সোমবার, ১৬ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

ট্রেন ছিটকে পড়ল লাইন থেকে

নিহত ৪ আহত ২৬, তদন্ত কমিটি

সাখাওয়াত কাওসার ও আফজাল, টঙ্গী থেকে

ট্রেন ছিটকে পড়ল লাইন থেকে

টঙ্গীতে গতকাল ট্রেনের কয়েকটি বগি ছিটকে যায় লাইন থেকে —রোহেত রাজীব

জামালপুর থেকে ঢাকাগামী জামালপুর কমিউটার ট্রেন টঙ্গীতে ভয়াবহ দুর্ঘটনায় পড়ে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন অন্তত ২৬ জন যাত্রী। গতকাল দুপুর সোয়া ১২টার দিকে টঙ্গীর নতুনবাজার এলাকায় লাইন থেকে ছিটকে পড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার পর নারায়ণগঞ্জ ছাড়া ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ ছিল। পাঁচ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে ঢাকা থেকে ফের সারা  দেশের ট্রেন চলাচল শুরু হয়। দুর্ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থলে ছুটে যান রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক, স্থানীয় সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল এবং রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ঘটনা তদন্তে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামানকে প্রধান করে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করেছে রেল কর্তৃপক্ষ।

নিহতরা হলেন— আফিল উদ্দিন (৩৫), আমির হোসেন (৪২), সাহাদত হোসেন (৩৮) ও বিপ্লব (৩৬)। গুরুতর অবস্থায় সাতজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়ার পর সাহাদত চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ঢামেকে ভর্তি বাকি ছয়জন হলেন— বাদল (২৮), সবুজ (৪০), ইসরাফিল (১২), আলমগীর (৩২), বাদল (৫০) ও মো. শরিফ (২৮)। তাদের শরীরে বিভিন্ন স্থানে জখম রয়েছে। টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. ইরাম শাহরিয়ার জানান, ওই দুর্ঘটনায় আহত মোট ২৬ জন বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত তার হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেছেন। তাদের মধ্যে সাতজনকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে। ঘটনাস্থল ঘুরে দেখে রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক বলেন, প্রাথমিক তথ্যে তাদের মনে হয়েছে, সিগন্যালম্যান সংকেত দিতে  দেরি করায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। তবে একটি তদন্ত কমিটি হয়েছে, তারা বিষয়টি তদন্ত করে দেখবে। আহতদের চিকিৎসার খরচ সরকার বহন করবে। নিহতদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। পরে তিনি আহতদের দেখতে টঙ্গী এবং সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। জানা গেছে, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামানকে প্রধান করে গঠিত ওই কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। টঙ্গী রেলস্টেশন থেকে ঢাকার দিকে ফ্লাইওভার পার হয়ে ৫০০ গজ পেরিয়েই ঘটনাস্থল। ঘটনার পরপরই সরেজমিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, রেললাইনের ওপর ছোপ ছোপ রক্তের দাগ। অজ্ঞাত এক যুবকের দুই হাত কাটা। পড়ে আছে রেললাইনের ওপর। বোঝাই যাচ্ছে ততক্ষণে মারা গেছে হতভাগা এই যুবক। পাশেই পড়ে আছে আরও দুজন অজ্ঞাত ব্যক্তির লাশ। ফায়ার সার্ভিস ও রেলওয়ে পুলিশের সদস্যরা বীভৎস এই লাশগুলো প্যাকেটে ভরছেন। দুর্ঘটনা কবলিত আহত লোকদের আর্তচিৎকারে ভারি হয়ে উঠছিল আশপাশের পরিবেশ। তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন পুলিশ এবং স্থানীয় লোকজন। ১২ বগির ৭টি বগি ১ নম্বর পয়েন্ট লাইন থেকে বেরিয়ে গেলেও অবশিষ্ট ৫টি বগি ভুল লাইন পরিবর্তনের কারণে লাইন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ট্রেনের যাত্রীরা বলেছেন, জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ থেকে ভোররাত ৪টার দিকে ছেড়ে আসা এই ট্রেনটির ভিতর ও ছাদে যাত্রীদের তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। অধিকাংশ যাত্রী স্বল্প আয়ের শ্রমজীবী খেটেখাওয়া মানুষ হওয়ার কারণে তারা সাধারণত ছাদে অল্প ও বিনা ভাড়ায় যাতায়াত করে থাকেন। হতাহতদের প্রায় সবাই রাজধানীতে রিকশাচালক, মাটিকাটা শ্রমিক ও ইটভাঙা শ্রমিক ছিলেন। দুর্ঘটনার পর স্টেশন মাস্টার হালিমুজ্জামানকে পাওয়া যায়নি স্টেশন এলাকায়। পরে বেলা আড়াইটার দিকে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, দুর্ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক, তদন্ত করে এর সঠিক কারণ জানা যাবে। বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকা থেকে  ছেড়ে আসা ঈসা খাঁ এক্সপ্রেস ওই দুর্ঘটনার কারণে আটকে ছিল। ঢাকা থেকে রিলিফ ট্রেন এসে লাইন ক্লিয়ার করে দেওয়ার পর বিকাল সাড়ে ৫টায় ট্রেনটি টঙ্গী অতিক্রম করে। জয়দেবপুর রেলওয়ে ফাঁড়ির এসআই রাকিবুল হক জানান, টঙ্গী জংশন ছাড়ার পরপরই নতুনবাজার এলাকায় দুর্ঘটনায় পড়ে জামালপুর কমিউটার। ট্রেনটির পেছনের চারটি বগি লাইনচ্যুত হলেও গতির কারণে ওই অবস্থায় ট্রেনটি কয়েকশ গজ এগিয়ে যায়। এক পর্যায়ে দুটি বগি কাত হয়ে যায়। কমলাপুর রেলওয়ে থানার ওসি মো. ইয়াসিন জানান, ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ার পর ছাদে থাকা যাত্রীরা লাফিয়ে পড়লে ঘটনাস্থলেই তিনজনের মৃত্যু হয় এবং আরও বেশ কয়েকজন আহত হন।

সর্বশেষ খবর