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে এবং সন্ধ্যায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সফর শেষে আজ সকালে তার বাংলাদেশ ছাড়ার কথা।

সর্বশেষ খবর