বুধবার, ১১ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ, ভোগান্তি

থমথমে ঢাবি । শিক্ষকদের সমাবেশ । ভিসির বাড়িতে কাদের । জাহাঙ্গীরনগরে ক্লাস বর্জন

নিজস্ব ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ, ভোগান্তি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে গতকাল রাতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের অবস্থান —রোহেত রাজীব

সারা দিন থমথমে অবস্থা থাকলেও সন্ধ্যার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এলাকায় আবার জড় হয়েছেন কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীরা। আন্দোলন স্থগিত বা অব্যাহত রাখা নিয়ে আন্দোলনকারীদের মধ্যে গতকাল দিনের প্রথম ভাগ পর্যন্ত মতদ্বৈধতা ছিল। পরে বিকালে ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। কোটা বিষয়ে অর্থ ও কৃষিমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্যে তারা আগের অবস্থান থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

কোটা সংস্কারের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও গতকাল আন্দোলনে  ছিলেন রাজধানীর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন সড়ক অবরোধের কারণে গতকাল নগরীতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েন ঢাকাবাসী। কার্যত অচল হয়ে যায় রাজধানী। এ ছাড়া ঢাবি ভিসির বাসভবনে হামলার ঘটনায় মানববন্ধন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। উপাচার্যের বাসভবন পরিদর্শন করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। শিক্ষার্থীরা বলছেন, কোটা সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন এবং সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকবে। এ আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। সরকার দ্রুত এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে বলে তাদের আশাবাদ। গতকাল তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলে আহ্ছান উল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রামপুরায় ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, নতুনবাজারে ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সেস (ইউআইটিএস), বসুন্ধরা গেটে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ (এআইইউবি), নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি ও ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ধানমন্ডির ২৭ নম্বর সড়কে স্টেট ইউনিভার্সিটি ও সোবহানবাগে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অবরোধের ফলে মৌচাক থেকে কুড়িল বিশ্বরোড পর্যন্ত সড়কের দুই দিকেই যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে স্থবির হয়ে পড়ে সড়কটি। স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থীসহ পথচারীরা হেঁটে গন্তব্যে গিয়েছেন। প্রচণ্ড রোদে হাঁটতে গিয়ে তারা গলদঘর্ম হয়েছেন। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ঢাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমরা একাত্মতা প্রকাশ করেছি। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রামপুরা ব্রিজের দুই পাশ অবরোধ করে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা মানববন্ধনে দাঁড়ান প্ল্যাকার্ড নিয়ে। ইউআইটিএসের শিক্ষার্থীরা আমেরিকান দূতাবাসের সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে আন্দোলনে সম্পৃক্ত হন। এতে যানজট ছড়িয়ে পড়ে হাতিরঝিল, গুলশান-১ ও ২ ও বনানীর অলিগলিতে। রামপুরায় পথচারী নুরুর রহমান জানান, ‘আমার বাসা বনশ্রীতে। ভোরে কুড়িল গিয়েছিলাম। কাজ শেষ করে ফেরার পথে তীব্র যানজটে পড়ি। পরে হেঁটে রামপুরা পৌঁছাই।’

আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা : প্রধানমন্ত্রীর সুনির্দিষ্ট ঘোষণা না আসা পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। গতকাল সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে সংবাদ সম্মেলন করে তারা এ কথা জানান। এ সময় বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্মআহ্বায়ক মো. রাশেদ খান সাংবাদিকদের কাছে আরও তিনটি দাবির কথা তুলে ধরেন। দাবির মধ্যে রয়েছে— আটকদের মুক্তি, আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা ও কোটা সংস্কারের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সুনির্দিষ্ট ঘোষণা।

এর আগে সকালে সংবাদ সম্মেলন করে আন্দোলনকারীরা বিকাল ৫টার মধ্যে কোটা সংস্কার নিয়ে জাতীয় সংসদে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর দেওয়া বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিতে তাকে সময় বেঁধে দেন। আন্দোলনকারীরা বলেন, সচিবালয়ে সরকারের সঙ্গে বৈঠকের এক দিন পরই অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, বাজেটের পর কোটা সংস্কারে হাত দেওয়া হবে। এমন দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া মেনে নেওয়া হবে না। সারা দেশে অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে দেশের সব কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করার আহ্বান জানান তারা। এ সময় তারা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন।

উপাচার্যের বাসভবন পরিদর্শনে ওবায়দুল কাদের : গতকাল সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) উপাচার্যের বাসভবন পরিদর্শনে গিয়ে উপাচার্যের বাসভবনে হামলাকারীদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, হামলাকারী বেশ কয়েকজন চিহ্নিত হয়েছে। তদন্ত চলছে। বাকিরাও চিহ্নিত হবে। এই নারকীয় বর্বরতার সঙ্গে যারা জড়িত কোনো অবস্থাতেই তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। হামলার ঘটনাকে মধ্যযুগীয় আখ্যা দিয়ে মন্ত্রী বলেন, এটি একাত্তরের বর্বরতাকেও হার মানায়। একাত্তরের ২৫ মার্চ কালরাতেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এ রকম হামলা হয়েছে। কিন্তু ভিসির বাসভবন কখনো আক্রান্ত হয়নি। এমনকি স্বাধীনতার ৪৭ বছরেও এ রকম ঘটনা ঘটেনি। ঘটনার দিন ভোর ৪টা পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী জেগে ছিলেন উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কোটার সঙ্গে ভিসির কী সম্পর্ক? আন্দোলনের সঙ্গে এটি (ভিসির বাসভবনে হামলা) কেন জড়িত করা হলো, এর জবাব দিতে হবে।’

এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের বাসভবনে সংঘটিত হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা খতিয়ে দেখার জন্য পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সোমবার রাতে নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে আয়োজিত সিন্ডিকেট সভায় এ কমিটি গঠন করা হয়।

শিক্ষার্থীদের ক্লাস বর্জন : ক্যাম্পাসে পুলিশি হামলার প্রতিবাদে ও কোটা সংস্কারের দাবিতে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। তারা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে খণ্ড খণ্ড বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে এসে জড় হয় এবং কোটা সংস্কার ও পুলিশি হামলার বিচার দাবিতে বিক্ষোভ করতে থাকে।

ঢাবি শিক্ষক সমিতির মানববন্ধন : ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের বাসভবনে বর্বরোচিত হামলা, ভাঙচুর ও সপরিবারে উপাচার্যকে হত্যার প্রচেষ্টা চালানোর বিরুদ্ধে ঢাবি শিক্ষক সমিতি মানববন্ধন করেছে। মানববন্ধনে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল উপাচার্য ভবনে বর্বরোচিত হামলা, ভাঙচুর ও সপরিবারে উপাচার্যকে হত্যার যে প্রচেষ্টা চালানো হয় তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে আগামী সাত দিনের মধ্যে অপরাধীদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় এনে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। এর আগে সকাল ১০টায় উপাচার্য ভবনে হামলা, ভাঙচুরের প্রতিবাদে উপাচার্য ভবনের সামনে যৌথভাবে ঢাবি অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন, ঢাবি কর্মচারী সমিতি, ঢাবি কারিগরি কর্মচারী সমিতি ও ঢাবি চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারী ইউনিয়ন মানববন্ধন করে।

ছাত্রলীগের মিছিল-সমাবেশ : ঢাবি উপাচার্যের বাসভবনে হামলাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়েছে ছাত্রলীগ। গতকাল অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে আয়োজিত এক সমাবেশে এ দাবি করেন সংগঠনের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ। কোটা সংস্কার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসের পরও যারা আন্দোলন-সংগ্রাম করে বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করতে চায় তাদের উদ্দেশ্য ভিন্ন বলেও মন্তব্য করেন তিনি। সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন, সহসভাপতি কাজী এনায়েত, আরিফুর রহমান লিমন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সভাপতি আবিদ আল হাসান, সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্স প্রমুখ।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় : সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নিয়ে জাতীয় সংসদে দেওয়া বক্তব্য তিন দিনের মধ্যে প্রত্যাহার করে জাতির কাছে ক্ষমা না চাইলে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জাবি শিক্ষার্থীরা। গতকাল বেলা ১১টায় জাবির কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে অনুষ্ঠিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশে এ ঘোষণা দেন সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, জাবি শাখার আহ্বায়ক খান মুনতাসির আরমান। সমাবেশ শেষে কোটা সংস্কার এবং আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদে শতাধিক শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক, অফিস ও অনুষদ ভবন প্রদক্ষিণ করে আবার কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে এসে শেষ হয়। প্রসঙ্গত, কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের সম্পর্কে সোমবার কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী সংসদ অধিবেশনে বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ চলছে, চলবে। রাজাকারের বাচ্চাদের আমরা দেখে নেব। মতলববাজ, জামায়াত-শিবির, তাদের এজেন্টদের বিরুদ্ধে সামান্য শৈথিল্য দেখানো হবে না।’ মতিয়া বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানরা সুযোগ পাবে না, রাজাকারের বাচ্চারা সুযোগ পাবে? তাদের জন্য মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংকুচিত হবে? রাজধানীকেন্দ্রিক একটি এলিট শ্রেণি তৈরির চক্রান্ত চলছে।’ এদিকে পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল সব ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেছেন জাবি শিক্ষার্থীরা। তিন দিনের এই ক্লাস পরীক্ষা বর্জনের কর্মসূচি শেষ হবে কাল। কোটা  সংস্কারের দাবিতে সব মিলিয়ে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে জাবির একাডেমিক কার্যক্রম।

ওয়েবসাইট হ্যাক করে কোটা সংস্কারের দাবি : সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের মধ্যে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি ওয়েবসাইট হ্যাকড হয়েছে। গত রাতে এই সাইবার হামলা বিদেশ থেকে পরিকল্পিতভাবে হয় বলে দাবি করেছেন তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। রাত ১২টার দিকে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন ওয়েবসাইটে চেষ্টা করে ঢোকা যাচ্ছিল না।

এদিকে চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে রাষ্ট্রপতির কার্যালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ওয়েবসাইটসহ পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ওয়েবসাইট হ্যাক করেছে হ্যাকাররা। গতকাল রাতে সরকারি এসব সাইটে ব্রাউজ করলে হ্যাকড অবস্থায় পাওয়া যায়। হ্যাকাররা ওই সাইটগুলো হ্যাক করার পর সেখানে ওপরে শিরোনাম হিসেবে ‘হ্যাকড বাই বাংলাদেশ’ এবং তার নিচে বাংলাদেশের পতাকা হাতে শাহবাগে আলোচিত প্রতিবাদীর ছবি দেওয়া হয়েছে।

রহস্যময় ড্রোন : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আকাশে দেখা গেছে রহস্যময় একটি ড্রোন। গতকাল সন্ধ্যা ৬টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির ওপরে দেখা যায় ড্রোনটি। তখন লাইব্রেরির সামনে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী জড় হয়ে কর্মসূচি ঘোষণা করছিলেন। এর সামান্য কিছুক্ষণ পর ড্রোনটি যায় রাজু ভাস্কর্যের ওপরে। এরপর আবার যায় লাইব্রেরির ওপর। সব মিলিয়ে মিনিট দশেক ড্রোনটি এই চত্বরের আকাশে অবস্থান করে অদৃশ্য হয়ে যায়। এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ‘শেম, শেম (লজ্জা, লজ্জা)’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন।

মার্কিন দূতাবাসের সতকর্তা : কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সম্ভাব্য সহিংস ঘটনা এড়াতে ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের চলাচলের ক্ষেত্রে সতর্কতা জারি করেছে ঢাকার মার্কিন দূতাবাস। সতর্কবার্তায় বলা হয়, ঢাকায় অব্যাহত ছাত্র বিক্ষোভের কথা জানাচ্ছে স্থানীয় সূত্রগুলো। বাংলাদেশের অন্য শহরগুলোয়ও এ ধরনের বিক্ষোভ হতে পারে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় : সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে আবারও আন্দোলনে নেমেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা। ঢাকা থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির ঘোষণা অনুযায়ী গতকাল সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিটে আন্দোলন শুরু করেন তারা। বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ রাবি শাখার আহ্বায়ক মাসুদ মুন্নাফ বলেন, ‘আমাদের মাননীয় মন্ত্রীরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বক্তব্য দিচ্ছেন। তাই কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’ এদিকে সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সরেজমিন দেখা গেছে, বিকাল সাড়ে ৫টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে জড়ো হতে শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। সেখান থেকে ৬টা ১৫ মিনিটে তিন হাজারের বেশি শিক্ষার্থী একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিল নিয়ে তারা পুরো ক্যাম্পাসের প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করেন।

খুলনা : কোটা পদ্ধতি সংস্কারের পক্ষে-বিপক্ষে খুলনায় বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা। গতকাল সকালে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো ক্লাস বর্জন করেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষার্থীরা। একই দাবিতে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ক্যাম্পাসে মিছিল বের হয়। পরে দুপুর থেকে খুলনা শিববাড়ী মোড়ে অবস্থান নেয় বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। শিক্ষার্থীরা এ সময় কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে মিছিল করেন এবং স্লোগান দেন।

কোটা বহাল রাখার পক্ষে মুক্তিযোদ্ধাদের কর্মসূচি : দেশের বিভিন্ন স্থানে কোটা বহালের দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের পরিবার। পরে তারা স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেয়। নাটোর : নাটোরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানরা মানববন্ধন এবং সমাবেশ করেছে।

বরিশাল : মানববন্ধন করেছে বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড।

খুলনা : খুলনা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন ও সমাবেশ করে মহানগর ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ।

নেত্রকোনা : জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা।

ভোলা : ভোলা প্রেস ক্লাবের সামনে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের উদ্যোগে মানববন্ধন, বিক্ষোভ এবং স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে।

ঝিনাইদহ : জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের উদ্যোগে পুরনো ডিসি কোর্ট চত্বর থেকে মিছিলটি বের করা হয়। পরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করে।

ঝালকাঠি : জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেছে মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবার। এ ছাড়া বগুড়া ও ভোলায় মুক্তিযোদ্ধারা স্মারকলিপি দেন।

সর্বশেষ খবর